পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্য। ] লাগিল লঞ্চখানি এইবার ডুবিয়া যাইবে । মনে হইতে লাগিল এরূপ ভয়সস্কুল অবস্থায় পড়িব জানিলে পূৰ্ব্বেষ্ট নিরস্ত কষ্টতাম । এইরূপে কয়েক মাইল আসিয় বড় জাহাজে উঠিতে হইবে । একে সমুদ্রের চঞ্চলতা, তাহাতে বড় জাহাজের গায়ে লাগিয়া ঢেউগুলি লঞ্চখানিকে ডুবাইবার যোগাড় করতেছে। লঞ্চ হইতে জাহাঞ্জে উঠিতে হইবে । লঞ্চ প্রায় সমুদ্রের সচিত সমতলে, আর জাহাজ অতি উচ্চ । কিরূপে পার হইব সে এক মহা সমস্ত চষ্টয় দাড়াইল । শেষে এক অভিনব উপায়ে সমস্তার সমাধান হইয়া গেল । একটি বড় ঢেউএ চড়িয়া লঞ্চখানি যেমন জাহাজের ডেকের প্রায় সমান উচুতে উঠিল, তখনই উভয়দিকের লোকের সাহায্যে মুহূৰ্ত্ত মধ্যে জাঙ্গজে পার হইয়৷ গেলাম । প্রাণের আশঙ্কায় জিনিসপত্রের খোজ লইবার অবসর পাই নাই, এইবার সে কথা মনে পড়িল। ভাবিলাম নিজের রক্ষা পাইয়াছি ইহাই যথেষ্ট, জিনিসের আশা করা বৃথা। কিন্তু জাহাজের কাপ্তেনের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম ও দেখিলাম জিনিসপত্র সব জাহাজে পৌছিয়াছে, কাহারও ছাতাগাছটি পর্য্যন্ত গোলমাল হয় নাই । এই সুবৃন্দোবস্ত দেখিয়া বিস্মিত হইলাম । তুতিকোরিন হইতে বেলা ৩ টার সময় রওনা হইয়াছিলাম, পরদিন প্রাতঃকাল ৬টার সময় লঙ্কায় পৌছিলাম । জাহাজ অতি গভীর জল দিয়া চলে, রাত্রে অন্ধকারে সমুদ্রের ভীষণ মূৰ্ত্তি দেখিতে না পাইলেও জাহাজের দোলানিতেই ভয়ে গা কঁাপিতে লাগিল । বনারের নিকটে জল অনেকটা স্থির। মাটিতে নামিয়া হাফ ছাড়িয়া বাচিলাম। এইখানে ভারত হইতে লঙ্কার পথের কথা একটু বলিয়া লই। আমরা যে দিক দিয়া আসিলাম তাহ ভিন্ন আর একটি পথ আছে—তাহাতে রামেশ্বর হইতে Coast Line ষ্টিমারে আসতে হয়। এই ষ্টিমার সপ্তাহে একদিন পাওয়া যায় । এ পথে তরঙ্গের ভয় নাই—জলের গভীরতাও খুব কম। রামেশ্বর ও পাম্বান দ্বীপ হইতে লঙ্কা পৰ্য্যন্ত পথে ৫২টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে। জলের গভীরতা স্থানে স্থানে ৩৪ ফুট মাত্র। এই সকল দ্বীপে লোকালয় খুব কম, বিপদের উপর বিপদ । সে স্থলে কতকটা নি খণপদ । এতক্ষণ লঙ্কায় বৌদ্ধ বিহার ዕ? মাঝে মাঝে দুই চারিটি মুসলমানের বাড়ী আছে মাত্র । এখানকার কলা ও নারিকেল প্রসিদ্ধ। পাম্বান ও লঙ্কার মধ্যে মান্নার দ্বীপ । এই দ্বীপটি বড়, অনেক ঘরবাড়ী আছে । এইখানে জলের গভীরতা ৬৭ ফুট মাত্র হইলেও ষ্টিমারের জন্য যন্ত্রদ্বারা খুড়িয় ১• ফুট গভীর একটি পথ করা হইয়াছে । এই পথের চিহ্ন রাখিলার জন্ত জলের মধ্যে দুই সারি তালগাছ পুভিয়া দেওয়া হইয়াছে। বলিতে গেলে লঙ্কা ভারতেরই এক অংশ । এই দ্বীপসকল কোন সময়ে পরস্পর সংযুক্ত ছিল এরূপ বিশ্বাস করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। রামায়ণে বর্ণিত রামচন্দ্রের সেতু এই দ্বীপশ্রেণীকেই বলা যায় । আর বানররাও কল্পিত জীব নয় । দাক্ষিণাত্যের অনেক লোক, এমনকি বড় বড় রাজা জমিদার পর্য্যস্ত, আপনাদিগকে হনুমানের বংশধর বলিয়া পরিচয় দেন । রামেশ্বরের ষ্টিমার কোম্পানীর এজেণ্ট মহাশয়ই নিজেকে রাবণের বংশধর বলিয়া পরিচয় দিলেন । ইহাদের মতে রাখণ দাক্ষিণাত্যের তামিল বংশীয় রাজা ছিলেন। পরে লঙ্কা অধিকার করিয়া তথায় বাস করেন এবং পর ও দূষণকে দাক্ষিণাত্যে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। আধুনিক সিংহলে পূৰ্ব্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ এই চারি বিভাগ। ইঙ্গর মধ্যে দক্ষিণবিভাগের রাজধানী গল নাকি রাবণের শীতাবাস ছিল । গল অতি সুন্দর স্থান, পরবর্তীকালে পর্তুগীজ ও দিনেমারদের সময়েও ইঙ্গ রাজধানী ছিল। উত্তর বিভাগের রাজধানী অনুরাধপুর। পশ্চিমে কলম্বো। পূৰ্ব্ববিভাগের নিউরেলিয়া পৰ্ব্বতটি রাবণের গ্রীষ্মাবাস বলিয়া কথিত । ইহা বৰ্ত্তমানকালে লঙ্কার শাসনকর্তার গ্রীষ্মাবাস । আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে রত্নপুর ও নিউরেলিয়ার সন্নিকটবৰ্ত্তী স্থানে মৃত্তিকায় কয়লার ংশ অধিক, লঙ্কার অপর কোনও স্থলে এরূপ নহে । প্রবাদ এই যে ইহা হনুমানের লঙ্কাদাহেরই সাক্ষ্যমাত্র । গলে রাবণের রাজধানীর নিকটে সীতাবক নামে এক নিবিড় অরণ্য আছে। সেখানে সীতাকুও নামে প্রকাও পুষ্করিণী প্রভৃতি রামায়ণোক্ত অশোক কাননের কথা স্মরণ করাইয়া দেয়। সিংহলবাসীদিগেরও সেক্টরূপ বিশ্বাস। কলম্বোর সন্নিকটে কল্যাণী গঙ্গার তীরে বিভীষণের মন্দির দৃষ্ট হয়। বৌদ্ধধৰ্ম্ম বিস্তারের পুৰ্ব্বে সিংহলে শৈব ধৰ্ম্মের অধিক