পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ কাশীদাস নয় ; দার্শনিক শংকর, গদাধর নয় ; শাস্ত্রকার মন, রঘানন্দন নয় ; আলংকারিক দন্ডী, বিশবনাথ নয়। নব্যান্যায় নব্যদর্শন। নব্যস্মতি আমাদের কাছে এখন অতিপরাতন। আর যা কালের হিসাবে অতিপরাতন, তাই আবার বর্তমানে নতুন রূপ ধারণ করে এসেছে। এর কারণ হচ্ছে ইউরোপের নবীন সাহিত্যের সঙ্গে ভারতবর্ষের প্রাচীন সাহিত্যের আকারগত সাদশ্যে না থাকলেও অন্তরের মিল আছে। সে হচ্ছে প্রাণের মিল- উভয়ই প্রাণবন্ত। গাছের গোলাপের সঙ্গে কাগজের গোলাপের সাব্দশ্য থাকলেও জীবিত ও মতের ভিতর যে পার্থক্য, উভয়ের মধ্যে সেই পার্থক্য বিদ্যমান। কিন্তু সস্থলের গোলাপ ও জলের পদ্ম উভয়ে একজাতীয়, কেননা উভয়েই জীবন্ত। সতরাং আমাদের নবজীবনের নবাঁশিক্ষা, দেশের দিক ও বিদেশের দিক দই দিক থেকেই আমাদের সহায়। এই নবজীবন যে লেখায় প্রতিফলিত হয়। সেই লেখাই কেবল সাহিত্য- বাদবাকি লেখা কাজের নয়, বাজে । এই সাহিত্যের বহিভূত লেখা আমাদের কাগজ থেকে বহিভূত করবার একটি সহজ উপায় আবিহুকাব করেছি বলে আমরা এই নতুন পত্র প্রকাশ করতে উদ্যত হয়েছি। একটা নতুন কিছু করবার জন্য নয়, বাঙালির জীবনে যে নতনত্ব এসে পড়েছে তাই পরিস্কার করে প্রকাশ করবার জন্য। এই নািতন জীবনে অন্যপ্রাণিত হয়ে বাংলা সাহিত্য যে কেন পণ্ডিপত না হয়ে পল্লীবিত হয়ে উঠছে, তার কারণ নিৰ্ণয় করাও কঠিন নয়। কিঞ্চিৎ বাহ্যদভিট এবং কিঞ্চিৎ অন্তদন্টি থাকলেই সে কারণের দই পিঠই সহজে মানষের চোখে পড়ে। সাহিত্য এ দেশে অদ্যাবধি ব্যাবসা-বাণিজ্যের অঙ্গ হয়ে ওঠে নি। তার জন্য দোষী লেখক কি পাঠক, বলা কঠিন। ফলে আমরা হাঁচিছ সব সাহিত্যসমাজেল শখের কবির দল। অব্যবসায়ীর হাতে পথিবীর কোনো কাজই যে সবাঙ্গসন্দর হয়ে ওঠে না, এ কথা সব লোকস্বীকৃত। লেখা আমাদের অধিকাংশ লেখকের পক্ষে কাজও নয় খেলাও নয়, শােধ অকাজ ; কারণ খেলার ভিতর যে সর্বাস্থ্য ও সরচছন্দতা আছে, লেখায় তা নেই ; অপর দিকে কাজের ভিতর যে যত্ন ও মন আছে, তাও তাতে নেই। আমাদের রচনার মধ্যে অন্যমনস্কতার পরিচয় পদে পদে পাওয়া যায় ; কেননা যে অবসর তোমাদের নেই সেই অবসরে আমরা সাহিত্যরচনা করি। আমরা অবলীলাব্রুমে সাহিত্য গড়তে চাই বলে আমাদের নৈসগিকী প্ৰতিভার উপর নিভাির করা ব্যতীত উপায়ান্তর নেই। অথচ এ কথা লেখকমাত্রেরই সমরণ রাখা উচিত যে, যিনি সরস্বতীর প্রতি অনগ্রহ করে লেখেন, সরস্বতী চাই-কি তাঁর প্রতি অনগ্ৰহ নাও করতে পারেন। এই একটি কারণ যার জন্যে বঙ্গ সাহিত্য পণ্ডিপত না হয়ে পল্লবিত হয়ে উঠছে। ফলের চাষ করতে হয়, জঙ্গল আপনি হয়। অতিকায় মাসিক পত্রগলি সংখ্যাপােরণের জন্য এই আগাছার অঙ্গীকার করতে বাধ্য, এবং সেই কারণে আগাছার বদ্ধির প্রশ্রয় দিতেও বাধ্য। এই-সব দেখেশানে ভয়ে সংকুচিত হয়ে আমাদের কাগজ ক্ষদ্র আকার ধারণ করেছে। এই আকারের তারতম্যে প্রকারেরও কিঞ্চিৎ তারতম্য হওয়া অবশ্যম্পভাবী। আমাদের সবলপায়তন পত্রে অনেক লেখা আমরা অগ্রাহ্য করতে বাধ্য হব। সদীপাঠ্য শিশপাঠ্য স্কুলপাঠ্য এবং অপাঠ্য