পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবজি পত্রের মািখপত্ৰ 8@> প্রবন্ধসকল অনাহত কিংবা রবাহত হয়ে আমাদের দ্বারস্থ হলেও আমরা তাদের স্বস্থানে প্রস্থান করতে বলতে পারব। কারণ আমাদের ঘরে সস্থানাভাব। এক, কথায়, শিক্ষাপ্রদ প্রবন্ধ আমাদের প্রকাশ করতে হবে না। এর লাভ যে কি, তিনিই বঝতে পারবেন যিনি জানেন যে, যে কথা একশো বার বলা হয়েছে তারই পােনরাবত্তি করাই শিক্ষকের ধর্ম ও কম। যে লেখায় লেখকের মনের ছাপ নেই, তা ছাপালে সাহিত্য হয় না। তার পর, যে জীবনীশক্তির আবিভাবের কথা আমি পাবে উল্লেখ করেছি, সে শক্তি আমাদের নিজের ভিতর থেকে উদবুদ্ধ হয় নি; তা হয় দীর দেশ হতে নয় দর কাল হতে, অর্থাৎ বাইরে থেকে, এসেছে। সে শান্তি এখনো আমাদের সমাজে ও মনে বিক্ষিপত হয়ে রয়েছে। সে শক্তিকে নিজের আয়ত্তাধীন করতে না পারলে তার সাহায্যে আমরা সাহিত্যে ফল কিংবা জীবনে ফল পাব না। এই নাতন প্রাণকে সাহিত্যে প্রতিফলিত করতে হলে প্রথমে তা মনে প্রতিবিম্বিত করা দরকার। অথচ ইউরোপের প্রবল ঝাঁকুনিতে আমাদের অধিকাংশ লোকের মন ঘলিয়ে গেছে। সেই মনকে স্বচছ করতে না পারলে তাতে কিছই প্ৰতিবিম্বিত হবে না। বতমানের চঞ্চল এবং বিক্ষিপািত মনোভাবসকলকে যদি প্রথমে মনোদপণে সংক্ষিপত ও সংহত করে প্রতিবিম্বিত করে নিতে পারি, তবেই তা পরে সাহিত্যদাপণে প্রতিফলিত হবে। আমরা আশা করি আমাদের এই সবলপপরিসর পত্রিকা মনোভাব সংক্ষিপািত ও সংহত করবার পক্ষে লেখকদের সাহায্য করবে। সাহিত্য গড়তে কোনো বাইরের নিয়ম চাই নে, চাই শােধ আত্মসংযম। লেখায় সংযত হবার একমাত্র উপায় হচেছ সীমার ভিতর আবদ্ধ হওয়া। আমাদের কাগজে। আমরা তাই সেই সীমা নিদিলিট করে দেবার চেষটা করব । আমার শেষ কথা এই যে, যে শিক্ষার গণে দেশে নতেন প্রাণ এসেছে, মনে সাহিত্য গড়বার প্রবত্তি জন্মিয়ে দিয়েছে, সেই শিক্ষার দোষেই সে ইচ্ছা কাযে। পরিণত করবার অন্যরােপ ক্ষমতা আমরা পাই নি। আমৱা বত মান ইউরোপ ও অতীত ভারতবর্ষ, এ উভয়ের দোেটানায় পড়ে বাংলা প্রায় ভুলে গেছি। আমরা শিখি ইংরেজি, লিখি বাংলা, মধ্যে থাকে সংস্কৃতের ব্যবধান। ইংরেজি শিক্ষার বীজ অতীত ভারতের ক্ষেত্রে প্রথমে বপন করলেও তার চারা তুলে বাংলার মাটিতে বসাতে হবে, নইলে সর্বদেশী সাহিত্যের ফলে ফটবে না। পশ্চিমের প্রাণবায় যে ভাবের বীজ বহন করে আনছে, তা দেশের মাটিতে শিকড় গাড়তে পারছে না বলে হয় শকিয়ে যাচ্ছে, নয় পরগাছা হচ্ছে। এই কারণেই মেঘনাদবধকাব্য পরগাছার ফল। ‘অকিড' এর মতো তার আকারের অপবিতা এবং বর্ণের গৌরব থাকলেও তার সৌরভ। নেই। খাঁটি স্বদেশী বলে অন্নদামঙ্গল স্বল্পপ্রাণ হলেও কাব্য; এবং কোনো দেশেরই নয় বলে বন্দ্রসংহার। মহাপ্রাণ হলেও মহাকাব্য নয়। ভারতচন্দ্ৰ ভাষার ও ভাবের একতার গণে সংযমের গণে তাঁর মনের কথা। ফলের মতো সাকার করে তুলেছেন, এবং সে ফলে, যতই ক্ষীণ হোক-না কেন, প্রাণও আছে গন্ধও আছে। দেশের অতীত ও বিদেশের বর্তমান, এই দটি প্রাণশক্তির বিরোধ নয়, মিলনের উপর আমাদের সাহিত্যের ও সমাজের ভবিষ্যৎ নিভাির করছে। আশা করি বাংলার