পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>やa নতদেহে বসিয়া তিনি প্রার্থন, মন্ত্রজপ অথবা তাঙ্কার সহিত যে পুণ্য শাস্ত্রগ্রন্থসকল আছে, তাহারই কোনটি অধ্যয়ন করিতেছেন।” “তাহা হইলে পাঠ করিতে পারিবার পক্ষে যথেষ্ট আলোক নিশ্চয় তাহার আছে ?” “ই, দুইটি প্রতিমূৰ্ত্তির মধ্যস্থানে একটি তাকে একটি ক্ষুদ্র স্কৃতের প্রদীপ আছে—তাছাতেই তাহার যথেষ্ট হয় । প্রদীপ নিবিয়া গেলে ভিতরে গভীর অন্ধকার জাগিয়া উঠে ।” বহুতর অভূতপূৰ্ব্ব অলৌকিক বিচিত্র চিন্তায় আমার মন পূর্ণ হইয়া উঠিল--যে পথে সন্ন্যাসী জীবনে একবার মাত্র পাদক্ষেপ করিয়াছিলেন, যতীর নিকট বিদায় লইয়া ধীরে ধীরে আমি সেই পথে চলিলাম। আমাদের সম্মুখে অপূৰ্ব্ব সৌন্দর্য্যে উদ্ভাসিত এষ্ট ষে দৃশু—ইছা তঁাচার চক্ষুকে আর কোনো দিন আনন্দিত করিবে না । নীচে র্তাবুতে ফিরিয়া আসিয়া উদ্ধে আশ্রম-উপত্যকার দিকে যতবার তাকাষ্টয়া দেখিলাম ততবারই অন্ধকার গুহায় উপবিষ্ট সেই হতভাগ্য লোকটির কথা আমার মনে বাজিতে লাগিল । নিঃস্ব, নামধামগোত্রহীন, অজ্ঞাত অখ্যাত সে, একটি গুহাগৃহ শূন্ত পড়িয়া আছে শুনিয়া লিঙ্গায় আসিয়াছিল এবং আশ্রমে সন্ন্যাসীদের কাছে গিয়া বলিয়াছিল চিরদিনের জন্ত অন্ধ তিমিরে প্রবেশ করিবার সংকল্প সে গ্রহণ করিয়াছে। তাহার পর অহঙ্কার এবং অভিমানের আবাসস্থলী এই ধরাতলে যে দিন তাঙ্গর শেষ সুৰ্য্য উদিত হইল, যেদিন লিঙ্গার সন্ন্যাসী-সম্প্রদায় স্তব্ধভাবে তাহার গুহাগহবরে শ্মশানের গাম্ভীৰ্য্য বহন করিয়া তাহাকে জীবস্তে সমাধি দিয়া আসিলেন—সেদিন তাহার দ্বারে যে অর্গল পড়িল জীবনের অবশিষ্ট কালের জন্ত তাহ আর কখনও উন্মোচিত হইবার নহে ! সেদিনকার সেই স্মরণীয় ‘শোভাযাত্রার’ ছবি আমার মনশ্চক্ষে ফুটিয়া উঠিতে লাগিল— রক্তবর্ণ-উত্তরীয় ভিক্ষুগণ, স্তন্ধ এবং গভীর—সম্মুখে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছেন, তাহাদের দৃষ্টি মৃত্তিকায় আবদ্ধ। পদবিক্ষেপ অত্যন্ত ধীর—দেখিলে মনে হয় যে পূজার ষে বলিটি তাহার লইয়া চলিয়াছেন যতক্ষণ সম্ভব স্বৰ্য্য এবং প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩১৭ { ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড আলোক সে উপভোগ করিয়া লয় এই তাহীদের আস্তরিক ইচ্ছা ! যাহার সহিত তুলনা করিলে, আমি যাহা কিছু কল্পনা করি না কেন—যে বিপদ নিশ্চিত-মৃত্যুর মুখে লইয়া যায় তাহাও, আমার কাছে নগণ্য বলিয়া মনে হয়—তাহার সেই অমানুষিক স্থৈৰ্য্য কি সহযাত্রী সন্ন্যাসীদের বিস্ময়ে উচ্ছ,সিত করিয়া দেয় নাই ! চল্লিশ কি ষাট বৎসরের জন্য আপনাকে অন্ধকারে জীবস্তে সমাহিত করিবার তুলনায় উপরের কামানশ্রেণী নিজেকে একবারে ছিন্নভিন্ন করিয়া দিবে জানিয়াও হিরোশীর মত বীরের পোর্ট আর্থারের প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করিতে যে স্থৈৰ্য্য এবং শৌর্য্যের প্রয়োজন হয় তাহা স্বল্প মাত্র । শেষোক্ত ব্যাপারে যন্ত্রণা শুধু মুহূৰ্ত্তকাল স্থায়ী হয় মাত্র এবং যে গৌরব লাভ হয় তাহা অনস্ত । প্রথমোক্ত ব্যাপারে আপনাকে যে এমন করিয়া উৎকৃষ্ট করিল সে মৃত্যুর পূৰ্ব্বে যেমন অখ্যাত অজ্ঞাত ছিল, তেমনি অজ্ঞাত অখ্যাতই থাকিয়া যায়— তাহার যে ক্লেশ তাহ অনন্ত এবং সে যন্ত্রণ। যে ধৈৰ্য্যের বলে বহন করা চলে তাহা আমাদের কল্পনারও অতীত । প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীর অনুগমন-সময়ে ধৰ্ম্মযাজকের মনে যে করুণা এবং সহানুভূতির উদয় হয়, নিঃসন্দেহ সন্ন্যাসিগণ সেই স্নেহ এবং সেই সঙ্গাজুভূতির সতিই তাহাকে লইয়া গিয়াছিলেন কিন্তু পৃথিবীতে এই শেষ যাত্রা করিতে করিতে তাহার মনে কি ভাব আসিতেছিল ?—এ পথে আমাদের সকলকেই একবার চলিতে হয়, কিন্তু কখন যে, তাহা আমরা জানি না। কিন্তু সে জানিত এ সূর্য্য আর কখনও তাকার স্বন্ধে তপ্তকর দিয়া স্পর্শ করিবে না। যে সমাধি তাহাকে অপেক্ষা করিয়া আছে তাহার চারি পাশ্বের আকাশচুৰী এই সকল পৰ্ব্বতে সে স্বর্যা আর কখনও আলোক ও ছায়ার সমাবেশ করিবে ন। এখন তাহার। তাহীদের গম্যস্থানে আসিয়া পৌঁছিয়াছে —সমাধির স্বার উন্মুক্ত। ভিতরে প্রবেশ করিয়া তাহার এক কোণে টুকর টুকরা কাপড়ের মিশ্রিত-বুনন একটি মাছুর পাতিতেছে, দেবদেবীর মূৰ্ত্তিগুলির সহিত পবিত্র ধৰ্ম্মগ্রন্থগুলিকে যথাস্থানে রাখিতেছে । ষে ধরণের ঠেলাগাড়িতে (Go-cart) শিশু প্রথম হাটিতে শেখে এবং যাহা মৃত্যু না আসা পৰ্য্যস্ত তাহার আর কোনো কাজেই লাগে না—