পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য়ু সংখ্যা মতই তাহার থাকে । মুতরাং পোষাক পরিচ্ছদ যে “ভদ্রতা”র একটি অত্যাবগুকীয় জিনিস এ ভুল ধারণা তাহাদের হক্টতেই পারে না । তাছাড়া শারীরিক পরিশ্রম, যে ভাবেরক্ট হউক, ভদ্রতার হানিকর নয় বরং তাহার গৌরব-এই অতি প্রয়োজনীয় ধারণাটি ধীরে ধীরে তাহাদের মনে বদ্ধমূল হইতেছে । ছেলেদের নিজের হাতে নিজের স্থানটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখিতে হয়, কাপড় কাচিতে হয়, মাটি কাটিয়া রাস্ত প্রস্তুত করিতে হয়, বাগান করিতে হয়—আরও নানাবিধ প্রয়োজনীয় কাৰ্য্য করিতে হয় । তাহারাও সহজে ও গৌরবের সহিত ঐ সকল কাৰ্য্য করিয়া থাকে । তাহাতে যে তাহীদের ভবিষ্যতের কৰ্ম্মজীবনের জন্য শিক্ষা হইতেছে শুধু তাঙ্গষ্ট নহে। যেখানে থাকে সেটি তাঙ্কাদের নিজের জিনিস বলিয়া একটি মমতাও মনোমধ্যে অজ্ঞাতসারে জাগিয়া উঠিতেছে । ইহা হইতে আশা করা যায় ইহারাই ভবিষ্যতে ব্ৰহ্মবিদ্যালয়টিকে আপনার জিনিস বলিয়া তাহার জন্ত জীবন উৎসর্গ করিবে । এই ত গেল বিদ্যালয়ের কথা। এখন আরও দুই চারিটি কথা না লিখিয়া আমি আমার বক্তব্য শেষ করিতে পারিতেছি না। বিদ্যালয়টি যে আমাদের অবস্থা ও আমাদের জাতিগত ধৰ্ম্মের সম্পূর্ণ উপযোগী সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। আজকাল জাতীয় ভাবে আমাদের বালকদের শিক্ষা দিবার জন্ত আলোচনা ও প্রযত্ন দেখা যাইতেছে। যদি আমাদের ছেলেদের আমাদেরই মত করিয়া শিক্ষা দিবার প্রয়োজন বুঝিয়া থাকি, তবে এই ব্রহ্মবিদ্যালয়কে আদর্শ করিয়া স্থানে স্থানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবগুক হইয়াছে। কারণ একটি মাত্র বিদ্যালয় দিয়া আমাদের অভাব পূরণ হইবে না। আমাদের জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্তৃপক্ষগণের এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ ও চিন্তা করিবার প্রয়োজন হইয়াছে। র্তাহাদের অভিমতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলি যদি শিক্ষাবিভাগ-পরিচালিত বিদ্যালয়ের আদর্শে ই গঠিত হয় তাহ হইলে আর জাতীয়তা কোথায় রহিল। আমার মনে হয় ব্রহ্মবিদ্যালয়ই যথার্থভাবে আমাদের জাতীয় বিদ্যালয় । আমরা কোনও ভাল জিনিস পাইলে একটা আশঙ্কা মনে আপনিই আসে পাছে ইহাকে হারাই। ব্ৰহ্মবিদ্যালয়ের মত একটি আদর্শ শিক্ষার স্থান দেখিয়া বোলপুর ব্রহ্মবিদ্যালয় >S)〉 এরূপ আশঙ্কা মনে আসাই স্বাভাবিক । রবীন্দ্র বাবু যতদিন জীবিত থাকিবেন ততদিন তিনি “ধন মন তন” দিয়া বিদ্যালয়টি রক্ষা করিবেন সে বিষয়ে সন্দেহ নাই । কিন্তু তাহার অবর্তমানে যদি আমরা এরূপ একটি অমূল্য জিনিস হারাই তাহ আমাদের অতিশয় দুর্ভাগ্যের কথা । যদিও আশা করা যায় যে র্তাহার সহযোগী অধ্যাপকগণ ও বিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত যুবকগণ র্তাহার দেবচরিত্রের স্মৃতিতে ও দেশের কল্যাণ কামনায় উৎসাহিত হইয়া বিদ্যালয়টি রক্ষা করিতে চেষ্টা করিবেন । তবুও বাহির হইতে সাহায্যের যে প্রয়োজন হইবে না এ কথা বলা যায় না । সাহায্য পাইলে বিদ্যালয়ের কার্য্য আর ও সুচারুরূপে চলিতে পারিবে। এজন্য শিক্ষণবিভাগে যাহার কৰ্ম্ম করিয়া অবসর গ্রহণ করিয়াছেন, তাহদের সহযোগিতার বড়ই প্রয়োজন। তাহারা হয় ত অবসর লইয়া শান্তিতে জীবন কাটাইতে গিয়া অলস জীবন ভারবহু মনে করিবেন। শান্তিনিকেতনের চতুর্দিকে বহুদূরবিস্তৃত প্রান্তর পড়িয়া রঙ্কিয়াছে । তাঙ্কাদের মধ্যে কেহ কেহ সেখানে গিয়া কুটার নিৰ্ম্মাণ করিয়া শাস্তিতে থাকিতে পারেন এবং ব্ৰহ্মবিদ্যালয়ে কাৰ্য্য করিয়া অলস জীবনের ভারও লঘু করিতে পারেন। তাহদের পক্ষে এরূপ লোভনীয় জীবন আর দেখি না। র্তাহীদের মধ্যে যাহারা সাহিতা, বিজ্ঞান, দর্শন প্রভৃতির অধ্যয়ন ও তত্ত্বানুসন্ধানে জীবনের শেষভাগ অতিবাহিত করিতে চাহেন—কিম্বা ধৰ্ম্মানুশীলনেই জীবনযাপন করিতে চাহেন তাহীদের পক্ষেও এই স্বাস্থ্যকর শান্তিময় স্থানটি বড় উপযুক্ত। ছয় ত তাহাদের দ্বারা বিদ্যালয়ের জ্ঞানলিপ্ত, ছাত্রগণের উচ্চশিক্ষার অভাব দূর হইবে— এবং ধৰ্ম্মজিজ্ঞামুদিগের জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করিবে। ইহা অপেক্ষা মহৎ কাৰ্য্য আর কি হইতে পারে ! শ্ৰীফণিভূষণ অধিকারী, অধ্যাপক, সেন্টাল হিন্দুকলেজ, বারাণসী। বরং এরূপ