পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবজি পত্র 8 NA পাকা করে তুলতে চান। তাঁদের বিশদ্বাস যে কোনোরাপ কম কিংবা জ্ঞানের চাপে আমাদের হািদয়ের রসটকু নিংড়ে ফেলতে পারলেই আমাদের মনের রঙ পেকে উঠবে। তাঁদের রাগ এই যে, সবজি বর্ণমালার অন্তঃস্থ বৰ্ণ নয় এবং ও রঙ কিছরই অন্তে আসে না- জীবনেরও নয়, বেদেরও নয়, কম্যেরও নয়, জ্ঞানেরও নয়। এদের চোখে সবজে-মনের প্রধান দোষ যে, সে মন পাব মীমাংসার অধিকার ছাড়িয়ে এসেছে। এবং উত্তরমীমাংসার দেশে গিয়ে পৌছয় নি। এরা ভুলে যান যে, জোর করে পাকাতে গিয়ে আমরা শােধ হরিৎকে পৰীতের ঘরে টেনে আনি, প্রাণকে মাতুর দবারস্থ করি। অপর দিকে এ দেশের ভক্তিযোগীরা, অর্থাৎ কবির দল, কাঁচাকে কাঁচ করতে চান। এরা চান যে আমরা শােধ গদগদ ভাবে আধো-আধো কথা কই। এদের রাগ সবজের সজীবতার উপর। এদের ইচছা সবাজের তেজটকু বহিস্কৃত করে দিয়ে ছাঁকা রসটিকু রাখেন। এরা ভুলে যান যে, পাতা কখনো আর কিশলয়ে ফিরে যেতে পারে না ; প্ৰাণ পশ্চাৎপদ হতে জানে না। তার ধর্ম হচেছ এগনো, তার লক্ষ্য হচেছ হয় অমতত্ব নয়। মতু্য । যে মন একবার কমের তেজ ও জ্ঞানের ব্যোমের পরিচয় লাভ করেছে, সে এ উভয়কে অন্তরঙ্গ করবেই। কেবলমাত্র ভক্তির শান্তিজলে সে তার সমস্ত হাদয় পণ করে রাখতে পারে না। আসল কথা হচেছ, তারিখ এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে দিয়ে যৌবনকে ফটিক দেওয়া যায় না। এ উভয়ের সমবেত চেস্টার ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, বাঙালির মন এখন অধোক অকালপক এবং অর্ধেক অযথা-কচি। আমাদের আশা আছে যে, সবজি ক্লামে পেকে লাল হয়ে উঠবে। কিন্তু আমাদের অন্তরের আজকের সবজি রস কালকের লাল রক্তে তবেই পরিণত হবে, যদি আমরা সবধমের পরিচয় পাই এবং প্রাণপণে তার চর্চা করি। আমরা তাই দেশী কি বিলাতি পাথরে-গড়া সরস্বতীর মতির পরিবতে' বাংলার কাব্যমন্দিরে দেশের মাটির ঘটস্থাপনা করে তার মধ্যে সবজি পত্রের প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কিন্তু এ মন্দিরের কোনো গভর্ণমন্দির থাকবে না, কারণ সবাজের পণে অভিবান্তির জন্য আলো চাই আর বাতাস চাই। অন্ধকারে সবজি ভয়ে নীল হয়ে যায়। বন্ধ ঘরে সবজে দঃখে পান্ডু হয়ে যায়। আমাদের নবমন্দিরের চার দিকের অবারিত আবার দিয়ে প্রাণবায়র সঙ্গে সঙ্গে বিশোবর যত আলো অবাধে প্রবেশ করতে পারবে। শািন্ধ, তাই নয়, এ মন্দিরে সকল বর্ণের প্রবেশের সমান অধিকার থাকবে। উষার গোলাপি, আকাশের নীল, সন্ধ্যার লাল, মেঘের নীল-লোহিত, বিরোধালংকারস্বরূপে সবজি পত্রের গাত্রে সংলগন হয়ে তার মরকতদ্যুতি কখনো উক্তজবল কখনো কোমল করে তুলবে। সে মন্দিরে স্থান হবে না কেবল শতক পত্রের। বৈশাখ ১৩২১