পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] উঠিবে। তারপর কিছুক্ষণ ব্যায়াম করিবে—যাহার যেরূপ অভিরুচি কোনও বাধাবাধি মাই। তারপর হাত মুখ ধুইয়া কাপড় ছাড়িয়া ভগবানের উপাসনা । তাহাও যাহার যেখানে যে ভাবে ইচ্ছ। কিন্তু করা চাই। তারপর জলযোগ। তদন্তে দুষ্ট ঘণ্টা গাছতলায় অধ্যাপকের কাছে অধ্যয়ন । তারপর ছুটী—স্নান ও আঙ্গর । আহারান্তে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম। সে সময় ছাত্রগণ ইচ্ছা করিলে গল্প করিতে পারে, বেড়াইতে পারে বা পড়িতেও পারে । অধ্যাপক ছেলেদের সঙ্গেই থাকেন। কোনওরূপ কঠোর শাসন নাই অথচ উচ্ছ জ্বলতাও নাই। তারপর বৈকালে দুই তিন ঘণ্টা আবার গাছতলায় বসিয়া অধ্যাপকের কাছে পড়া শুন । তারপর ছুটী, জলযোগ ও মাঠে গিয়া নানা রকমের খেলা। সন্ধ্যাকালে আবার উপাসনা । তারপর কেত হারমোনিয়ম বাজাইয়া গান করে—কেত গল্প করে— কেহ পড়ে। রাত্রি আটটার সময় আহার । তারপর অধ্যাপকের সঙ্গে ছোট ছোট ছেলেরা ভাল ভাল বিষয়ে গল্প করিতে করিতে ঘুমাইয় পড়ে। যাচার উচ্চ শ্রেণীতে অধ্যয়ন করে তাহার। ইচ্ছা করিলে কিছুক্ষণ পড়িতে পারে । কি মুথের জীবন ! মনে হয় আবার বালক হইয়া ব্ৰহ্মবিদ্যালয়ে গিয়া বাস করি । কেবল উচ্চ দুই শ্রেণীর যে সকল ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিবে তাহাদিগকেই দিনে ও রাত্রে একটু অতিরিক্ত পড়িতে হয় । হা বিশ্ববিদ্যালয়! তোমার নিৰ্ম্মমত এখানে আসিলে সুস্পষ্ট দেখিতে পাইবে। যাহারা তাঙ্গাদের ছেলেদের বাড়ীতে স্কুলের পড়া মুখস্থ করিতে দেখিয়া আসিতেছেন তাহার। নিশ্চয়ই মনে করিতেছেন “এই পড়াশুনা— ইহাতে লেখাপড়া কি হইবে ?” তাহাদের দোষ নাই। যাহাতে অভ্যস্ত তাঙ্গা ছাড়া ষে আর কিছু ভাল থাকিতে পারে এ ধারণা আমাদের মনে সহজে আসে না । বিদ্যালয়ে যত সময় পড়ে অন্ততঃ তত সময় বাড়ীতে পড়া মুখস্থ করাই দেখিয়া আসিতেছি। কাজেই সেইটিই বিদ্যাশিক্ষার ঠিক পথ এই ধারণ মনে জন্মিয়াছে। তাহার ব্যতিক্রম হটলেই ভাবি ছেলেটি কিছুই করেন—আর তর্জনগর্জন করিয়া তাহার সংশোধনের চেষ্টা করি। একবারও ভাবিয়া দেখি না যে বুদ্ধির বোলপুর ব্রহ্মবিদ্যালয় Sశిషా উৎকর্ষই পুস্তক পাঠের উদ্দেশু এবং তাহ অধ্যাপকের শিক্ষাপ্রণালী ও বালকের মনঃসংযোগ ও ধারণাশক্তির উপর নির্ভর করে । শিক্ষানীতিতে সুপণ্ডিত ও শিক্ষাপ্রণালীর নূতন পথপ্রদর্শক একজন জৰ্ম্মান লেখক লিখিয়াছেন যে বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষ শিক্ষাপ্রণালীর গুণে একখানি মাত্র পুস্তক পাঠ হইতেই হইতে পারে। র্তাঙ্গার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ইহার পরীক্ষাও হইয়া গিয়াছে। পাঠ্য বিষয় যদি শিক্ষার গুণে বিদ্যার্থীর চিত্তাকর্ষক হয়—তাহা হইলে অতি অল্প সময়ে অল্প পাঠেষ্ট বিদ্যালাভ হইতে পারে। চাই উপযুক্ত শিক্ষক। আ ম আশা করি ব্রহ্মবিদ্যালয়ে সেরূপ শিক্ষকের অভাব নাই । কারণ সেখানকার প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি ও বিশেষভাবে লিখিত পুস্তকের অাদর্শে উপযুক্ত শিক্ষকও প্রস্তুত হইতেছে এরূপ অনুমান হয় । আমি যে কয় ঘণ্ট ব্রহ্মবিদ্যালয়ে ছিলাম তাহার অধিকাংশ সময় সেখানকার ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করিয়া বুঝিয়াছি যে তাহদের বুদ্ধির উৎকর্ষ অন্তান্ত বিদ্যালয়ের সমবয়স্ক ছাত্রদের অপেক্ষ কিছুমাত্র হীন নহে। ইহাও শুনিতে পাই যে ব্রহ্মবিদ্যালয় হইতে যে সকল ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেয় তাহদের অধিকাংশই ভাল ভাবে উত্তীণ হইয়া থাকে। আমাদের স্কুল হইতে ব্রহ্মবিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রাপ্ত একটি ছাত্র এবারে এক বৎসর মাত্র অধ্যয়ন করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সৰ্ব্বোচ্চ স্থান পাইয়াছে । ইহা হইতে অনুমান হয় যে সেখানে সহজে ও বিনা আড়ম্বরে যেটুকু শিক্ষা হইয়া থাকে তাহার ফল উপেক্ষনীয় নছে। আজ কাল বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে Discipline (যাহার অর্থ আমি বুঝি শাসন) এর কিছু ধুমধাম পড়িয়াছে এবং ইহাকে অক্ষুণ্ণ রাখিতে মুদীর্ঘ নিয়মাবলীও প্রস্তুত হইতেছে। ব্রহ্মবিদ্যালয়ে Discipline বা তৎসহচর নিয়মাবলী কোথাও দেখিলাম না । এখানে সকল বিষয়েই ছেলেদের একটু স্বাধীনতা দেখিতে পাইলাম, অথচ কোথাও উচ্ছঙ্খলতা নাই। কোনওরূপ নিয়মের বাধাবাধি বা শাসনের কড়াকড়ি দেখিলাম না । সেখানকার গাছ পাল৷ বাতাসের মত সকলেই যেন মুক্ত, অথচ সকলেই নিজের নিজের কাজ সহজ ভাবে করিয়া যাইতেছে। কাহারও