পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বস্তুতন্ত্ৰতা বস্তু কি শ্রীযক্ত রাধাকমল মখোপাধ্যায় রবীন্দ্রবাবর ‘বাস্তব’ নামক প্রবন্ধের প্রতিবাদে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। তােকই হচেছ আলোচনার প্রাণ। পথিবীর অপর সকল বিষয়ের ন্যায় সাহিত্য সম্পবন্ধেও কোনো মীমাংসায় উপস্থিত হতে হলে বাদীপ্রতিবাদী উভয় পক্ষেরই উক্তি শোনাটা দরকার। এই উপলক্ষে রবীন্দ্রবাবার কাব্যের দোষগণ বিচার করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তার কারণ, রবীন্দ্রবাবার কাব্যে বস্তুতন্ত্রতা নেই বললে, আমার বিশ্ববাস, কিছই বলা হয় না। কোন কাব্যে কি আছে তাই আবিস্কার করা এবং প্রকাশ করাই হচ্ছে সমালোচনার, শািন্ধ মােখ্য নয়, একমাত্র উদ্দেশ্য। অবিমারকে যা আছে শকুন্তলায় তা নেই, শকুন্তলায় যা আছে মচছকটিকে তা নেই, এবং মচছকটিকে যা আছে উত্তররামচরিতে তা নেই- এ কথা সম্পণে সত্য হলেও এ সত্যের দৌলতে আমাদের কোনোরাপ জ্ঞানবন্ধি হয় না। কোনো-এক ব্যক্তি আইসল্যান্ড সম্পবন্ধে একখানি একছত্ৰ-বই লেখেন। তাঁর কথা এই যে, আইসল্যান্ডে সাপ নেই। এই বইখানি সম্পবন্ধে ইউরোপের সকল সমালোচক একমত এবং সে মত এই যে, উক্ত পােস্তকের সাহায্যে আইসল্যান্ড সম্পবন্ধে কোনোরাপ জ্ঞান লাভ করা যায় না। কোনো বিশেষ পদার্থের অভাব নয়, সদভাবের উপরেই মানষের মনে তদবিষয়ক জ্ঞান প্রতিঠিত। রবীন্দ্রবাবার কাব্য সম্পবন্ধে রাধাকমলবাবর মতের প্রতিবাদ করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। কোনো-একটি মতের খন্ডন করতে হলে সে মতটি যে কি, তা জানা আবশ্যক। আইসল্যান্ডে সাপ নেই- এ কথা অপ্রমাণ করবার জন্য - লোককে দেখিয়ে দেওয়া দরকার যে, সে দেশে সাপ আছে, এবং তার জন্য সাপ যে কি বস্তু সে বিষয়েও সপিট জ্ঞান থাকা দরকার। রবীন্দ্রবাবার কাব্যে বস্তুতন্ত্ৰতা আছে কি নেই সে বিচার করতে আমি অপারগ, কেননা রাধাকমলবাবার সাদীঘ প্ৰবন্ধ থেকে বস্তুতন্ত্রতা যে কি বস্তু তার পরিচয় আমি লাভ করতে পারি নি। তিনি সাহিতে্যু বাস্তবতার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিত্যবস্তুর উল্লেখ করেছেন। বস্তুতন্ত্রতার অর্থগ্রহণ করা যদি কঠিন হয় তা হলে নিত্যবস্তুতন্ত্রতার অর্থগ্রহণ করা যে অসম্ভব, সে কথা বলা বাহাল্য। সেই বস্তুই নিত্য, যা কালের অধীন নয। এরপ পদার্থ যে পথিবীতে আছে। এ কথা এ দেশের প্রাচীন আচায্যেরা স্বীকার করেন নি। বিষ্ণপরিাণের মতে— যাহা কালান্তরেও অর্থাৎ কোনো কালেও পরিণামাদিজনিত সংজ্ঞানতার প্রাপিত হয় না, তাহাই প্রকৃত সত্য বস্তু। জগতে সেরাপ কোনো বস্তু আছে কি ?--কিছই নাই।। ১ ১। রামানাজধত বচন, শ্ৰীভাস্য