পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ফুটিল না। আজ এই প্রথম হাবসী শাস্ত্রীর কাজের ক্রটি কিছুতেই আর নিবারণ করা গেল না । ঘরে ঘরে টোকায় টোকায় প্রশ্ন চলিল—এ কে, এ কে রে? এমন কঠিন জায়গায় এমন মধুর ভুবনভুলানো হাসি হাসে কে রে ? কেহই জানে না—তাহাকে তো কেতই দেখে নাই । এই পৰ্য্যন্ত তাঙ্গরা বুঝিল সে রমণী—আর সে তরুণী! সুন্দরী কি না কে জানে ! কয়েদি প্রহরী সকলেই নিজেদের মধ্যে রমণীর মধুসঙ্গ অনুভব করিয়া আনন্দিত হইল । তাহার কামরার পাশে বনী ছিল এক তরুণ । কালো কালো চারথানি দেয়ালের মাঝে তাতার তরুণ জীবনের অনেকগুলি মাস নিরানন্দে নিষ্ফল গেছে—তবু তাতার অন্তরের তারুণ্য ক্ষুণ্ণ হয় নাই । যেইমাত্র সেই তরুণীর চাসির ঢেউ তাঙ্গার প্রাণের তটে আঘাত কবিল অমনি তাঙ্গর সমস্ত প্রাণ বসন্তু-স্পশে বিপত্র তরুর মতন আপনার তারুণ্যে পরিপূর্ণ সুন্দর হইয়। উঠিল। বিচিত্র ভাব পুষ্পপুটে মুরভির মতো তাঙ্কার প্রাণখানি ভরিয়া তুলিল । সে অকুভব করিল সেই কঠিন দেয়ালের আড়ালে একখানি কোমল প্রাণের মধুর স্পন্দন ; সে শুনিতে পাইল পরীর মতন লঘু তাহার পায়ের ধ্বনি, কবিতার ছন্দের মতন তাহার নিশ্বাস! তরুণ তরুণী পাশাপাশি–মাঝে শুধু ব্যবধান একখানি মাত্র দেয়াল ! কিন্তু সে-ই কত ফুলঙ্ঘ্য । দেয়ালের গায়ে কান পাতিয়া যুবক শুষ্টয় পড়িল । তরুণীর ওঢ়নার স্পন্দন, তাঙ্গার ভূষণের শিঞ্জন, তাঙ্গর আনন্দের গুঞ্জন, সব শোনা গেল । শুধু দেখা গেল না তাহার রূপ । সে মনে মনে কল্পনা করিতে লাগিল এ তরুণী না জানি কেমন ? লতার মতন তন্ত্রী, মূৰ্চ্চার মতন মনোহারিণী, ইন্দুলেখার মতন অপরূপ সুন্দরী ! তাহার পরনে নীল পেশোয়াজ, রাঙা আঙিয়া, ফিরোজা ওড়না—বুটিদার, চুমকিওলা, স্বচ্ছ লঘু হাওয়ার মতন। তাহার কালে টানা চোখের কোলে সুৰ্ম্ম আঁকা, পাতার মতন ঠোঁট ইখানি পানের রসে টুকটুকে, চাপার গুচ্ছ হাত দুখানি মেহেদি-মাখা ! ভ্ৰ দুখানি যেন স্বচ্ছ শাদা মেঘের উপর দেয়ালের আড়াল లిలt কালো কুচকুচে রামধন্থ । পিঠের উপর রেশম-কোমল কালে চুলের দীর্ঘ বেণী মুক্তার মালায় বেষ্টিত। মুখখানি তার হাসির মতে, হৃদয় তাঙ্গার ঢেউয়ের দ্যায় । তার হাসি যেন এসবাজের সুব, কথা যেন সেতারের ঝঙ্কার । সে সজীব আনন্দমূর্তি ! কয়েদখানার শরুণী সে তার জীবনখানি না জানি কি অসীম রহস্তে মাখানো,~-সে যেন কোন স্বপ্ন-লোকের কল্পনা ! তরুণ যুবক আস্তে আস্তে দেয়ালের গায়ে আঙুল দিয়া টোকা মারিল । টোকাব মধ্যে সে ললিতে চাঠিল---গো তুমি কে গো ? তুমি তরুণী, তুমি মন্দবী, তুমি একাকী— এ নিৰ্ম্মম পুরীতে আমার বনী-প্রাণের ক্ষুধিত-প্রণয় আমি তোমায় দিব, শুধু তোমায় দিব ! তরুণী সেই টোকার শব্দ শুনিল--কিন্তু সেই নির্বাক ভাষা সে বুঝিল না কিছুষ্ট । শুধু এইটুকু সে বুঝিল এই দেয়ালের ওপারে অাছে এমন এক জন লোক যে তাঙ্গার জন্য ভাবিতেছে, যে তাতাকে আপনার করিতে চাচিতেছে, যে তাহার কাছে আলাপ মাগিতেছে । সে কান পাতিয়া শুনিতে লাগিল শুধু টুক টুক টুক যত শোনে ততষ্ট সেক্ট অক্ষুট ভাষা ব্যক্ততব হয়, তাঙ্গর কানে তাঙ্গ প্রণয়-সঙ্গীতের মতো বাজিতে থাকে। সে কান পাতিয়া শুনিল একখানি উৎসুক হৃদয় তাঁঠারই জন্ম ললিতছন্দে স্পন্দিত হইতেছে। সেও তখন তাঙ্কার সরমসঙ্কোচ-ভয়ভাবনায় কম্পিত কোমল আঙুল দিয়া দেয়াণের গায়ে মৃদু মৃত্ত আঘাত করিল—সে আঘাতে তাহার প্রাণের সমস্ত প্রণয় বীণার মতো বাজিতে লাগিল । কী যে তার ধ্বনি! কী যে তার অনুরণন । এমন করিয়া তরুণ জুটি প্রাণ তাহীদের প্রণয়গান দিনের পর দিন জুড়িয়া পরস্পরকে শোনায় । তরুণী ক্রমে এই আলাপে অভ্যস্ত হইয়া উঠিল । কিন্তু সে জানিল না দেয়ালপারের তাছার বন্ধুটি তরুণ কি বুদ্ধ, বিবাচিত কি অলিবাচিত, কেমন কোন অপরাধে সে এখানে আজ বন্দী। শুধু সে জানিল দেয়ালপারে এক প্রাণ প্রণয় তাঙ্গারক্ট অপেক্ষায় আকুলিবিকুলি করিতেছে ; সে তাছার বন্ধু ! সে তাঙ্গার প্রণয়প্রার্থ ! রাতের পর রাত জাগিয়া তাহাদের এমনি অবুঝ আলাপ চলে। কারাগারের বিজনতা এমনি করিয়া সঙ্গ-সোহাগে