পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उ ভিভাষণ 6t বাঙালি জাতির হদিয়ে রস আছে মস্তিকে তেজ আছে, তবে যে আমাদের সাধারণ সাহিত্য যথোচিত রস ও শক্তি -বণ্ডিত তাহার জন্য দোষী আমাদের নবশিক্ষা। আমাদের ত্রটি কোথায় এবং কিসের জন্য, সংক্ষেপে তাহার উল্লেখ করিতেছি। মানষের সকল চিন্তার, সকল ভাবের, একটি-না-একটি অবলম্ববন আছে। বস্তুজ্ঞানের উপরেই সাহিত্য প্রতিষ্ঠিত, সে বস্তু মনোজগতের হউক আর বহিজগতেরই হউক। বিদ্যালয়ে আমরা কোনো বিশেষ বস্তুর পরিচয় লাভ করি না, কিন্তু অনেক নাম শিখি। আমরা ইংরেজি ভাষায়, ইংরেজি সাহিত্যে শিক্ষিত হই, অথচ ইংরেজি জীবনের সহিত আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়া দরে থাকুক, তাহার সহিত আমাদের সাক্ষাৎ-পরিচয়ও নাই, কাজেই সে শিক্ষার প্রসাদে আমরা সঞ্চয় করি শােধ কথা। আমরা কংক্রিটের জ্ঞান হারাই এবং তাহার পরিবতে' পাই শােধ অ্যাবসট্রাকশনস। ফলে বলিয়া কোনো পদার্থ জগতে নাই, আছে শািন্ধ ভাষায়। পথিবীতে আছে শািন্ধ যথী জাতী মল্লিকা মালতী প্রভাতি। বণে গন্ধে আকারে একটি অপরটি হইতে বিশিণট। যতক্ষণ পর্যন্ত ইহারা আমাদের ইন্দ্ৰিয়গোচর না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ইহারা আমাদের জ্ঞানের বিষয় হয় না। হথন লাইলাক জ্যাসমিন ভায়োলেট আমাদের নিকট নামমাত্র। এ নাম আমাদের কানের ভিতর দিয়া মরমে প্রবেশ করে না, আমাদের মনে কোনোরাপ পােবসমতি জাগরকে করে না, কাজেই ফালমাত্রেই আমাদের নিকট flower হইয়া উঠে। অর্থাৎ আদৰ্লট বর্ণ, অজ্ঞাত আকার এবং অননভূত গন্ধের একটি নামাশ্রিত সমন্টিমাত্র হইয়া দাঁড়ায়। ফলে, ইংরেজি সাহিত্য হইতে আমরা অধিকাংশ স্থলে কতকগলি জাতিবাচক সম্পবান্ধবাচক এবং ভাববাচক শব্দ সংগ্ৰহ করি। অথচ সে জাতি সে সম্পবিন্ধ সে ভাব যে কাহার, তাহার কোনো খোঁজ নাই। কাজেই আমরা মানষের অস্তিত্ব ভুলিয়া গিয়া মনষ্যত্বের বিচার করিতে বসি। অথচ পথিবীতে মানষ আছে কিন্তু মনীষ্যত্ব নামক জাতিবাচক শব্দের পশ্চাতে কোনো পদাৰ্থ নাই। সকল বিশেষ্যের সকল বিশেষণ বাদ দিয়াই আমরা সব নাম লাভ করি। এই সব নামেরও অবশ্য সকল ভাষাতেই স্থান আছে। কিন্তু এরােপ পদের ব্যবহারের সার্থকতা সেই স্থলেই আছে যে স্থলে মহত্যের মধ্যে আমরা সবৰ্ণনামকে ভাঙাইয়া বিশেষ্যে পরিণত করিতে পারি। যে সব নাম নামমাত্র, তাহা কেবল আদাম্পটাৰ্থ ধবনিমাত্র। আমরা লেখায় না আছে দেহ, না আছে প্রাণ। ইউরোপীয় সাহিত্যও আমরা ত্যাগ করিতে পারিব না, আমরা সদলবলে ইউরোপে গিয়া উপনিবেশও পথাপন করিতে পারিব না। তবে এ রোগের ঔষধ কি ? আমার বিশবাস, আমাদের চতুৰ্ভপাশাব্যস্থ রিয়ালিটির প্রতি মনোযোগ দিলে আমরা এই অ্যাবসট্রাকশনের দাসত্ব হইতে মন্ত হইব। অনভূতিই যে সকল জ্ঞানের মািল, এই সত্যের সম্যক উপলব্ধি না হইলে আমাদের রচিত সাহিত্য অর্থহীন শব্দাড়শবরসার হইতে বাধ্য। আমাদের দেশেও ফলাফল গাছপালা আছে, নরনারী ধনীদারিদ্র আছে। এই-সকল বস্তুবিশেষ এবং ব্যক্তিবিশেষের জ্ঞানের উপরেই যথাৰ্থ বঙ্গ সাহিত্য প্রতিষ্ঠিত হইবে। এই কারণেই আমি সাহিত্যে প্রাদেশিকতার পক্ষপাতী। যাঁহারা চিরজীবন প্রকৃতির সহিত মাখোমখি