পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ষার দিন আজ ঘাম থেকে উঠে চোখ চেয়ে দেখি আকাশে আলো নেই। আকাশের চেহারা দেখে অধসপত লোক ঠিক বঝতে পারে না যে, সময়টা সকাল না। সন্ধে। এ ভুল হওয়া নিতান্ত স্বাভাবিক, কারণ সকাল বিকাল দাই কালই হচ্ছে রাত্ৰি-দিনের সন্ধিস্থল; তার পর যখন দেখা যায় যে, উপর থেকে যা নিঃশব্দে ঝরে পড়েছে তা সায্যের মদ কিরণ নয় জলের সক্ষম ধারা, তখন জ্ঞান হয় যে এটা দিন বটে, কিন্তু বর্ষার দিন। এমন দিনে কাব্য-ব্যািসনী লোকদের মনে নানারকম পােবসমতি জেগে ওঠে। বর্ষার যে রােপ ও যে গণের কথা পাব-কবিরা আমাদের জাতীয় সমতির ভান্ডারে সঞ্চিত করে রেখে গিয়েছেন তা আবার মনশ্চক্ষে আবির্ভূত হয়। অনেকে বলেন যে, কবির উক্তি আমাদের বস্তুজ্ঞানের বাধাস্বরােপ। যা চোখে দেখবার জিনিস, শোনা কথা নাকি সে জিনিসের ও চোখের ভিতর একটা পদা ফেলে দেয়। এ পথিবীতে সব জিনিসকেই নিজের চােখ দিয়ে দেখবার সংকলপটা অতি সাধা! কিন্তু সন্মতি যে প্রত্যক্ষের অন্তরায় এ কথাটা সত্য নয়। আমরা যা-কিছু প্রত্যক্ষ করি তার ভিতর অনেকখানি সমিতি আছে, এতখানি যে প্রত্যক্ষ করবার ভিতর চোেখই কম ও মনই বেশি। এ কথা। যাঁরা মানতে রাজি নন। তাঁরা বেগীসাের Matter and Memory নামক গ্ৰন্থখানি পড়ে দেখলেই ইন্দ্ৰিয়গোচর বিষয়ের সঙ্গে সমিতিগত বিষয়ের অঙগাণ্ডিগসম্প্রবন্ধটা সপট দেখতে পাবেন। সে যাই হোক, কবির হয়ে শােধ এই কথাটা আমি বলতে চাই যে, কবির উন্তি আমাদের অনেকেরই বোজা চোখকে খালে দেয়, কারো খোলা চোখকে বাজিয়ে দেয় না। কবিতা পড়তে পড়তে অনেকের অবশ্য চোখ ঢলে আসে, কিন্তু তার কারণ স্বতন্ত্র। সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে যাঁর কিছমাত্র পরিচয় আছে তিনিই জানেন যে ও-সাহিত্য বর্ষার কথায় মাখরিত। বর্ষা যে পাব-কবিদের এতদর প্রিয় ছিল তার কারণ সেকালেও বর্ষা দেখা দিত গ্ৰীমের পিঠা পিঠ। ইংরেজ কবিরা যে শতমখে বসন্তের গণগান করেন। তার কারণ সে দেশে বসন্ত আসে। শীতের পিঠা পিঠ। ফলে সে দেশে শীতে মিয়মাণ প্রকৃতি বসন্তে আবার নবজীবন লাভ করে। বলেতি শীতের কঠোরতা যিনি রক্তমাংসে অনভব করেছেন, যেমন আমি করেছি, তিনিই সে দেশে বসন্তঋতু-সপশে প্রকৃতি কি আনন্দে বেচে ওঠে তা মমে। মমে অনভব করেছেন। সে দেশ ও ঋতু প্রকৃতির ফলসজা। সংস্কৃত কবিরা যে দেশের লোক সে দেশে গ্রীষ্মম বিলেতি শীতের চাইতেও ভীষণ ও মারাত্মক। বাণভট্টের শ্ৰীহৰ্ষচরিতে গ্রীল্ডেমর একটি লম্বা বণনা আছে।