পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যািসন্মিলন 6 a সাহেবিয়ানা নয় আষামি করি। জাতীয় আত্মজ্ঞান লাভ করতে পারলে আমরা আবার সহজ, অর্থাৎ natural, হতে পারব। মনের এই সহজসাধন অতি কঠিন ব্যাপার, কেননা আমাদের সকল শিক্ষাদীক্ষা হচেছ কৃত্রিমতার সহায় ও সম্পদ। G সাহিত্যশাখার সভাপতি শ্রীযন্ত যাদবেশবর তিকরিত্ন মহাশয়ও আমাদের বলেছেন R অ্যােলস্যের প্রশ্রয় দিলে হইবে না। নিদ্রিত সমাজকে জাগাইতে হইবে। শয্যাশায়ান সমাজের সখিসপিত ভাঙাইতে হইবে। এ যে শােধ কথার কথা নয়, তার প্রমাণ, কি করে সাহিত্যের সাহায্যে সমাজকে জাগিয়ে তুলতে পারা যায় তার পন্থা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মোট কথা এই যে, দর্শনবিজ্ঞানের চর্চা না করলে সাহিত্য শক্তিহীন ও শ্রীহীন হয়ে পড়ে। তকরিত্নমহাশয়ের মতে “সাহিত্য’ শব্দের অর্থ সাহচৰ্য্য। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন, কিসের সাহচর্য ? তার উত্তর, সকলপ্রকার জ্ঞানের সাহচৰ্য্য। কারণ অতিপ্ৰবন্ধ অজ্ঞতার গাভে যে সাহিত্য জন্মগ্রহণ করে তা সবুকুমার-সাহিত্য নয়, তা শােধ কুমারসাহিত্য অর্থাৎ ছেলেমান যি লেখা। তিনি দেখিয়েছেন যে, কালিদাস প্রভাতি বড়ো বড়ো সংস্কৃত কবিরা সে যাগের সব শাস্ত্রে সপন্ডিত ছিলেন। প্রমাণ শকুন্তলা অভিজ্ঞান, অবিজ্ঞান নয়। সংস্কৃত সাহিত্যের নানা যন্ত শাস্ত্রের জ্ঞানের অভাববশত আমরা সংস্কৃত কাব্য আধো বঝি, সংস্কৃত দশন ভাল বঝি, পরাণকে ইতিহাস বলে গণ্য করি, আর ধমশাস্ত্রকে বেদবাক্য বলে মান্য করি। সে যাই হোক, পান্ডিত্য কস্মিনকালেও সাহিত্যের বিরোধী নয়। তার প্রমাণ, কালিদাস দান্তে মিলটন গ্যেটে প্রভাত। তবে, পন্ডিত অর্থে যদি বিদ্যার চিনির বলদ বোঝায় তা হলে সে সর্বতন্ত্ৰ কথা। জ্ঞানই হচেছ কাব্যের ভিত্তি, কারণ সত্যের উপরেই সাহিত্য প্রতিষ্ঠিত ৷ তকরিত্নমহাশয়ের বক্তব্য এই যে, ইংরেজি ভাষায় যাকে বলে "সিনথেটিক কালচার’ তাই হচ্ছে সাহিত্যের পরম সহায়। এ কথা সম্পপণ্য সত্য। ইউরোপের দশন বিজ্ঞান ইতিহাস অর্থনীতি সমাজতত্ত্ব রাজনীতির সঙ্গে কতকটা পরিচয় না থাকলে কোনো বড়ো ইংরেজ কবি কিংবা নভেলিসেন্টর লেখা সক্ষপণ বোঝাও যায় না, তার রসও আসবাদন করা যায় না। সাহিত্য হচ্ছে প্ৰবন্ধ চৈতন্যের বিকাশ; এবং চৈতন্যকে জাগিয়ে তুলতে হলে তার উপর আর-পাঁচজনের মনের আর-পাঁচিরকমের জ্ঞানের ধাক্কা চাই । যাঁর মন সত্যের সােপশে সাড়া দেয় না, সে সত্য আধ্যাত্মিকই হোক আর আধিভৌতিকই হোক, তিনি কবি নন। সতরাং দশন-বিজ্ঞানকে অপশ্য করে তোলায় কাব্যের পবিত্ৰতা রক্ষা হয় না। এই কারণেই তকরিত্নমহাশয় আমাদের দেশী-বিলাতি সকলপ্রকার দশন-বিজ্ঞান অন্যবাদ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে আলস্যপ্রিয় বাঙালি-মনের পক্ষে বিজ্ঞানচর্চারপ মানসিক ব্যায়াম হচেছ অত্যাবশ্যক। আমাদের অলস মনের আরামজনক বিশ্ববাসসকল বিজ্ঞানের অগ্নিপরীক্ষায় পরিশদ্ধ না হলে সত্যের খাঁটি সোনাতে তা পরিণত