পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিভাষণ CS উপায়ান্তর নাই। নানা ভাষার মধ্যে শব্দের পরস্পর আদান-প্ৰদান আবহমানকাল সভ্যসমাজে চলিয়া আসিতেছে। আবশ্যকমত ঐরােপ শব্দ আত্মসাৎ করায় ভাষার কান্তি পণ্ট হয়, স্বর্যপ নন্ট হয় না। নিতান্ত বাধ্য না হইলে এ কাজ করা উচিত নয়, কেননা পরিভাষার শব্দ আহরণ কিংবা হরণ করা সবােত্র নিরাপদ নহে। শব্দের আভিধানিক অর্থ তাহার সম্পপণ্য অর্থ নয়, আভিধানিক অর্থে ভাবের আকার থাকিলেও তাহার ইঙ্গিত থাকে না। লৌকিক শব্দের আদ্যোপান্ত বজান এবং অপর ভাষার অন্বয়ের অন্যাকরণেই ভাষার জাতি নন্ট হয়। মৌখিক ভাষার প্রতি এরােপ ব্যবহার করিবার জো নাই। সতরাং শিক্ষিত লোকের সকল অত্যাচার লিখিত ভাষাকেই নীরবে সহ্য করিতে হয়। রামমোহন রায় যে মৌখিক ভাষার উপরেই তাঁহার রচনার ভাষা প্রতিঠিত করিয়াছিলেন, তাহার প্রমাণ তাঁহার ব্যবহৃত পদসকল অবৈধসন্ধিবদ্ধ কিংবা সমাসবিড়ম্পিাবত নহে। তিনি জানিতেন যে সংস্কৃত সন্ধিপ্রকরণ ভাষায় উপস্থিতি করিলে, তাবৎ গণদািয়ক না হইয়া বরঞ্চ আক্ষেপের কারণ হয় ;. সমাস সম্পবন্ধে তিনি বলিয়াছেন যে এই রােপ পদ গৌড়ীয় ভাষাতে বাহাল্যমতে ব্যবহারে আইসে না। গাঁহার মতে 'হাতভাঙা’। ‘‘গাছপাকা’ প্রভৃতি পদই বাংলা সমাসের উদাহরণ। তাঁহার পরবতী লেখকেরা যদি এই সত্যটি বিস্মত না হইতেন। তবে তাঁহারা বাংলা সাহিত্যকে সংস্কৃতের জাগ দিয়া পাকাইতে চাহিতেন না এবং হাতভাঙা পরিশ্রম করিয়া দাঁতভাঙা সমাসের সন্টি করিতেন না। তিনি মৌখিক ভাষার সহজ। সাধত্ব গ্রাহ্য করিয়াছিলেন বলিয়া বানান-সমস্যারও অতি সহজ মীমাংসা করিয়া দিয়াছেন। তাঁহার মতে খাঁটি সংস্কৃত শব্দ সংস্কৃত রীতি-আনসারেই লিখিত হওয়া কতব্য এবং তদভব ও দেশীয় শব্দের বানান তাহার উচ্চারণের অন্যরাপ হওয়া কতব্য। অর্থাৎ যে সস্থলে শ্রীতিতে-সমিতিতে বিরোধ উপস্থিত হয়, সে স্থলে সংস্কৃত শব্দ সম্পবন্ধে সন্মতি মান্য এবং বাংলা শব্দ সম্পবন্ধে শ্রতি মান্য। রামমোহন রায় বঙ্গ সাহিত্যের যে সহজ পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন সকলে যদি সেই পথের পথিক হইতেন তাহা হইলে আমাদের কোনোরাপ আক্ষেপের কারণ থাকিত না। কিন্তু তাঁহার অবলম্বিত রীতি যে বঙ্গ সাহিত্যে গ্রাহ্য হয় নাই, তাহার প্রধান কারণ তিনি সংস্কৃত শাস্ত্রের ভাষ্যকারদিগের রচনাপদ্ধতির অনসরণ করিয়াছিলেন। এ গদ্য, আমরা যাহাকে modern prose বলি, তাহা নয়। পদে পদে পবিপক্ষকে প্ৰদক্ষিণ করিয়া অগ্রসর হওয়া আধনিক গদ্যের প্রকৃতি নয়। সতরাং আমাদের দেশে ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রতিদ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই সাহিত্যে পন্ডিত যাগের অবসান হইল এবং ইংরেজি যাগের সন্ত্রপাত হইল। ইংরেজি সাহিত্যের আদশেই আমরা বঙ্গ সাহিত্য রচনা করিতে প্রবত্ত হইলাম। মিলটন না পড়িলে বাঙালি মেঘনাদবধ লিখিত না, সকীট না পড়িলে দগেশনন্দিনী লিখিত না এবং বায়রন না পড়িলে পলাশীর যন্ধ লিখিত না। সংস্কৃত সাহিত্যের প্রভাব হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়া বওগ সাহিত্য ইংরেজি সাহিত্যের একান্ত অধীন হইয়া পড়িল। ফলে বঙ্গ