পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 SR প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ ঢের বেশি। কেননা ঐ দা-আনা হতেই তার সন্টি এবং স্থিতি, বাকি চৌম্পদ-আনোয় তার লয়। যার সমাজের সঙ্গে ষোলো-আনা মনের মিল আছে, তার কিছর বক্তব্য নেই। মন পদার্থটি মিলনের কোলে ঘামিয়ে পড়ে, আর বিরোধের সপশে জেগে৷ ওঠে। এবং মনের এই জাগ্রত ভাব থেকেই সকল কাব্য সকল দশন সকল বিজ্ঞানের উৎপত্তি। এ কথা শনে অনেকে হয়তো বলবেন যে, যে দেশে এত দিকে এত অভাব। সে দেশে যে লেখা তার একটি অভাবও পরিণ না করতে পারে, সে লেখা সাহিত্য নয়— শখ ; ও তো কলপনার আকাশে রঙিন কাগজের ঘড়ি ওড়ানো, এবং সে ঘড়ি যত শীঘ্ৰ কাটা পড়ে নিরদেশ হয়ে যায় ততই ভালো। অবশ্য ঘড়ি ওড়াবারও একটা সার্থকতা আছে। ঘড়ি মানষেকে অন্তত উপরের দিকে চেয়ে দেখতে শেখায়। তবও এ কথা সত্য যে, মানবজীবনের সঙ্গে যার ঘনিষ্ঠ সম্প্ৰবন্ধ নেই, তা সাহিত্য নয়, তা শােধ বাক-ছল। জীবন অবলম্বন করেই সাহিত্য জন্ম ও পন্টি লাভ করে, কিন্তু সে জীবন মানষের দৈনিক জীবন নয়। সাহিত্য হাতে-হাতে মানষের অক্ষাবস্ত্রের সংস্থান করে দিতে পারে না। কোনো কথায় চিড়ে ভেজে না, কিন্তু কোনো-কোনো কথায় মন ভেজে ; এবং সেই জাতির কথারই সাধারণ সংজ্ঞা হচ্ছে সাহিত্য। শব্দের শক্তি অপরিসীম। রাত্রির অন্ধকারের সঙ্গে মশার গান গনোনি মানষেকে ঘািম পাড়ায়- অবশ্য যদি মশারির ভিতর শোওয়া যায় ; আর দিনের আলোর সঙ্গে কাক-কোকিলের ডাক মানষেকে জাগিয়ে তোলে। প্ৰাণ পদার্থটির গঢ়ি তত্ত্ব আমরা না জানলেও তার প্রধান লক্ষণটি এতই ব্যন্ত এবং এতই সাপটে যে তা সকলেই জানেন। সে হচ্ছে তার জাগ্রত ভাব। অপর দিকে নিদ্রা হচেছ মাতুর সহোদরা। কথায় হয় আমাদের জাগিয়ে তোলে, নয় ঘাম পাড়িয়ে দেয় – তাই আমরা কথায় মারি কথায় বাঁচা। মন্ত্ৰ সাপকে মশাধ করতে পারে কি না জানি নে, কিন্তু মানষেকে যে পারে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ গোটা ভারতবর্ষ। সংস্কৃত শব্দ যে ংস্কারকে বাধা দিতে পারে তার প্রমাণ বাংলা সাহিত্য। মানষমাত্রেরই মন কতক সশস্ত আর কতক জাগ্রত। আমাদের মনের যে অংশটকু জেগে আছে সেই অংশটকুকেই আমরা সমগ্র মন বলে ভুল করি।-নিদ্রিত অংশটকুর অস্তিত্ব আমরা মানি নে, কেননা জানি নে। সাহিত্য মানবজীবনের প্রধান সহায়, কারণ তার কাজ হচ্ছে মানষের মনকে ক্ৰমান্বয় নিদ্রার অধিকার হতে ছিনিয়ে নিয়ে জাগরকে করে তোলা। আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভোরের পাখিরা যদি আমাদের প্রতিষ্ঠিতত সবজ পত্রমন্ডিত সাহিত্যের নবশাখার উপর এসে অবতীর্ণ হন তা হলে আমরা বাঙালি জাতির সবচেয়ে যে বড়ো অভাব, তা কতকটা দরে করতে পারব। সে অভাব হচ্ছে আমাদের মনের ও চরিত্রের অভাব যে কতটা, তারই জ্ঞান। আমরা যে আমাদের সে অভাব সম্যক উপলব্ধি করতে পারি নি। তার প্রমাণ এই যে, আমরা নিত্য লেখায় ও বক্তৃতায় দৈন্যকে ঐশবষ বলে, জড়তাকে সাত্ত্বিকতা বলে, আলস্যকে ঔদাস্য বলে, শমশানবৈরাগ্যকে ভূমানন্দ বলে, উপবাসকে উৎসব বলে, নিৰ্দ্ধকমাকে নিক্ৰিয় বলে প্রমাণ করতে চাই। এর কারণও পািট। ছল দািবলের বল। যে দিবলৈ সে অপরকে প্রতারিত করে আত্মরক্ষার জন্য, আর নিজেকে প্রতারিত করে আত্মপ্ৰসাদের