পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ ܓ9 সবাপেক্ষা প্রশস্ত। একটানা লম্বা কিছ লিখতে হলে, অর্থাৎ যাতে অনেক কথা বলতে হবে এমন কোনো রচনা করতে গেলে, বাঙালি কবিদের পয়ারের আশ্রয় অবলম্বন ছাড়া উপায়ান্তর নেই। কৃত্তিবাস থেকে আরম্ভ করে শ্রীযক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত বাংলার কাব্যনাটক রচয়িতামাত্রই পাবোেন্ত কারণে অসংখ্য পয়ার লিখতে বাধ্য হয়েছেন, এবং চিরদিনের জন্য বাঙালির প্রতিভা ঐ পয়ারের চরণের উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে রয়েছে। পিয়ারে চতুৰ্দশ অক্ষরের মতো সনেটে চতুৰ্দশ পদের একত্র সংঘটন, আমার বিশ্ববাস, অনেকটা একই কারণে একই রকমের যোগাযোগে সিদ্ধ হয়েছে। বোধ হয় সকলেই অবগত আছেন যে, জীবজগৎ এবং কাব্যজগতের ক্ৰমোন্নতির নিয়ম পরস্পরবিরদ্ধ। জীব উন্নতির সোপানে ওঠবার সঙ্গে সঙ্গেই তার কুমিক পদলোপ হয়, কিন্তু কবিতাব উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পদবিদ্ধি হয়। পদ্য দটি চরণ নিয়েই জন্মগ্রহণ করে ; দিবপদীই হচেছ সকল দেশে সকল ভাষার আদি ছন্দ। কলিযাগের ধমের মতো, অর্থাৎ বকের মতো, কবিতা একপায়ে प्राँछाष्ठ १ाgत ना। এই দিবপদী হতেই কাব্যজগতের উন্নতির দিবতীয় সস্তরে ত্রিপদীর আবিভােব হয়, এবং ত্রিপদী কালক্ৰমে চতুহুপদীতে পরিণত হয়। কবিতার পদাবন্ধিব এই শেষ সীমা। কেন ?- সে কথাটা একটি বঝিয়ে বলা আবশ্যক। আমরা যখন মিলপ্রধান সনেটের গঠনরহস্য উদঘাটন করতে বসেছি, তখন মিত্ৰাক্ষরযন্ত দ্বিপদী ত্ৰিপদী ও চতুৰ্কপদীর আকৃতির আলোচনা করাটাই আমাদের পক্ষে সংগত হবে। অমিত্ৰাক্ষর কবিতা কামচারী, চরণের সংখ্যাবিশেষের উপর তার কোনো নিভাির নেই, তাই কোনোরাপ অঙ্কের ভিতর তাকে আবদ্ধ রাখবার জো নেই। দ্বিপদীর চরণ দটি পাশাপাশি মিলে যায়। ত্রিপদীর প্রথম দটি চরণ দ্বিপদীর মতো পাশাপাশি মেলে, তৃতীয় চরণটি অপর-একটি চরণের অভাবে আলগা ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, এবং অপর-একটি ত্রিপদীর সান্নিধ্যলাভ করলে তার তৃতীয় চরণের সঙ্গে মিত্রতাবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বাংলা সংস্কৃত ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার ত্রিপদীর আকৃতি ও প্রকৃতি এইরপ, কিন্তু ইতালীয় ত্রিপদীর (terza rima) গঠন সম্ভবতন্ত্র। ইতালীয় ত্রিপদীর প্রথম চরণের সহিত তৃতীয় চরণের মিল হয়, এবং দ্বিতীয় চরণ মিলের জন্য পরবতী ত্রিপদীর প্রথম চরণের অপেক্ষা রাখে। ইতালীয় ত্ৰিপদী তিন চরণেই সম্পর্ণে। ভােব এবং অর্থ বিষয়ে একটির সহিত অপরটি পথক এবং বিচ্ছিন্ন। পাব পরযোগ কেবলমাত্র মিলস ত্রে রক্ষিত হয়। একটি কবিতার ভিতর, তা যতই বড়ো হোক-না কেন, সে যোগের কোথাও বিচ্ছেদ নেই। প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত একটি কবিতার অন্তভােত ত্রিপদীগলি এই মিলনস্যুত্রে গ্রথিত, এবং ইন্সব্রুর পাকের ন্যায় পরস্পরযন্ত। নিম্পেন্ন রবার্ট ব্রাউনিং রচিত THE STATUE AND THE BUST নামক কবিতা হতে ইতালীয় ত্রিপদীর নমনাস্বরপ ছয়টি চরণ উদধিত করে দিচ্ছি। পাঠক দেখতে পাবেন যে, প্রথম ত্রিপদীর মধ্যম চরণটি মিলের জন্য দিবতীয় ত্রিপদীর প্রথম চরণের অপেক্ষা রাখে।--