পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্য। ] “ন মা—আমি প্রাণ থাকৃতে কারু কাছে মেঝ বাবুর নাম করব না । আমায় উদ্ধার কর ।” "ভবে আয়”—বলিয়া গদাই কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইল । কম্পিত পদে গঙ্গামণিও তাহার অনুসরণ করিল। ঝিলমিল-বদ্ধ বারান্দায় আসিয়া গদাই বলিল – “প্রদীপটা নিয়ে আসি।” ফিরিয়া আসিয়া প্রদীপ লষ্টল এবং নিজ বস্ত্র হইতে, মোঙ্গিতের-নামে-ঠিকানা-লেখা সেই কুড়াইয়া-পাওয়া পোষ্টকাডথানি বাঙ্গির কবিয়া, গঙ্গামণির মাছুরের উপর রাখিয়া দিল । গৃষ্ঠের বাহির হইয়া গদাই প্রদীপটা ফেলিয়; দিল । ত্ৰিশূলের পশ্চাৎভাগ গঙ্গামণির তাতে দিয়া বলিল—“শক্ত করে ধর । আমার পিছু পিছু আয় ।” তখন সেই সুচিভেদ্য অন্ধকারের মধ্যে দুইজনে মিলা ইয়া গেল । বাহিরের মুক্ত বাতাসে আসিয়া গঙ্গামণি যেন নবজীবন পাইল । তাঙ্কার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যেন নববলের সঞ্চার হইল । ত্রিশূল মুষ্টিবদ্ধ করিয়া, ত্বরিত পদক্ষেপে সে অনেক পথ অতিবাচন করিল। পথশ্রমে তাঙ্গার সর্বাঙ্গ দিয়া ঘৰ্ম্ম ঝরিতে লাগিল, কিন্তু তথাপি সে ক্লাস্তি অনুভব করিল না । এইরূপ প্রায় দুই ঘণ্টা চলিয়া, পথের ধারে একটা মন্দির দেখা গেল। গদাই বলিল—“এক্ট ঘণ্টেশ্বরের মন্দির, চিনিস্ ?” গঙ্গামণি বলিল—“মহাদেবপুরের ঘণ্টেশ্বর ?” “হঁ্যা । মহাদেবপুর গ্রাম ঐ দুরে আছে—এখন অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না । এ মন্দিরে কখনও এসেছিলি ?” “হঁ্যা-কতবার এসেছি পূজো দিতে। এখান থেকে আমাদের গা দু ক্রোশ ।” “আমি ত আর থাকতে পারিনে—আর বেশী রাত নেই । ভোর বেলাই মার বোধন বসবে। আমরা সবাই ডাকিনী যোগিনী মিলে মাকে সাজিয়ে দেবো । আমি এখন চল্লাম। এই সোজা রাস্তা ধরে চলে যা । দু ক্রোশ পরে দরিয়াপুর গ্রাম। ভোরে ভোরে বাড়ী পৌছে ষাবি ।” গঙ্গামণি তখন ভূমিতে জানু পাতিয়া বসিয়া, ডাকিনীর চরণ স্পর্শ করিয়া বলিল—“মা—আমার যদি তারা বাড়ীতে না নেয় কি উপায় হবে ?” নবীন সন্ন্যাসী ©ዓ> গদাই বলিল—“তারা লোককে বলেছে -তুই বাপের বাড়ী গিয়েছিল। কোন কলঙ্কের ভয় নেই। তবু যদি না নেয়—তুষ্ট বলিস, তবে আমার স্বামীর জোৎজমি অৰ্দ্ধেক আমায় ভাগ করে দাও -আমি গিয়ে কাশীবাস করি।” “তবু যদি মা, তারা না শোনে ? আমায় যদি বাড়ীতে স্থান না দেয় ?” “না দেয়, তোদের গায়ের নায়েল মশাইয়ের কাছে গিয়ে নালিশ করবি। নায়েব গদাধর পাল অতি সদাশয় ধাৰ্ম্মিক ব্যক্তি— মা কালীর একজন প্রধান ভক্ত। সে তোর ভাস্করকে ডাকিয়ে এনে জুতিয়ে সোজা করে দেবে। এখন যা ।” গঙ্গামণি তাঙ্গকে প্রণাম করির দরিয়াপুর অভিমুখে চলিল । কয়েক মুহূৰ্ত্ত পরে গদাই গাত্ৰোখান করিল। মনে মনে বলিল “কাওটি করলাম, মন্দ নয়। তবু যদি যৌবনের সে বল গায়ে থাকত । রাত আর বেশ নেই—বোধ হয় আড়াইট বেজে গিয়েছে। দু ঘণ্টার মধ্যে কল্যাণপুরে পৌছান চাই। ভোরেব বেলা গ্রামের লোকজন বেরিয়ে এ ডাকিনীর মূৰ্ত্তি দেখে মূৰ্চ্চ না যায়। পা চালিয়ে চলে গেলে অন্ধকারে অন্ধকারে বাড়ী পৌছব এখন।”—বলিয়া গদাই ক্ষিপুপদে সে স্থান পরিত্যাগ করিল। ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ গোপীকান্ত বাবুর দুশ্চিন্তা রাত্রি প্রভাত হুইল । গত রজনীর “খানাfপনার” প্রভাবে মালী-পরিবারের কাহার ও এখনও নিদ্রাভঙ্গ হয় নাই— কেবল রামদাসোয়া উঠিয়া বাগানে গিয়া বঁাশের লগী হস্তে নিজ প্রাতরাশের উপযুক্ত স্বস্বাদু ফল অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে । ক্রমে রৌদ্র দেখা দিল । বেশ বেলা হইল। তখুন মালীর কুটরে বয়স্ক লোকের কণ্ঠস্বর একটু আধটু গুনা যাইতে লাগিল। মালীর স্ত্রী উঠিয়া দুই ছিলিম তামাক সাজিয়া,—এক ছিলিম স্বামীকে ও এক ছিলিম মাতাকে দিল। বৃদ্ধ নিজ চাটাইয়ের উপর বসিয়া, দুই একবার