পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবজি পত্র বাংলাদেশ যে সবজি, এ কথা বোধ হয় বাহ্যজ্ঞােনশন্য লোকেও অস্বীকার করবেন। কলা ; মার শস্যশ্যামল রােপ বাংলার এত গদ্যেপদ্যে এতটা পল্লীবিত হয়ে উঠেছে। যে, সে বর্ণনার যাথার্থ্য বিশ্ববাস করবার জন্য চোখে দেখবারও আবশ্যক নেই। পনির,ণ্ডির গণে এটি সেই শ্রেণীর সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার সম্পবন্ধে চক্ষকর্ণের যে বিবাদ হতে পারে, এরােপ সন্দেহ আমাদের মনে মহত্যের জন্যও পথান পায় না। এ ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবশত নাম ও রাপের বাস্তবিকই কোনো বিরোধ নেই। একবার চোখ তাকিয়ে দেখলেই দেখা যায় যে, তরাই হতে সন্দরবন পর্যন্ত এক ঢালা সবজি বর্ণ দেশটিকে আদ্যোপান্ত ছেয়ে রেখেছে! কোথাও তার বিচ্ছেদ নেই, কোথাও তার বিরাম নেই। শােধ, তাই নয়, সেই রঙ বাংলার সীমানা অতিক্রম করে উত্তরে হিমালয়ের উপরে ছাপিয়ে উঠেছে ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ভিতর চারিয়ে গেছে। সবজি, বাংলার শােধ দেশজোড়া রঙ নয়, বারোমেসে রঙ । আমাদের দেশে প্রকৃতি বহরমপী নয়, এবং ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে বেশ পরিবতন করে না। বসন্তে বিয়ের কনের মতো। ফলের জহরতে আপাদমস্তক সালংকারা হয়ে দেখা দেয় না, বর্ষার জলে শাচিসনাতা হয়ে শরতে পাজার তসর ধারণ করে আসে না, শীতে বিধবার মতো সাদা শাড়িও পরে না। মাধব হতে মধ্য পর্যন্ত ঐ সবজের টানা সরে চলে; ঋতুর প্রভাবে সে সরের ষে রূপান্তর হয়, সে শােধ, কড়িকোমলে। আমাদের দেশে অবশ্য বর্ণের বৈচিত্র্যের অতাব নেই। আকাশে ও জলে, ফলে ও ফলে, আমরা বর্ণগ্রামের সকল সরেরই খেলা দেখতে পাই। কিন্তু মেঘের রঙ ও ফলের রঙ ক্ষণস্থায়ী; প্রকৃতির ও-সকল রাগরঙ্গ তার বিভাব ও অন্যভাব মাত্র। তার স্থায়ী ভাবের, তার মল রসের, পরিচয় শােধ সবাজে। পাঁচরঙা ব্যভিচারী ভাবসকলের সার্থকতা হচ্ছে বঙ্গদেশের এই অখন্ড-হরিৎ সস্থায়ী ভাবটিকে ফটিয়ে Ve এরাপ হবার অবশ্য একটা অৰ্থ আছে। বর্ণমাত্রেই ব্যঞ্জন বৰ্ণ, অর্থাৎ বর্ণের উদ্দেশ্য শােধ বাহ্যবস্তুকে লক্ষণান্বিত করা নয়, কিন্তু সেই সংযোগে নিজেকেও ব্যন্ত করা। যা সর্বপ্রকাশ নয়, তা অপর কিছই প্রকাশ করতে পারে না। তাই রঙ রােপও বটে র্যাপকও বটে। যতক্ষণ আমাদের বিভিন্ন বর্ণের বিশেষ ব্যক্তিত্বের জ্ঞান না জন্মায় ততক্ষণ আমাদের প্রকৃতির বর্ণপরিচয় হয় না, এবং আমরা তার বক্তব্য কথা বঝতে পারি নে। বাংলার সবজি পত্রে যে সদসমাচার লেখা আছে তা পড়বার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক হবার আবশ্যক নেই; কারণ সে লেখার ভাষা বাংলার প্রাকৃত। তবে আমরা সকলে যে তার অর্থ বঝতে পারি। নে তার কারণ হচেছ যিনি গপত জিনিস আবিস্কার করতে ব্যস্ত, ব্যক্ত জিনিস তাঁর চোখে পড়ে না।