পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

×50 উপর কোনও চাপ নাই । এই জন্যই বোধ হয় ছেলেরা এখানে আসিয়া এত খুলী থাকে—এমন কি শুনিলাম ছুটী তষ্টলেও বাড়ী যাইতে চায় না । আবার বাড়ী গিয়াও আসিবার জন্ত উৎসুক কষ্টয়া থাকে । ইহা অপেক্ষা বিদ্যালয়ের আর কি গৌরব হঠতে পারে । আমি যে দিন সেখানে গিয়াছিলাম সে দিন সন্ধ্যাকালে উপাসনামন্দিরে ছোট ছোট ছেলেদের রবীন্দ্র বাবু ধৰ্ম্মোপদেশ দিলেন। এরূপ ধৰ্ম্মোপদেশ প্রতি সপ্তাহে একদিন করিয়া বয়স্ক ছেলেদের ও একদিন করিয়া ছোট ছেলেদের দেওয়া হইয়া থাকে। যখন ঘণ্টা বাজিল অমনি চারিদিক হইতে ছেলেদের ধীর শাস্ত ভাবে মন্দিরের দিকে আসিতে দেখিলাম। কাহারও মুখে কথা নাই বা শরীরে চাঞ্চল্য নাই। যেন সেদিনকার উপদেশের জন্ত তাহারা নিজেকে প্রস্তুত করিয়া বসিয়াছিল । একে একে সকলেই মন্দিরের ভিতবে চারিদিকে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দাড়াইল । কাকাকেও তাঙ্গদের স্থান নির্দেশ বা শ্রেণীনিবেশ করিতে হইল না। রবীন্দ্র বাবু যতক্ষণ দাড়াইয়া উপনিষদের শ্লোক উচ্চারণ করিয়া ভগবানের উপাসনা করিলেন সকলেষ্ট করযোড়ে দাড়াইয়া রহিল এবং উপাসনা শেষ হইলে ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া আসনে বসিল । তারপর রবীন্দ্র বাবু অন্ততঃ আধ ঘণ্টা কাল তাঙ্গদগকে উপদেশ দিলেন । সকলেই ধীরভাবে নিবিষ্ট চিত্তে শুনিতে লাগিল। আমি তাহাদের মধ্যে যাহারা খুব ছোট তাহাদের কাছেই বসিয়াছিলাম। তাহাদের চঞ্চলতাশূন্ত শাস্ত ভাব দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইলাম। কারণ সেরূপ বয়সের ছেলেদের একস্থানে স্থির রাখা বড়ই কঠিন । এ কঠিন সংযম তাঙ্গদের কে শিখাইল ! ইহার জন্ত কোনও কঠোর শাসন ত দেখিলাম না । উপদেশ শেষ হইলে সকলকেই ভক্তিভরে রবীন্দ্র বাবুর চরণে প্ৰণাম করিতে দেখিয়া আমার অতিশয় আনন্দ হইল। কারণ আজকাল ছেলেদের "গুরুজনের’ প্রতি ভক্তি যেন কম হইয়া গিয়াছে। প্রণাম করা অনেক স্থলে হীনতা বলিয়া মনে করা হয় । অথচ ভগবৎভক্তি বিকাশের ইহাই সহজ পথ । আমরা গুরুকে ভক্তি করিতে করিতেই যথার্থ ভাবে ভগবানকে ভক্তি করিতে শিখি। যেখানে শ্রদ্ধার পাত্র প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩১৭ { ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড মানুষের প্রতি ভক্তি নাই সেখানে ভগবৎভক্তি অসার কথা মাত্র । রাত্রে একত্র আহার কালেও কোনও বিশৃঙ্খলতা দেখিলাম না। অনুনি একশত বালক একত্র আহার করিতে বসিল । সকলেই সংযতভাবে আপন আপন স্থানে বসিয়া যেন একটি কর্তব্য কাৰ্য্য করিয়া গেল । অধ্যাপকগণ সঙ্গেই আঙ্গর করিলেন । র্তাহীদের উপস্থিতি তাহাদিগকে সংযত রাখিলেও ছেলেদের কাহারও মুখে “মাষ্টার-ভীতি”র চিহ্ন দেখিলাম না । মাষ্টার মহাশয় তাহাদের সঙ্গে সৰ্ব্বদাই আছেন—“কিবা শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ।” তাহাদের সকল কাজে শুধু চালক নহেন— সার্থীও বটে । এজন্ত মাষ্টার মহাশয়কে তাহারা ভালবাসে, ভয় করে না। আমার বোধ হয় এই ভালবাসার জন্তই তাহাদের উপদেশ ছেলেদের মনে এত গভীর ভাবে বসিয়া তাহাদিগকে সংযত করিয়াছে । আজকাল শিক্ষা নীতিজ্ঞগণ অধ্যাপক ও ছাত্রদের একত্র অবস্থান ও ঘনিষ্ঠ ভাবে মিলন খুব প্রয়োজনীয় বলিয়া ঘোষণা করিতেছেন । তাহার ফলে অনেক স্থানে এরূপ ভাবে মিলনের বিশেষ আয়োজনও হইতেছে । কিন্তু অধিকাংশ স্থলেই দেখিতে পাই যাহার জন্ত মিলন আবশুক ঠিক তাহা হইতেছে না । কারণ– প্রথমতঃ মিলন অল্পকালস্থায়ী । তাহার মধ্যে গুরুশিষ্যের যে ব্যবধানটুকু অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছে সেটুকু হয় থাকিয়াই যায়—নতুবা একেবারে ভাঙ্গিয়া গিয়া গুরুশিষ্যের আর কোনও প্রভেদ থাকে না । কাজেই গুরুতে অনুকরণীয় যে কিছু আছে তাঙ্গ মনেই আসে না । যেখানে গুরুতে মানুষ ও দেবতার সমাবেশ দেখিবার সুযোগ হইবে সেখানেই শিষ্যের সহানুভূতি ও তাহার ফলে উন্নতি হইবে । কিন্তু ইহার জন্ত একত্র অবস্থান একান্ত প্রয়োজন । “গুরু আমারই মত, অথচ কত মহৎ কত বিদ্বান। আমিও গুরুর মত হইতে পারি এবং হইব।” ইহাই গুরু-শিষ্য মিলনের মূলমন্ত্র। ব্রহ্মবিদ্যালয়ে বিশেষ ভাবে দেখিবার আরও একটি বিষয় আছে। এখানে ছেলেরা সকলেই খালি পায়ে থাকে। তাহাদের পরিচ্ছদ বা বিলাসিতার উপকরণের কোনও আড়ম্বর নাই । অতি সাদাসিধে ধরণে যথার্থ ব্ৰহ্মচারীর