পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO V প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ হস্তান্তর করতে পারে; আর যে জেলায় সেরােপ প্রথা নেই, সে পথলে তার দানবিক্ৰয় জমিদার ইচ্ছে করলে গ্রাহ্য করতে পারেন, ইচ্ছে করলে অগ্রাহ্য করতে পারেন। কিন্তু আসলে ঘটনা কি জান ?-ও-জোত সমগ্র বাংলায় নিত্যনিয়মিত হস্তান্তরিত হচ্ছে "শ্লবং জমিদারও তা হাসিমখে মেনে নিচ্ছেন, কেননা তাতে তাঁর লাভ আছে। তবে জমিদার যে প্রথার দোহাই দেন, সে শােধ দাখিলখারিজের একটা মোটারকম সেলামি আদায় করবার জন্য। কোথাও-বা জোতের খরিদা মল্যের চৌথ আদায় করা হয়, কোথাও-বা জমার পাঁচ থেকে দশগণ পণ। এ বিষয়ে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই, যাঁর যেরকম প্রবত্তি ও শান্তি তিনি এই সংযোগে প্রজাকে সেই অনসারে দইয়ে নেন। যে সম্প্রদায়ের সাতাত্তির জনের মধ্যে সত্তর জন বারোমাস একদিনও পেট ভরে খেতে পায় না, তাদের এরপে দোহন করা যে অত্যাচার, এ কথা যার শরীরে মানষের রক্ত আছে সে কখনোই অস্বীকার করতে পারবে না। তা ছাড়া, এই দাখিলখারিজসমূত্রে প্রজাকে যে কি পর্যন্ত হয়রানি-পরিশান করা যায় ও করা হয়, তা জমিদারি সেরেস্তার সঙ্গে যাঁর কোনোরাপ সাক্ষাৎসম্প্রবন্ধ আছে তিনিই জানেন। দাখিলখারিজের প্রাথীদের জমিদারের কাছারিতে যাতায়াত করতে করতে পায়ের নড়ি ছিড়ে যায়। জোেতখরিদদারের পক্ষে জমিদারের সেরেস্তায় নামপত্তন করার চাইতে বিয়ে করা কম কথায় হয়, যদিচ বিয়ের জন্য লাখ কথা চাই। এ অবস্থায় বেচারার কাছ থেকে নায়েব গোমস্ত জমানবিশ সমােরনব্বিশ পাইক বীরকন্দাজ যে পারে। সেই মোচড় দিয়ে দ-পয়সা আদায় করে নেয়। সতরাং তার এ অবস্থায় পরিবতন ঘটাবার প্রস্তাব করলে, আশা করি, বলশেভিজমের পরিচয় দেওয়া হয়। କnt I আমার এ কথা শনে হঠাৎ-প্রজাহিতৈষীর দল কি জবাব দেবেন তা জানি। তাঁরা বলবেন যে, প্রজার ভালোর জন্যই তাকে জোত হস্তান্তর করবার অধিকারে বশ্চিত করা কতব্য। নচেৎ বাংলার জমি দেনার দায়ে মহাজনের হাতে চলে যাবে, ও বাংলার কৃষক ভুমিশন্য হয়ে পড়বে। এ আপত্তির বিচার বারান্তরে করব। এখন আমার বক্তব্য হচ্ছে এই যে, জোত যখন দলবেলা কেনা-বেচা হচ্ছে, তখন জমিদারের জরিমানার দায় থেকে প্রজাকে অব্যাহতি দেওয়া কতব্য। কৃষকের জোত অ-কৃষকে কিনতে পারবে কি না। এ সমস্যার সঙ্গে জমিদারের লাভালাভের কোনোই সম্পক নেই, সম্পপক আছে রাষ্ট্রের সঙ্গে। তার পর, নিজের জোতের গাছ কাটবার অধিকার। যার নিজের বোনা শস্য কাটবার অধিকার আছে, তার নিজের পোঁতা গাছ কাটবার অধিকার যে কেন থাকবে। না, তা আমার বন্ধির অগম্য। কিন্তু এ কথা বলতে গেলেই আইনের তকী উঠবে। উকিলবাবরা আমাদের ট্রান্সফার অব প্ৰপাটি অ্যাক্ট পড়ে পথাবর ও অস্থাবর সম্পপত্তির প্ৰভেদটা শিখে নিতে বলবেন। কিন্তু তার উত্তরে আমি বলব যে, বাংলার রায়তকে যদি মানষ করতে চাও তো প্রপার্টি সম্পবন্ধে অনেক পথিগত বিদ্যে ভুলতে হবে। কায়কেশে বেচে থাকবার জন্যেও প্রজার আমােকাঁঠালের তক্তার প্রয়োজন আছেশোবার তন্তাপোষের জন্যে, দায়োরের কপাটের জন্যে, চালের খাটির জন্যে; আর যদি বল যে তাদের বেচে থাকবার কোনো অধিকার নেই, তা হলেও তাদের কাঠের দরকার