পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] তক্তাপোষ ও একটি করিয়া বই রাখিবার তাকি। তক্তাপোষে বিছানা পত্র প্রভৃতি বিলাসিতার উপকরণ যৎসামান্ত । তাহাতেই সকলে সস্তুষ্ট । সকলের মুথেষ্ট আরামের চিহ্ন, কাতাকেও বিমর্ষ দেখি নাই । ছুটীর সময় ছেলেরা কেহ ঘরে, কে গাছতলায়, কেহ মাঠে গিয়া খেলা বা আবাম করে । সকলেই থালি পায়ে থাকে । অধ্যয়নের সময় সকলেই এক একখানি কম্বলের আসন লষ্টয়া গাছতলায় বসে—তাহাই এখানকার ক্লাস । দেখিলে অতীত কালের গুরু শিষ্যের একটি শাস্ত ছবি মনে আসে । চালাঘরগুলি কেবল রাত্রিবাসের জন্ত । চালাঘর ছাড়া দুইখানি পাকাবাড়ী আছে । তাহার একটিতে পুৰ্ব্বে মহর্ষি থাকিতেন, এখন তাঙ্গরই উপযুক্ত সন্তান আমাদের রবীন্দ্রনাথ থাকেন। অপর খানিতে ছাত্রাবাস, লাইব্রেরী ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রালয় । ইহা ছাড়া এখানে আর একটি দেখিবার জিনিস আছে । তাঙ্গকে সেখানকার লোকেরা “শিশবাঙ্গালা” বলে । এটি মহর্ষি-প্রতিষ্ঠিত উপাসনা-মন্দির । একটি চল—আগা গোড়া কঁাচের—কেবল মেজেট মৰ্ম্মর পাথরের । এখানে সাপ্তাহিক উপাসনা ও ধৰ্ম্মোপদেশ দেওয়া হইয়া থাকে । এতগুলি বাড়ী এবং তাহাতে অনুন ১৫০ জন লোক থাকিলেও সমস্ত স্থানটী বনের মত শান্তিময় নির্জন সাত্বিকভাবে পরিপূর্ণ বোধ হয়। যে প্রান্তরের মধ্যে স্থানটী অবস্থিত--তাহা দেখিলেই বোধ হইবে অতিশয় স্বাস্থ্যকর। কারণ প্রান্তরটা উচ্চভূমি। ষ্টেসন হইতে প্রায় এক ক্রোশ দূরে। যাইবার সময় বেশ বুঝা যায় ক্রমশঃ উচুতে উঠিতেছি। জল দাড়ায় না। আর মাটীতে বালির অংশ খুব বেশী—সে জন্য কাদা হয় না, জল পড়িবামাত্র শুখাইয়া যায়। বৈদ্যনাথ, দেওঘর, মধুপুর প্রভৃতি স্থানের মাটী যেমন, ঠিক তেমনই। আমার বোধ হয় স্বাস্থ্য সম্বন্ধেও সমান । র্যাহারা যাইতে চাচেন তাহীদের অবগতির জন্ত বলিয়। রাখি যে বোলপুর ষ্টেসন হইতে নাস্তিনিকেতনে যাইবার একটা মুন্দর পাকা রাস্ত আছে। গরুর গাড়ীই একমাত্র যান । এই ত গেল বিদ্যালয় । এখন সেখানকার পড়াশুনার কথা কিছু বলা আবশুক। এ বিষয়ে খুঁটিনাটি খবর দিতে আমি অপারগ। কারণ আমি সেখানে বৈকালে কএক বোলপুর ব্রহ্মবিদ্যালয় > ミ* ঘণ্টা মাত্র ছিলাম। তবে তাঙ্গারই মধ্যে যেটুকু দেখিয়াছি ও তাহা হইতে যেটুকু অম্লমান করিয়াছি তাহাঙ্গ এপানে লিখিতেছি । বিদ্যালয়ের ছাত্র-সংখ্যা এখন শতাধিক । তাহাদের লইয়া ক একটা শ্রেণীবিভাগ করা কষ্টয়াছে । তাঙ্গতে গবৰ্ণমেণ্টের শিক্ষণবিভাগের কড়াকড়ি নিয়ম খাটান হয় নাই। কারণ বিদ্যালয়টি শিক্ষাবিভাগের সম্পূর্ণ বান্তিরে। এ জন্ত শ্রেণী-বিভাগে নিয়মানুবর্তিতা অপেক্ষা উপযোগিতার প্রতিই বিশেষ দৃষ্টি রাখা ইষ্টয়াছে। শিক্ষার বিষয় বাঙ্গলা, সংস্কৃত, ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্য, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস ও বিজ্ঞান। পাঠ্য পুস্তক নিৰ্ব্বাচনেও শিক্ষাবিভাগের ছাত নাচ । কেবল সৰ্ব্বোচ্চ শ্রেণীদ্বয়ের যে সকল ছাত্র কলিকাতা ইউনিভাসিটির মাটিকুলেসন পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক-তাঙ্গদিগকেই নির্দিষ্ট পাঠ্য পুস্তক পড়িতে হয়। অন্তান্ত শ্রেণীতে পাঠ্য পুস্তকের আড়ম্বর নাই। এমন কি ছাত্রদের নিকট পাঠা পুস্তকের স্বল্পতা দেখিয়া এবং সে জন্ত মনে মনে তাহাদের আরাম কল্পনা করিয়া আনন্দ হইল । যে কয়খানি পাঠ্য পুস্তক ব্যবহৃত হয় তাঙ্গদের মধ্যে অধিকাংশগুলিই এখানকার ছাত্রদের উপযোগী করিয়া লিখিত ও মুদ্রিত হষ্টয়াছে । সেগুলি দেখিলেক্ট এখানকার শিক্ষাপ্রণালী কতকটা অকুমান করা যায় । তাহাতে ছেলেরা “পড়ামুখস্থ” না করিয়া স্বাগতে পাঠ্য বিষয় অনায়াসে অভ্যাস করিতে পারে তাহার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হইয়াছে। কাজেই যে কয়থানি বই লইয়া ছেলের নাড়া চাড়া করে, সেগুলিকে বোঝা মনে করে না । আবার পাঠের সময় ও বিষয়কে শ্রেণী অনুসারে এমন ভাগ করা হঠয়াছে যে ছেলেরা মনেই করে না যে তাঙ্গদের উপর একটা চাপ দেওয়া হইয়াছে।--দেখিলে বোধ হয় তাহারা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ( উচ্ছ জ্বলতা নহে ) আরামের সহিত লেখাপড়া শিখিতেছে । আজকাল শিক্ষানীতির প্রধান উপদেশ এই যে এমন ভাবে শিক্ষা দিতে হইবে যাচাতে ছেলেদের মনে কিছুতেই বিদ্যালয়-ভীতি না জন্মায়। কিন্তু নীতিজ্ঞ মনীষিগণ বিদ্যালয় পরিচালনার যে সকল নিয়ম বিধিবদ্ধ করিয়াছেম তাঙ্গাতে বালকদের মনে বিদ্যালয় প্রীতির যে বিশেষ সঞ্চার হইতেছে এমন ত বোধ হয় না । নাকে মুখে ভাত গুজিয়া বইয়ের বোঝা বগলে করিয়া ভাড়াতাড়ি