পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> 58 ম্পর্শমণি ( *ांझ ) বন্ধু বান্ধবকে চমকিত করিয়া, আত্মীয় স্বজনকে অসন্তুষ্ট করিয়া নবান যৌবনের উচ্ছ,সিত আবেগে দ্বিজেন্দ্রনাথ খুব একটা “রোম্যাটিক” রকমের বিবাহ করিয়া, কল্পিত বিজয়গৰ্ব্বের উন্মাদনায় কিছুকাল আত্মহারা হইয়াছিল । কিন্তু হায়! বিবাহের পর মাস দুই যাইতে না যাইতেই কি এক প্রবল অস্বস্তি এবং অতৃপ্তি-জনিত শূন্তত সে অস্তরে অস্তরে অনুভব করিতে লাগিল । মনোরমার জালাময়ী সুষমার তীব্ৰ-মাদকতা গোধূলি অস্তে রবিকরচছটার হ্যায় ধীরে ধীরে তাঙ্গার চক্ষের উপর শূন্তে মিলাইতেছিল। “নহ মাত,নহ কন্যা, নক্স বধু রূপসী উৰ্ব্বশী!”—পড়িতে পড়িতে দ্বিজেন্দ্রনাথ কতবার মানসনেত্রে সেই আদর্শ সৌন্দৰ্য্য-কল্পনার দিকে লুব্ধনেত্রে চাহিয়া চাহিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়াছে। কিন্তু আজ— ! আজি সেক্ট উৰ্ব্বশীপ্রতিম “আপনাতে আপনি বিকশিত” সৌন্দর্য্যরাশি মনোরমাতে শরীরিণী দেখিয়াও তাঙ্কার মনে আকুল আকাঙ্ক্ষা উথলিয়া উঠিতেছিল—হায়, এই অকুপম সুষমারাশির অন্তরালে যদি এক বিন্দুও হৃদয় থাকিত! আলোকরঞ্জিত বীচিবিক্ষোভিত তটিনীর স্থায় তীব্ৰ-সৌন্দর্য্যে চারিদিক ঝলসিত করিয়া, কলগুঞ্জনগীতে প্রভাতাকাশ উদ্বেলিত করিয়া মনোরমার জীবনস্রোত দ্বিজেন্দ্রনাথের চক্ষের উপর দিয়া খরপ্রবাহে বহিয়া যাইতেছিল—দ্বিজেন্দ্রনাথ তীরে বসিয়া বসিয়া গুরুভার বক্ষে বহিয়া অশ্রুপূর্ণ লোচনে শুধু ভাবিতেছিল, ‘এত যত্নে, এত আদরে, এত প্রাণান্তকর আবেগেও এই মন্থণ চিঙ্কণ আলোকোৎফুল্ল জলরাশির উপর একটু ছায়াপাত করিতেও পারিলাম না!” দ্বিজেন্দ্রনাথ ভৎসনা করিয়া দেখিয়াছে—অভিমান করিয়া দেথিয়াছে—অশ্রুবিসর্জন করিয়া দেথিয়াছে, কিছুতেই সে মনোরমার কৌতুকোজ্জল সদাহাস্যময় নলিনীপ্রতিম বদনমণ্ডলে একটু মলিনতা, একটু ভাষান্তর আনয়ন করিতে পারে নাই । অতি কঠোর আঘাত পাইয়া এতদিনে দ্বিজেন্দ্রনাথ বুঝিয়াছে নিৰ্ব্বিকার আশক্তিহীন দেবীচরিত্রে মানুষের মুখ নাই—তৃপ্তির জন্ত শাস্তির জন্ত স্নেহময়ী সমবেদনাময়ী প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩১৭ { २० ५ छा “, २ग्न थ७ 4,్య?".ళ`్క* সুখদুঃখবিচঞ্চল মানবীর প্রয়োজন। তাহাতে উৰ্ব্বশীর সৌন্দৰ্য্য না থাকিলেও চলিতে পারে, কিন্তু হৃদয় না থাকিলে কিছুতেই চলে না । কিন্তু দ্বিজেন্দ্রনাথ উভয়সঙ্কটে পড়িয়াছিল। মনোরমাকে-“ইন্দুকিরণ--ঝলকিতা”—“ফুলগন্ধপুলকিতা”— “চরণভঙ্গে-ললিতরাগিণী-মুখরিতা”—“নন্দন-ফুলহার” মনোরমাকে-পরিত্যাগ করিবার ক্ষমতাও দ্বিজেন্দ্রনাথের । ছিল না। এই মুকঠিন মৰ্ম্মরপ্রতিমাকে দ্বিজেন্দ্রনাথ যতই আবেগে হৃদয়ে ধারণ করিতে চেষ্টা করিতেছিল, ততই তাহার হৃদয় প্রপীড়িত হইতেছিল, তবু তাহাকে হৃদয় হইতে দূরে নিক্ষেপ করিবার সামর্থ্য তাহার ছিল না । মনোরমার অনুপস্থিতিকালে দ্বিজেন্দ্রনাথ সময়ে সময়ে চিত্তকে দৃঢ় করিবার চেষ্টা করিত,—তাহাকে ভুলিবার জন্ত স্ব কঠিন প্রতিজ্ঞাপাশে হৃদয়কে বাধিবার সংকল্প করিত, কিন্তু সেই "ভূবনমনোমোহিনী” সন্মুখে উপস্থিত হইবামাত্র আবার অজ্ঞাতসারে তাহার আরক্ত চরণতলে আপনার সকল “তপস্যার ফল” বিসর্জন দিয়া “তুণ শূন্ত” করিয়া তাহার পূজা করিত। হাসিতে হাসিতে “বিজয়িনী” ভক্তপ্রদত্ত পুজোপহার লীলাচ্ছলে খও ধুও করিয়া ভূমিতল আচ্ছন্ন করিতে করিতে আপন মনে ভাসিয়া যাইত । দ্বিজেন্দ্রনাথ উপহার দিত, উপহারের পরিণাম দেখিত, তবু আবার উপহার দিত,—কাদিত, রাগ করিত, অভিমান করিত— আবার আবেগভরে যন্ত্রণ সহিবার জন্য ছুটিয়া আসিত । এমনি করিয়া এক বৎসর কাটিয়া গেল । (R) ভাবহীনা মনোরমাকে জগতের সুখদুঃখস্পন্দনের সংস্পর্শে আনিয়া ভাবে বৈচিত্র্যে সমবেদনায় সঞ্জীবিত করিয়া-তুলিবার আশায় দ্বিজেন্দ্রনাথ মনোরমাকে লইয়া দেশভ্রমণে বাহির হইয়াছে । কতদিনের পর ঘুরিতে ঘুরিতে সে মুঙ্গেরে আসিয়া পড়িল । সহর হইতে দুরে নির্জন ভাগীরথীতীরে “পীর পাহাড়ের” উপর সে বাসা লইল । যদি মানবপ্রকৃতির উপর স্বভাব-সৌন্দর্য্যের কোন প্রভাব থাকে তাহা হইলে এখানে সে প্রভাব যথেষ্ট ছিল ।