পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাণের কথা 8b> 8 আমি বৈজ্ঞানিকও নই, দার্শনিকও নই; সতরাং এতক্ষণ যে অনধিকারচর্চা করলাম, তার ভিতর চাই-কি কিছল। সার নাও থাকতে পারে। কিন্তু জীবন জিনিসটে দার্শনিক বৈজ্ঞানিকের একচেটে নয়, ও-বস্তু আমাদের দেহেও আছে। সতরাং প্রাণের সমস্যার মীমাংসা আমাদেরও করতে হবে, আর-কিছর জন্য না হোক, শািন্ধ, প্রাণধারণ করবার জন্য। আমাদের পক্ষে জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছে প্রাণের মাল্য, সতরাং আমাদের সমস্যা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক-দার্শনিকের সমস্যার ঠিক বিপরীত। প্রাণীর সঙ্গে প্রাণীর অভেদজ্ঞান নয়, ভেদজ্ঞানের উপরেই আমাদের মনীষ্যত্ব প্রতিষ্ঠিত। কেননা, যে গণে প্রাণীজগতে মানষে অসামান্য সেই গণেই সে মানষ। উদ্ভিদ ও পশর সঙ্গে কোন কোন গণে ও লক্ষণে আমরা সমধমনী, সে জ্ঞানের সাহায্যে আমরা মানবজীবনের মাল্য নির্ধারণ করতে পারি নে, কোন কোন ধমে আমরা ও-দই শ্রেণীর প্রাণী হতে বিভিন্ন, সেই বিশেষ জ্ঞানই আমাদের জীবনযাত্রার প্রধান সহায়; এবং এ জ্ঞান লাভ করবার জন্য আমাদের কোনোরাপ অনমান-প্রমাণের দরকার নেই, প্রত্যক্ষই যথেস্ট। আমরা চোখ মেললেই দেখতে পাই যে, উদ্ভিদ মাটিতে শিকড় গেড়ে বসে আছে, তার চলৎশক্তি নেই। এক কথায় উদ্ভিদের প্রত্যক্ষ ধম হচ্ছে স্থিতি। তার পর দেখতে পাই, পশরা সবােত্র বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, অর্থাৎ তাদের প্রত্যক্ষ ধ্যম হচ্ছে গতি। তার পর আসে মানষ। যেহেতু আমরা পশ, সে-কারণ আমাদের গতি তো আছেই, তার উপর আমাদের ভিতর মন নামক একটি পদাৰ্থ আছে, যা পশর নেই। এক কথায় আমাদের প্রত্যক্ষ বিশেষ ধম হচ্ছে মতি। এ প্রভেদটার অন্তরে রয়েছে প্রাণের মন্তির ধারাবাহিক ইতিহাস। উদ্ভিদের জীবন সবচাইতে গন্ডীবদ্ধ, অর্থাৎ উদ্ভিদ হচ্ছে বন্ধ জীব। পশ, মাটির বন্ধন থেকে মন্ত কিন্তু নৈসগিক সর্বভাবের বন্ধনে আবদ্ধ, অর্থাৎ পশ্য বদ্ধমত্ত জীব। আমরা দূেহ ও মনে না মাটির না। সবভাবের বন্ধনে আবদ্ধ, অতএব এ পথিবীতে আমরাই একমাত্ৰ মত্ত জীব। সতরাং মনয্যেত্ব রক্ষা করবার অর্থ হচ্ছে আমাদের দেহ ও মনের এই মন্তভাব রক্ষা। আমাদের সকল চিন্তা সকল সাধনার ঐ একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। যে জীবন যত মন্ত, সে জীবন তত মাল্যবান। কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে না যে, মানষের পক্ষে প্রাণীজগতে পশ্চাদপদ হওয়া সহজ। প্রাণের প্রতি মত অবস্থারই এমন-সব বিশেষ সংবিধা ও অসবিধা আছে যা তার অপর মত অবস্থার নেই। উদ্ভিদ নিশ্চল, অতএব তা পারিপাশিবক অবস্থার একান্ত অধীন। প্রকৃতি যদি তাকে জল না জোগায় তো সে ঠায় দাঁড়িয়ে নিজলা একাদশী করে শকিয়ে মরতে বাধ্য। এই তার অসবিধা। অপর পক্ষে তার সবিধা এই যে, তাকে আহার সংগ্রহ করবার জন্য কোনোরপ পরিশ্রম করতে হয় না, সে আলো বাতাস মাটি জল থেকে নিজের আহার অক্লেশে প্রস্তুত করে নিতে পারে। পশার গতি