পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԵՀ প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ আশচযা কি। O আমি এইমাত্র বলেছি যে, এ যাগে আমরা হয় সব জানি, নয় সব শানি। কিন্তু সত্যকথা এই যে, আমরা একালে যা-কিছ জানি সে-সব শনেই জানি— অর্থাৎ দেখে কিংবা ঠেকে নয়; তার কারণ, আমাদের কোনো-কিছ দেখবার আকাঙ্ক্ষা নেইআর সব-তাতেই ঠেকাবার আশশুকা আছে। এই বসন্তের কথাটাও আমাদের শোনা-কথা, ও একটা গজবমাত্র। বসন্তের সাক্ষাৎ আমরা কাব্যের পাকাখাতার ভিতর পাই, গাছের কাঁচিপাতার ভিতর নয়। আর বইয়ে যে বসন্তের বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায় তা কস্মিনকালেও এ ভূভারতে ছিল কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ করবার বৈধ কারণ আছে। গীতগোবিন্দে জয়দেব বসন্তের যে রপবর্ণনা করেছেন, সে রােপ বাংলার কেউ কখনো দেখে নি। প্রথমত, মলয়সমীরণ যদি সোজাপথে সিধে বয়, তা হলে বাংলাদেশের পায়ের নীচে দিয়ে চলে যাবে, তার গায়ে লাগবে না। আর যদি তকের খাতিরে ধরেই নেওয়া যায় যে, সে বাতাস উদভ্ৰান্ত হয়ে, অর্থাৎ পথ ভুলে, বঙ্গভূমির গায়েই এসে ঢলে পড়ে, তা হলেও লবঙ্গলতাকে তা কখনোই পরিশীলিত করতে পারে না। তার কারণ, লবঙ্গ গাছে ফলে কি লতায় ঝোলে, তা আমাদের কারো জানা নেই। আর হোক-না সে লতা, তার এ দেশে দোদ ল্যমান হবার কোনো সম্পভাবনা নেই এবং ছিল না। সংস্কৃত আলংকারিকেরা ‘কাবেরীতীরে কালাগারতের'র উল্লেখে ঘোরতর আপত্তি করেছেন, কেননা ও-বাক্যটি, যতই শ্রীতিমধ্যর হোক-না কেন, প্রকৃত নয়। কাবেরীতীরে যে কালাগারতের কালেভদ্রেও জলমাতে পারে না, এ কথা জোর করে আমরা বলতে পারি নে; অপর পক্ষে, অজয়ের তীরে লবঙ্গলতার আবিভােব এবং প্রাদাভােব যে একেবারেই অসম্পভব, সে কথা বঙ্গভূমির বীরভূমির সঙ্গে যাঁর চাক্ষষ পরিচয় আছে তিনিই জানেন। ঐ এক উদাহরণ থেকেই অনামান, এমন-কি, প্রমাণ পর্যন্ত করা যায় যে, জয়দেবের বসন্তবৰ্ণনা কালপনিক- অর্থাৎ সাদা ভাষায় যাকে বলে অলীক। যার প্রথম কথাই মিথ্যে, তার কোনো কথায় বিশদ্বাস করা যায় না; অতএব ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, এই কবিবর্ণিত বসন্ত আগাগোড়া মনগড়া। জয়দেব যখন নিজের চোখে দেখে বৰ্ণনা করেন নি, তখন তিনি অবশ্য তাঁর পববতী কবিদের বই থেকে বসন্তের উপাদান সংগ্রহ করছিলেন; এবং কবিপরস্পরায় আমরাও তাই করে আসছি। সতরাং এ সন্দেহ সম্ভবতঃই মনে উদয় হয় যে, বসন্তঋতু একটা কবিপ্রসিদ্ধিমাত্র; ও-বস্তুর বাস্তবিক কোনো অস্তিত্ব নেই। রমণীর পদতাড়নার অপেক্ষা না রেখে অশোক যে ফল ফোটায়, তার গায়ে যে আলতার রঙ দেখা দেয়, এবং ললনাদের মখমদ্যসিন্ত না হলেও বকুলফলের মাখে। যে মদের গন্ধ পাওয়া যায়-এ কথা আমরা সকলেই জানি। এ দটি কবিপ্রসিদ্ধির