পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bታ bታ প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ বিনা পরীক্ষায় বৈজ্ঞানিকের পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্পভব। আপাতদন্টিতে যা বিভিন্ন মািলত তা যে অভিন্ন, এই সত্য প্রমাণ করাই বিজ্ঞানের মািল উদ্দেশ্য। সতরাং প্রাণ যে জড়শক্তিরই একটি বিশেষ পরিণাম, এটা প্রমাণ না করতে পারলে বিজ্ঞানের অঙ্কে একটা মস্ত বড়ো ফাঁকি থেকে যায়। গত শতাব্দীতে ইউরোপের বৈজ্ঞানিক সমাজে এই ফাঁক বোজাবার বহ চেন্টা হয়েছে; কিন্তু সখের বিষয়ই বলন আর দঃখের বিষয়ই বলন, সে চেন্টা অদ্যাবধি সফল হয় নি। প্ৰাণ জড়জগতে লীন হতে কিছতেই রাজি হচ্ছে না। পঞ্চভূতে মিলিয়ে যাওয়ার অর্থ যে পণ9ত্ব প্রাপতি হওয়া, এ কথা কে না জানে ? আমার পববতীর্ণ বক্তা বলেছেন যে, ইউরোপ যা প্রমাণ করতে পারে নি বাংলা তা করেছে; অর্থাৎ তাঁর মতে আচাৰ্য জগদীশচন্দ্র বস হাতে-কলমে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, জড়ে ও জীবে কোনো প্ৰভেদ নেই। আমার বিশবাস, আমাদের দেশের সবােগ্রগণ্য বিজ্ঞানাচায। এ কথা কোথায়ও বলেন নি যে, জড়ে ও জীবে কোনো প্ৰভেদ নেই। আমার ধারণা, তিনি প্রাণের উৎপত্তি নয়, তার অভিব্যক্তি নিৰ্ণয় করতে চেন্টা করেছেন। কথাটা আর-একটি পরিস্কার করা যাক। মানষমাত্রই জানে যে, যেমন মানষের ও পশ্যর প্রাণ আছে তেমনি উদ্ভিদেরও প্ৰাণ আছে। এমন-কি, ছোটো ছেলেরাও জানে যে, গাছপালা জন্মায় ও মরে। সতরাং মানষি পশ ও উদ্ভিদ যে গণে সমধমনী সেই গণের পরিচয় নেবার চেন্টা বহকাল থেকে চলে আসছে। ইতিপবে আবিস্কৃত হয়েছিল যে, অ্যাসিমিলেশন এবং রিপ্রোডাকশন-এই দই গণে তিন শ্রেণীর প্রাণীই সমধমীর্ণ। অর্থাৎ এতদিন আত্মরক্ষা ও বংশরক্ষার প্রবত্তি ও শক্তিই ছিল প্রাণের লীসন্ট কমন মালটিপল- একালের স্কুলের বাংলায় যাকে বলে লসাগ। আচাৰ্য জগদীশচন্দ্ৰ দেখিয়ে দিয়েছেন যে, এই দই ছাড়া আরো অনেক বিষয়ে প্রাণীমাত্রেই সমধমী। তিনি যে সত্যের আবিস্কার করেছেন সে হচ্ছে এই যে, প্রাণীমাত্রেই একই ব্যথার ব্যর্থী। উদ্ভিদের শিরায়-উপশিরায় বিদ্যুৎ সঞ্চার করে দিলে ও-বস্তু আমাদের মতোই সাড়া দেয়, অর্থাৎ তার দেহে সোিবদ কম্প মছা বেপথ প্রভাতি সাত্ত্বিক ভাবের লক্ষণ সব ফটে ওঠে। এক কথায়, আচাৰ্য বস উদ্ভিদজগতেও হৃদয়ের আবিস্কার করেছেন, পদবাচার্যেরা উদর ও মিথবুনত্বেব সন্ধান নিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন। বসন্মহাশয় প্রাণের লসাগ-তে সন্তুষ্ট না থেকে তার গসাগ, অর্থাৎ গ্রেটেস্ট কমন মেজার -এর আবিস্কারে ব্ৰতী হয়েছেন। যখন উদ্ভিদের হৃদয় আবিস্কৃত হয়েছে তখন সম্পভবত কালে তার মস্তিক্ষকও আবিস্কৃত হবে। কিন্তু তাতে জড় ও জীবের ভেদ নন্ট হবে না, কেননা জড়পদার্থের যখন উদরই নেই তখন তার অন্তরে হৃদয়-মস্তিতকাদি থাকবার কোনোই সম্পভাবনা নেই। যে বস্তুর দেহে অন্নময় কোষ নেই, তার অন্তরে মনোময় কোষের দশানলাভ তাঁরাই করতে পারেন যাঁদের চোখে আকাশকুসম ধরা পড়ে।