পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

868 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ সংসারের সকল শংখলা হতে মত্ত করা; আর বৎসরাজ উদয়নের জীবনের ব্রত ছিল। ঘোষবতী বীণার সাহায্যে অরণ্যের গজকামিনী এবং অন্তঃপরের গজগামিনীদের প্রথমে মগধ করে পরে নিজের ভোগের জন্য তাদের অবরাদ্ধ করা। অথচ সংস্কৃত কাব্যে বন্ধচরিতের স্থান নেই, কিন্তু উদয়নকাথায় তা পরিপািণ। সংস্কৃত ভাষায় যে বন্ধের জীবনচরিত লেখা হয় নি, তা নয়; তবে ললিতবিস্তরকে আর-কেউ কাব্য বলে সত্বীকার করবেন না, এবং অশবঘোষের নাম পৰ্যন্তও লািশত হয়ে গেছে। অপর দিকে উদয়ন-বাসবদত্তার কথা অবলম্বন করে যাঁরা কাব্যরচনা করেছেন, যথা ভাস গণাঢ্য সবন্ধ ও শ্ৰীহৰ্ষ ইত্যাদি, তাঁদের বাদ দিলে সংস্কৃত সাহিত্যের অধোক বাদ পড়ে যায়। কালিদাস বলেছেন যে, কৌশাম্পিবর গ্রামবন্ধেরা উদয়নকথা শািনতে ও বলতে ভালোবাসতেন; কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কেবল কৌশাম্পিবর গ্রামবদ্ধ কেন, সমগ্ৰ ভারতবর্ষের আবালবদ্ধবনিতা সকলেই ঐ কথা-রসের রসিক। সংস্কৃত সাহিত্য এ সত্যের পরিচয় দেয় না যে বন্ধের উপদেশের বলে জাতীয় জীবনে যৌবন। এনে দিয়েছিল, এবং উদয়নের দলটান্তের ফলে অনেকের যৌবনে অকালবাধক্য এনে দিয়েছিল। বৌদ্ধধমের অনশীলনের রাজা অন্নিবর্ণ লাভ করেছিলেন রাজযক্ষমা। সংস্কৃত কবিরা এ সত্যটি উপেক্ষা করেছিলেন যে, ভোগের ন্যায় ত্যাগও যৌবনেরই ধম। বাধক্য কিছ অজািন করতে পারে না বলে কিছ বিজনও করতে পারে না। বাধক্য কিছ কাড়তে পারে না। বলে কিছ ছাড়তেও পারে না- দটি কালো চোখের জন্যও নয়, বিশ কোটি কালো ८८ ॐ3 58 ।। পাছে লোকে ভুল বোঝেন বলে এখানে আমি একটি কথা বলে রাখতে চাই। কেউ মনে করবেন না যে, আমি কাউকে সংস্কৃত কাব্য বয়কট করতে বলছি কিংবা নীতি এবং রচির দোহাই দিয়ে সে কাব্যের সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করবার পরামর্শ দিচ্ছি। আমার মতে যা সত্য তা গোপন করা সনেীতি নয় এবং তা প্রকাশ করাও দােনীতি নয়। সংস্কৃত কাব্যে যে যৌবনধমের বর্ণনা আছে তা যে সামান্য মানবধর্ম, এ হচ্ছে অতি স্পষ্ট সত্য; এবং মানবজীবনের উপর তার প্রভাব যে অতি প্রবল, তাও অস্বীকার করবার জো নেই। তবে এই একদেশদর্শিতা ও অত্যুত্তি— ভাষায় যাকে বলে একরোখ্যামি ও বাড়াবাড়ি, তাই—হচ্ছে সংস্কৃত কাব্যের প্রধান দোষ। যৌবনের পথািল-শরীরকে অত আশকারা দিলে তা উত্তরোত্তর স্থল হতে স্থলতর হয়ে ওঠে, এবং সেইসঙ্গে তার সক্ষম শরীরটি সক্ষম হতে এত সক্ষমতম হয়ে ওঠে যে, তা খাঁজে পাওয়াই ভার হয়। সংস্কৃত সাহিত্যের অবনতির সময় কাব্যে রক্তমাংসের পরিমাণ এত বেড়ে গিয়েছিল যে, তার ভিতর আত্মার পরিচয় দিতে হলে সেই রক্তমাংসের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করা ছাড়া আর আমাদের উপায় নেই। দেহকে অতটা প্রাধান্য দিলে মন-পদার্থটি বিগড়ে যায়; তার ফলে দেহ ও মন পথিক হয়ে যায় এবং উভয়ের মধ্যে আত্মীয়তার পরিবতে জ্ঞাতিশত্রতা জন্মায়। সম্পভবত বৌদ্ধধমের নিরামিযের প্রতিবাদস্বরপ হিন্দী কবিরা তাঁদের কাব্যে এতটা আমিষের আমদানি