পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাপের কথা এ দেশে সচরাচর লোকে যা লেখে ও ছাপায়। তাই যদি তাদের মনের কথা হয় তা হলে স্বীকার করতেই হবে যে, আমরা মানবসভ্যতার চরমপদ লাভ করেছি। কিন্তু দঃখের বিষয় এই যে, এই প্রকান্ড সত্যটা বিদেশীরা মোটেই দেখতে পায় না। এটা সত্যিই দঃখের বিষয়। কেননা, সভ্যতারও একটা চেহারা আছে; এবং যে সমাজের সচেহারা নেই তাকে সসভ্য বলে মানা কঠিন। বিদেশী বলতে দ। শ্রেণীর লোক বােঝায় : এক পরদেশী, আর-এক বিলোেত। আমরা যে বড়ো-একটা কারো চোখে পড়ি নে, সে বিষয়ে এই দই দলের বিদেশীই একমত। যাঁরা কালাপানি পার হয়ে আসেন তাঁরা বলেন যে, আমাদের দেশ দেখে তাঁদের চোখ জড়োয়, কিন্তু আমাদের বেশ দেখে সে চোখ ক্ষম হয়। এর কারণ, আমাদের দেশের মোড়কে রঙ আছে, আমাদের দেহের মোড়কে নেই। প্রকৃতি বাংলাদেশকে যে কাপড় পরিয়েছেন তার রঙ সবজি; আর বাঙালি নিজে যে কাপড় পরেছে তার রঙ আর যেখানেই পাওয়া যাক, ইন্দুধনার মধ্যে খাঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা আপাদমস্তক রঙ-ছাট বলেই অপর-কারো নয়নাভিরাম নই। সতরাং যারা আমাদের দেশ দেখতে আসে তারা আমাদের দেখে খশি হয় না। যাঁর বোম্বাই শহরের সঙ্গে চাক্ষষ পরিচয় আছে তিনিই জানেন। কলকাতার সঙ্গে সে শহরের প্রভেদটা কোথায় এবং কত জাজবল্যমান। সে দেশে জনসাধারণ পথেঘাটে সকালসন্ধে রঙের ঢেউ খেলিয়ে যায় এবং সে রঙের বৈচিত্র্যের ও সৌন্দয্যের আর অন্ত নেই। কিন্তু আমাদের গায়ে জড়িয়ে আছে চির-গোধলি; তাই শািন্ধ বিলেত নয়, পরদেশী ভারতবাসীর চোখেও আমরা এতটা দন্টিকট। বাকি ভারতবর্ষ সাজসজায় সর্বদেশী, আমরা আধ-স্বদেশী হাফ-বিলেতি। আর বিলেতি মতে, হয়। কালো নয়। সাদা-নইলে সভ্যতার লক্ষজা নিবারণ হয় না; রঙ চাই শািন্ধ সঙ সাজবার জন্যে। আমাদের নবসভ্যতাও কাব্যত এই মতে সায় দিয়েছে। R আপনারা বলতে পারেন যে, এ কথা যদি সত্যও হয় তাতে আমাদের কি যায়-আসে। বিদেশীর মনোরঞ্জন করবার জন্য আমরা তো আর জাতকে-জাত আমাদের পরানপরিচ্ছদ আমাদের হাল-চাল সব বদলে ফেলতে পারি নে। জীবনয়াত্রা-ব্যাপারটা তো আর অভিনয় নয় যে, দশকের মািখ চেয়ে সে-জীবন গড়তে হবে এবং তার উপর আবার রঙ ফলাতে হবে। এ কথা খাব ঠিক। জীবন আমরা কিসের জন্য ধারণ করি তা না জানলেও এটা জানি যে, পরের জন্য আমরা তা ধারণা করি নৌঅপর দেশের অপর লোকের জন্য তো নয়ই। তবে বিদেশীর কথা উত্থাপন করবার সার্থকতা এই যে, জাতীয় জীবনের ত্রটি বিদেশীর চোখে৷ যেমন এক-নজরে ধরা