পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২যু সংখ্যা যতদূর দৃষ্টি যায় ভাগীরথীর স্বনিৰ্ম্মল প্রসন্ন ধারা অবিরাম তর-তর বেগে বহিয়া যাইতেছিল—পাল-তোলা ছোট বড় নৌকাগুলি জলচর পক্ষীর দ্যায় ভাগীরথীবক্ষকে শুভ্র সৌন্দর্ঘ্যে বিখচিত করিতেছিল ; ফুল্ল চন্দ্রালোকে দূরে ক্সাম্রকানন-শোভিত প্রাচীন নগরীকে সুচিত্রিত চিত্রবৎ দেখাইতেছিল এবং ভাগীরথীর তীরে তীরে হরিৎ-মুন্দর শস্তশ্রেণী সুশীতল বায়ুভরে অবিরাম আন্দোলিত হইতেছিল । মনোরমা—বন্ধনহীনা পুলকচঞ্চল মনোরমা—এই উদার প্রকৃতি-সৌন্দর্য্যের সঙ্গে আপনাকে মিশাইয়া দিল । ভাগীরথীর তীর বাহিয়, শুামল শস্তশ্রেণীর বক্ষভেদ করিয়া, আম্রকাননের ঘনচ্ছায়াকে ঝলসিত করিয়া তাহার বিদ্যুৎপ্রতিম রূপজ্যোতি মুহুমুহ সৰ্ব্বত্র বিচ্ছুরিত হইতে লাগিল ! আর দ্বিজেন্দ্রনাথ—হতভাগ্য দ্বিজেন্দ্রনাথ—শৈলশিরে একাকী বসিয়া বসিয়া গঙ্গাবক্ষে নিমজ্জনোমুখ ফুল্পমূৰ্ত্তি ভাস্করের দিকে চাহিয়া চাহিয়া ভাবিত, ‘হায় বুঝি মরণেই এক মাত্র সাত্বনা ’ দ্বিজেন্দ্রনাথ কাহারও সঙ্গে মিশিত না । সে পীর পাহাড়ে আসিয়া অবধি আপনার চিন্তা লইয়াই আপনি মগ্ন ছিল । মনোরমার ও চিত্তে কোন অভাব-বোধ ছিল না— সেও আপনার আনন্দে আপনি মাতোয়ার থাকিত । কাজেই–পীরপাহাড়ে যে দুষ্ট চারি জন অধিবাসী ছিল তাঙ্কাদের কাহারও সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রনাথ বা মনোরমার আলাপ পরিচয় হয় নাই । বেলা দ্বিপ্রহর উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে। মনোরমা তাহার সুদীর্থ প্রাতভ্রমণ-সবেমাত্র শেষ করিয়া সিক্ত বস্ত্রে দর্পণের সম্মুখে দাড়াইয় কেশপ্রসাধনে মনোনিবেশ করিয়াছে, এমন সময়ে এক অপরিচিত যুবতী তাহার শিশুপুত্রকে ক্রোড়ে লইয়া মনোরমার কক্ষে ধীরে ধীরে প্রবেশ করিল। মনোরমা তিমুখে কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টিতে যুবতীর দিকে চাহিল। যুবতী কছিল “এই পাহাড়ের নীচেই আমাদের বাসা । এখানে আমরাই একঘর বাঙালী আছি । আপনারা এসেছেন জেনে আলাপ করতে এলাম।” মনোরম হাসিয়া কছিল "বজুন”। স্পর্শমণি Ꮌ Ꮍ ☾ যুবতী যতক্ষণ মনোরমার সঙ্গে কথা কহিতেছিল, ততক্ষণ তাহার শিশুপুত্র একদৃষ্টে মনোরমার মুখ পানে চাহিয়াছিল। কক্ষাস্তর হইতে বস্ত্র পরিবর্তন করিয়া আসিয়া মনোরম থোকার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিল পরম সুন্দর শিশু ! মনোরম আদর করিয়া থোকার দিকে ছাত বাড়াইল । খোকা উল্লাসে মনোরমার কোলে বাপাহঁয়! পড়িল । মৃদ্ধ হাসিয়া খোকার মা বলিল “এক মুহূর্তেই আলাপ হয়ে গেল যে !” মনোরম খোকাকে কোলে লইয়া অনেকক্ষণ একদৃষ্টে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। তার পর তাহাকে বক্ষের উপর টানিয়া লই চুম্বনে চুম্বনে তাহাকে আচ্ছন্ন করিয়া দিল। চিরতুষারের দেশে প্রভাতের কনক-রশ্মি এই প্রথম আসিয়া পৌছিল। সেইদিন হইতে মনোরমার উচ্চ খল অবাধগতি যেন কিছু সংযত হইয়া আসিল । থোকাকে কেন্দ্র করিয়া তাহার ভ্রমণবৃত্তের ব্যাসাৰ্দ্ধ দিনের পর দিন অল্প অল্প কমিয়া আসিতেছিল। (9) গৃহ হইতে কিছু দূরে শৈলাসনে বসিয়া দ্বিজেন্দ্রনাথ আন্দোলিত ভাগীরথীবক্ষে প্রভাতারুণের বিচিত্র বর্ণচ্ছটা চক্ষু ভরিয়া দেখিতেছিল, এমন সময়ে মনোরম আসিয়া কহিল “আজ দুদিন থেকে স্বকুমারী ( থোকার মা ) এ বাড়ীতে আসেনি, তাদের কি হল একবার খবর নিয়ে এসন গো !” দ্বিজেন্দ্রনাথ বিস্মিত চক্ষে দেখিলেন মনোরমার চিরোজ্জল স্বচ্ছমুথে দুশ্চিন্তার ঈষৎ কৃষ্ণাভ পড়িয়াছে। স্নান হাসি হাসিয়া দ্বিজেন্দ্র বলিলেন “তবু ভাল ! তুমি এতদিনে মানুষের জন্তে ভাবতে শিখেছ। মুকুমারী আমার চেয়ে ভাগ্যবতী দেখছি।” “যাও যাও দেরি কোরোনা”—বলিতে বলিতে সুন্দরী বায়ুতাড়িত মেঘথণ্ডের মত কোথায় ভাসিয়া গেল । দ্বিজেন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে মুকুমারীর বাড়ীর দিকে চলিলেন। সংবাদ" বাহা শুনিলেন, তাহাতে প্রাণ র্তাহার শুকাইয়া গেল! কৃষ্ণনাথ বাবু আজ ছুই দিন হইল সহরে গিয়াছিলেন— সহরে থাকিতে থাকিতেই কম্প দিয়া জর আসে—গাড়ী