পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b〜 তাহারও অন্তর্দেশে আমরা এই মহান তত্ত্বট উপলব্ধি করি। লালিত কলার প্রকৃত মহত্ত্বই এই যে ইহাতে আমাদের অন্তঃকরণে এমন কতকগুলি আকাজক্ষার ও আশার উদ্রেক করে যাক পৃথিবীতে কখনও তৃপ্তিলাভ করে না, বরং তাহাতে আরও কতকগুলি নুতন নুতন বাসনার স্বষ্টি করে। এইরূপে আকাজক্ষ হইতে আকাঙ্ক্ষাস্তরে উন্নীত হক্টতে হইতে ক্রমশঃ আমরা ভগবানের সিংহাসনসান্নিধ্যে উপস্থিত হই । যে ভাস্কর, চিত্রকর অথবা গায়ক নিজের খোদিত মূৰ্ত্তিতে, অঙ্কিত চিত্রে কিংবা গীত সঙ্গীতে আপনার মনোমত আদর্শ প্রতিফলিত করিতে পারিয়াছেন, র্যাহার শিল্পকার্য্যে লেশ মাত্রও অসম্পূর্ণতা দৃষ্ট হয় না, তিনি কলাবিদ্যার পূর্ণ উদ্দেশু সংসাধনে অসমর্থ হইয়াছেন, তাহার হৃদয়ে আকাঙ্ক্ষার অবসান হইয়াছে, সুতরাং কলাবিষ্ঠা অকুশীলনের দ্বারা তিনি লাভবান হইতে পাবেন নাই। “Andrea del Sarto" নামক কবিতাতে ব্রাউনিং এই তত্ত্বটা পরিস্ফুট রূপে প্রকাশ করিয়াছেন । Andrea নিদোষ চিত্রকর (faultless painter), Šfēts f5Uē Rīfnfɔ arɛË Casti পর্য্যন্ত অযথা সন্ন্যস্ত হয় না । তিনি মনোমধ্যে সৌন্দর্যোর যে রমণীয় আদর্শ কল্পনা করেন তুলিকাসংযোগে তাঙ্গ পূর্ণভাবে ফুটাইয়া তুলিতে পাবেন —তাহার চিত্ৰ সৰ্ব্বতে ভাবে তাহার আদর্শ-অনুযায়ী হয়, সৰ্ব্বত্রই অনিন্দ্য সুন্দর, কোন স্থানে তিলমাত্র ভ্ৰম অথবা অনুচিত বৰ্ণবিদ্যাস দেখিতে পাওয়া যায় না । সুতরাং তাহার চিত্রে দশকের নয়ন তৃপ্তিলাভ করে বটে, কিন্তু হৃদয়ে একটা অনির্দিষ্টের দিকে আকাঙ্ক্ষার উদ্রেক করে না, তদপেক্ষ উচ্চতর এবং অধিকতর মনোহর সৌন্দর্য্যের ছবি মনোমধ্যে স্বপ্লবৎ জাগাইয়া তোলে না। র্তাহার চিত্ৰ সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর, রমণীয়তার চরমোৎকর্ষ—কাজেই ইহাতে চিত্রের প্রকত উদ্দেশু সফল হয় না । “A man's reach should exceed his grasp, Or what is Heaven for all is silver grey, Placid and perfect with my art—the worse.’ কিন্তু যুবক Raphaelএর চিত্রকলা তত নির্দোষ নহে, মাঝে মাঝে ভ্রম প্রমাদও যথেষ্ট আছে । কিন্তু তথাপি Andrea রাফেলকে উচ্চতর চিত্রকর আখ্যা প্রদান করিত প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ { ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড এবং এমন কি তাহাকে চিত্রগুরু বলিয়া ভক্তি করিতেও কুষ্ঠিত হইত না । তাহার কারণ এই— “The true artist is ever sent through and beyond his art unsatisfied to God, the fount of light and beauty.” ‘Abt Wagler ব্রাউনিংএব আর একটি মনোহর কবিতা । এই প্রাচীন গীতিবিদ্যাবিশারদ বাদক নিজের ভগ্ন বাদ্যযন্ত্রের উপর যে বিলাপসঙ্গীত রচনা করিয়াছেন তাহা চিরদিন প্রাণে গাথিয় রাথিবীর যোগ্য । ইহাতে ব্রাউনিংএর কলাসম্বন্ধীয় মতামত ব্যক্ত হইয়াছে। Vogler একজন স্বভাবসিদ্ধ গায়ক । তাতার সঙ্গীতের এরূপ মোহিনীশক্তি ছিল যে শ্ৰুতমাত্রই মনে হইত যেন স্বর্গরাজ্যের দ্বার উদঘাটিত হইয়াছে। সঙ্গীতের মোহমন্ত্রে আকৃষ্ট হইয়া কত কত দেবযোনি তাহার বশীভূত হইত এবং তাঙ্গার সমক্ষে নয়নাভিরাম অথচ ক্ষণস্থায়ী প্রাসাদ রচনা করিত। প্রাসাদের ভিত্তি পাতাল পর্য্যস্ত প্রস্বত, স্বচ্ছ প্রাচীরমালা গগনস্পর্শিনী, চূড়াদেশে জলন্ত উল্কাপিণ্ডসকল শোভা পাষ্টত । এই মায়া-মন্ত্রগঠিত প্রাসাদে পৃথিবী যেমন স্বৰ্গস্পর্শকামনায় উদ্ধোখিত, তেমনি স্বৰ্গও পৃথিবীর আকাজক্ষয় অবনত । এখানে অতীত কালের মৃত মহাত্মা গণ উপস্থিত হইতেন, ভবিষ্যতের অজাত প্রাণিমণ্ডলী জন্মগ্রহণের পূৰ্ব্বেই কল্পনাবলে ভাবরূপে আবির্ভূত হইতেন ; নিকট এবং দূরে সর্বত্রই নবজীবন এবং নবীন মহিমার সমাবেশ দেখা যাইত —অনাদি অতীত এবং অনন্ত ভবিষ্যৎ বর্তমানের সহিত একত্র মিলিত হইত। কিন্তু এখন এ প্রাসাদ চুর্ণীকৃত হইয়াছে—সঙ্গীতোপশমের সঙ্গে সঙ্গে এ মায়াপুরী অন্তর্হিত হইয়াছে। Vogler প্রাণে প্রাণে ইহার অভাব অনুভব করিতেছেন, কারণ ইহা অার ফিরিবে না। তাহার প্রাণের আকাঙ্ক্ষা অতৃপ্ত রহিয়৷ গেল—ক্ষণিকের জন্য র্তাহার হৃদয়ে বিষাদ এবং শুষ্ঠতার ছায় পরিলক্ষিত হইল। কিন্তু সে কতক্ষণ ? মুহূৰ্ত্ত মধ্যেই র্তাহার অপূর্ণ আশা পূর্ণতার জন্য পূর্ণস্বরূপ ভগবানের দিকে প্রধাবিত হইল। Vogler সাত্ত্বনা লাভ করিলেন, উষ্ঠত করযুগলে ঈশ্বরের নিকট ব্যাকুলভাবে আপনার হৃদয়ের প্রার্থনা জ্ঞাপন করিলেন—

  • See Dowden’s “Studies in literature,” p. 223.