পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] দাদার কণ্ঠস্বর গুনিয়া সে শয্যা ত্যাগ করিয়া মহা উৎসাহে বাহিরে আসিল, আনন্দোচ্ছ,সিত স্বরে ডাকিল, “ঠাকুরদাদা, এই যে তুমি আমাদের ঘরে এসেছ! বাবা, ঠাকুরদাদার কোলে যাই ?” হারাণ বলিল, “যা।” বালক হাসিতে হাসিতে ঠাকুরদাদার কোলে লাফাইয় উঠিল, দুই হাতে র্তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, “ঠাকুরদাদা, আমাকে তোমার ঘরে নিয়ে চল, দিদিমাকে প্রণাম করবো ।” মুকুন্দ সস্নেহে মাণিকের মুখচুম্বন করিলেন, অশ্রুপ্রবাহে র্তাহার উভয় গণ্ড প্লাবিত হইতে লাগিল, এবং তাহাতে র্তাহার ৮দয়ের দীর্ঘকালসঞ্চিত বিষাদ ও বেদন ধৌত হইয়া গেল । দশমীর চন্দ্র শরতের মেঘনিন্মুক্ত আকাশে বসিয়া কৌতুকভরে বালক ও বৃদ্ধের এই মধুর মিলন দর্শনে হাসিতে লাগিলেন, এবং তাহার শুভ্ৰ হাস্ত দুৰ্ব্বাদলসঞ্চিত শিশিরবিন্দুতে প্রতিবিম্বিত হইয়া ঝকৃমকৃ করিতে লাগিল । মেহেরপুর, নদীয়া । ঐদীনেন্দ্রকুমার রায়। গলিত পত্র “একে একে সব সার্থী করেছে প্রয়াণ, শীতের শীতল বায়ু সতত কঁপিায়। আর কেন ওহে পত্র পাণ্ডু ম্ৰিয়মাণ ; এখনো তরুর গায়ে আছ কি আশায় ?” “গেছে সব ! তাহে কিবা ? শীতের সমীর পলে পলে মৃত্যু আনে শিহরিয়া কায় ; ভাবিয়াছি শেষ বিন্দু বুকের রুধির, গুকাইয়া কিশলয়ে দিয়ে যাব ছায় ।” ঐকালিদাস রায়। জেবুন্নেসা বেগম ৩১৭ জেবুন্নেসা বেগম রমণীকুলগৌরব, সাধবীগণের আদর্শ, কৌমাৰ্য্যব্রতের শিরোমাণ প্রাতঃস্মরণীয়া দেবী জেবুন্নেসা হিজরী ১০৫৭ অব্দে জন্মলাভ করেন। তিনি শাখানশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর বাদশাঙ্গের পঞ্চম দুহিতা ছিলেন। র্তাহার মাতার নাম নওয়াব বাই বেগম। শৈশবেই জেবুন্নেসার মেধাশক্তি ও সরল স্বভাব বিকশিত হওয়ায় সম্রাটমহল আনন্দে মুখরিত হইয়া উঠিয়াছিল। জেবুন্নেসার আধ আধ ভাষায় ভাঙ্গা ভাঙ্গ মিষ্ট কথায় বিশাল ভারতের রাজ-কৰ্ম্ম-ক্লিষ্ট সম্রাট আওরঙ্গজেব ক্লাত্তি দুর করিতেন। এই মধুর ভাষার জন্য সম্রাটু-অস্তঃপুরের সকলেই জেবুন্নেসাকে অনেক অধিক স্নেহ করিতেন। জেবুন্নেসার পাচ বৎসর বয়সের সময় সম্রাট ইস্লামের সনাতন প্রথামত জনৈক উচ্চশিক্ষিতা শিক্ষয়িত্রী নিযুক্ত করিয়া কোরান-শরীফ শিক্ষার বন্দোবস্ত করিয়া দেন । জেবুন্নেসা স্বাভাবিক উচ্চ প্রতিভা লষ্টয়াই জন্ম লইয়াছিলেন । কিছু দিন কোরান-শরীফ পাঠ করিলে তাহার প্রবল আকাঙ্ক্ষা কোরান কণ্ঠস্থ করিবার জন্ত বেগবতী হয়। শুনিয়া-আশ্চর্য্যান্বিত হইতে হয় যে, পাচ বৎসরের বালিকা অসাধারণ অধ্যবসায় অবলম্বনে দুই বৎসর মধ্যে কোরান-শরীফ মুখস্থ করিয়া ফেলেন। সম্রাটু ইহাতে এতই আহলাদিত হইয়াছিলেন যে, এক প্রকাও জসন’ করিয়া সমস্ত আমীর উমরা ও সিপাইদিগকে বহু খেলাভ বকৃশিস করিয়াছিলেন। জেবুন্নেসার কণ্ঠস্বর এমনই মধুর ছিল যে, যিনি তাহা একবার গুনিতে পাইতেন, তাহার কর্ণ কেবলি উৎসুক হইয়া সেই মিষ্ট স্বর শুনিতে ব্যাকুল হইত। একদা জেবুন্নেসা প্রতিরুপাসনা সমাপনস্তে প্রাসাদসংলগ্ন বাগানের ‘সেহনে বসিয়া বিভোর প্রাণে কোরান-শরীফ পাঠ করিতেছিলেন, তখন চারিদিকে ধীরে ধীরে প্রভাতবায়ু বহিতেছিল, পুৰ্ব্ব গগনে স্বৰ্য্য উদিত হইয়া সোনার আভা ছড়াইয়া দিতেছিল, শীতল বাতাস মৃদু মন্দ গতিতে বাগানে প্রবেশ করিয়া গাছ নাড়িয়া নাড়িয়া ফুল নাচাইতে