পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যািসন্মিলন 6 VO কারণ তাতেই তার কাজ চলে যায় ; কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্ৰহ্মান্ডকে একটি প্রকান্ড সমষ্টি হিসেবে দেখতে চায় ; বিশেব একটা নিয়ম আছে। এই বিশবাসে, সে সেই নিয়মের সন্ধানে ফেরে। বস্তুসকলকে পথকভাবে না দেখে যন্তভাবে দেখতে গিয়ে বিজ্ঞান দেখতে পায় যে, প্রতিভাসিক সত্য সমগ্র সত্য নয়। পথিবী যে চ্যাপটা ও সন্যৰ যে পথিবীর চার দিকে ঘরছে, প্রত্যক্ষজ্ঞানের হিসেবে এ দটি হচ্ছে সম্পণে পথিক এবং সম্পক রহিত সত্য। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে এ দটি হচ্ছে এক সত্যের দাইটি বিভিন্ন রােপ। পথিবী নামক মৎপিন্ডটি যে কারণে সহযোির চার পাশে ঘরপাক খাচ্ছে, সেই কারণেই সেটি তাল পাকিয়ে গেছে। ত্রিকোণ বা চতুষ্মেকাণ কিংবা চ্যাপটা হলে ওভাবে ঘোরা তার পক্ষে অসাধ্য হত। সতরাং প্রত্যক্ষ জ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই, কারণ এ উভয়ের অধিকার স্বতন্ত্র। বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জানতে চাই বস্তুজগতের সামান্য গণ, আর প্রত্যক্ষ জ্ঞানের সাহায্যে আমরা দেখতে চাই বস্তুর বিশেষ রূপ। অতএব বিজ্ঞানের চর্চা করলে আমাদের তত্ত্বজ্ঞান মারা যাবে না। অর্থাৎ আমাদের ধম নিম্পট হবে না ; এবং আমাদের বাহ্যজ্ঞানও নন্ট হবে না। অর্থাৎ কাব্য-শিল্পও মারা যাবে না। যা তত্ত্বজ্ঞানও নয়, বিজ্ঞানও নয়, প্রত্যক্ষ জ্ঞানও নয়, তাই হচেছ যথাৰ্থ মিথ্যা ; এবং তারই চর্চা করে আমরা ধম সমাজ কাব্য শিল্প, এক কথায় সমগ্র মানবজীবন, সমলে ধৰিংস করতে বসেছি। O বিজ্ঞান শােধ একপ্রকার বিশেষজ্ঞানের নাম নয় ; একটি বিশেষ প্রণালী অবলম্বন করে যে জ্ঞান লাভ করা যায়, আসলে তারই নাম হচেছ বিজ্ঞান। আমরা বিজ্ঞানকে যতই কেন সাধাসাধি করি।-নে, সে কখনোই এ দেশে ফিরে আসবে না, যদি-না আমরা তার সাধনা করি। সতরাং সেই সাধনপদ্ধতিটি আমাদের জানা দরকার। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি যে কি, সে সম্পবন্ধে আমি দই-একটি কথা বলতে চাই। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য থেকেই তার উপায়েরও পরিচয় পাওয়া যাবে। তত্ত্বজ্ঞানের জিজ্ঞাস্য বিষয় হচেছ “এক সত্য’, অথচ প্রত্যক্ষজ্ঞানের বহর অস্তিত্ব তত্ত্বজ্ঞানীরাও অস্বীকার করতে পারেন না। তাই বৈদান্তিকেরা বলেন, যা পাবে এক ছিল তাই এখন বহতে পরিণত হয়েছে। সাংখ্যের মতে সন্টি একটি বিকার মাত্র, কেননা ত্ৰিগণের সাম্যাবস্থাই প্রকৃতির সােথ অবস্থা। সন্টিকে বিকার হিসেবে দেখা আশচর্য নয়, কেননা। আপাতসলভ জ্ঞানে এ বিশব একটি ভাঙাচোরা, ছাড়ানো ও ছড়ানো ব্যাপার। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই অসংখ্য পথক পথক বস্তুর পরস্পরের সম্প্ৰবন্ধ নিৰ্ণয় করা, জড়জগতের ভগ্নাংশগলিকে যোগ দিয়ে একটি মন দিয়ে ধরবার-ছোঁবার মতো সমন্টি গড়ে তোলা। এই ভগ্নাংশগলিকে পরস্পরের সঙ্গে যোগ করতে হলে অকজোখ চাই। সতরাং দইয়ে দইয়ে চার করার নামই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। দইয়ে দইয়ে পাঁচ। আর-যে-দেশেই হোক, বিজ্ঞানের রাজ্যে হয় না। বিজ্ঞানের কারবার শােধ বস্তুর সংখ্যা নিয়ে নয়, পরিমাণ নিয়েও । সতরাং বিজ্ঞানে মাপজোখও করা চাই। বিনা মাপে বিনা অাঁকে যে সত্য পাওয়া