পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মলাটি-সমালোচনা 88C দই-একটা কথা বলতে চাই। ডাক্তারখানার আলো যেমন লাল নীল সবজি বেগানে প্রভাতি নানারপ কাঁচের আবরণের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায়, তেমনই পাশতকের দোকানো একালের পস্তক-পলিস্তিকাগলি নানারপ বণ চ্ছটায় নিজেদের প্রকাশ করে। সতরাং নব্যসাহিত্যের বর্ণপরিচয় যে আমার হয় নি, এ কথা বলতে পারি নে। কবিতা আজকাল গোধলিতে গা-ঢাকা দিয়ে ‘লজানম নববধাসম” আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয় না; কিন্তু গালে আলতা মেখে রাজপথের সমখে বাতায়নে এসে দেখা দেয়। বর্ণেরও একটা আভিজাত্য আছে। তার সমসংযত ভাবের উপরেই তার গাম্পভীয ও সৌন্দৰ্য নিভাির করে। বাড়াবাড়ি জিনিসটা সব ক্ষেত্রেই ইত্যরতার পরিচায়ক। আমার মতে পাজার বাজারের নানারপ রঙচঙে পোশাক পরে প্রাপতবয়স্ক সাহিত্যের সমাজে বার হওয়া উচিত নয়। তবে পাজার উপহার-স্বরপে যদি তার চলন হয় তা হলে অবশ্য কিছ বলা চলে না। সাহিত্য যখন কুন্তলীন তাম্বলীন এবং তরল আলতার সঙ্গে একশ্রেণীভুক্ত হয় তখন পরিষের পক্ষে পরষ বাক্য ছাড়া তার সম্পবন্ধে অন্য-কোনো ভাষা ব্যবহার করা চলে না। তবে এই কথা জিজ্ঞাসা করি যে, এতে যে আত্মমর্যাদার লাঘব হয়। এ সহজ কথাটা কি গ্ৰন্থকারেরা বাঝতে পারেন না; কবি কি চান যে, তাঁর হৃদয়রান্ত তরল আলতার শামিল হয়; চিন্তাশীল লেখক কি এই কথা মনে করে সখী হন যে, তাঁর মস্তিক্ষক লোকে সবাসিত নারিকেলতৈল হিসাবে দেখবে; এবং বাণী কি রসনানিঃসতে পানের পিকের সঙ্গে জড়িত হয়ে লজা বোধ করেন না ? আশা করি যে, বইয়ের মলাটের এই অতিরঞ্জিত রােপ শীঘ্রই সকলের পক্ষেই অরচিকর হয়ে উঠবে। অ্যাণ্টিক কাগজে ছাপানো এবং চকচকে ঝকঝকে তকতকে করে বাঁধানো পশতকে আমার কোনো আপত্তি নেই। দস্তারিকে আসল গ্রন্থকার বলে ভুল না করলেই খাঁশি হই। আমরা যেন ভুলে না। যাই যে, লেখকের কৃতিত্ব মলাটে শােধ, ঢাকা পড়ে। জীৰ্ণ কাগজে, শীর্ণ অক্ষরে, ক্ষীণ কালিতে ছাপানো একখানি পদকলাপতর যে শত শত তকতকে ঝকঝকে চকচকে গ্রন্থের চাইতে শতগণ আদরের সামগ্রী। এখন সমালোচনা শার করে দেবার পাবেই কথাটার একটি আলোচনা করা দরকার। কারণ, ঐ শব্দটি আমরা ঠিক অর্থে ব্যবহার করি কি না সে বিষয়ে আমার একটা সন্দেহ আছে। প্রথমেই, ‘সম’-উপসগটির যে বিশেষ-কোনো সার্থকতা আছে এরােপ আমার বিশ্ববাস নয়। শব্দ অতিকায় হলে যে তার গৌরববন্ধি হয়। এ কথা আমি মানি; কিন্তু, দেহভারের সঙ্গে সঙ্গে যে বাক্যের অর্থাভার বেড়ে যায় তার কোনো বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ যাগের লেখকেরা মাতৃভাষায় লিখেই সন্তুটি থাকেন না, কিন্তু সেইসঙ্গে মায়ের দেহপলিট করাও তাঁদের কতব্য বলে মনে করেন। কিন্তু সে পলিটসাধনের জন্য বহসংখ্যক অৰ্থািপণে ছোটাে-ছোটাে কথা চাই যা সহজেই বঙ্গ ভাষার অঙ্গীভূত হতে পারে। স্বল্পসংখ্যক এবং কতকাংশে নিরর্থক বড়ো বড়ো কথার সাহায্যে সে উদ্দেশ্যসিদ্ধি হবে না। সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে আমার পরিচয় অতি সামান্য; কিন্তু সেই সবলপপরিচয়েই আমার এইটকু জ্ঞান জন্মেছে যে, সে ভাষার বাক্যাবলী আয়ত্ত করা নিতান্ত কঠিন। সংস্কৃতের উপর হস্তক্ষেপ করবা মাত্রই তা আমাদের হস্তগত হয় না। বরং