পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ー、ミ চারটে ঝিকি পোকা রাত্রির নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করবার জন্ত তাদের ক্ষুদ্র শক্তি সত্ত্বেও যথাসাধ্য চেষ্টা করছিল। মিসেস গ—সকলের আগে যাচ্ছিলেন, তিনি ত আনন্দে গান ধরে দিলেন । একে নবীন বয়স, তাতে সম্প্রতি বিবাহ হয়েছে, তার উপর এত টাদের আলো, সঙ্গে আবার প্রিয়তম ! এতেও গান গাবেন না ত কখন গাবেন । কবি যথার্থই বলেছেন—অমন অবস্থায় পড়লে—! আমি ছিলাম সকলের পিছনে। সেখান হ’তে স্তব্ধ হয়ে জ্যোৎস্নার নিৰ্ব্বাক মুখরতা উপভোগ করতে লাগলুম। ক্রমে গ্রাম ছাড়িয়ে গেলাম, বসতি বিরল হয়ে এল । এখন কেবল মাঝে মাঝে ঝরণা ; দু চারটে পার্থী ঘোড়ার পায়ের শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে একটু ডাকাডাকি করে আবার বুদ্ধিমানের মত ঘুমিয়ে পড়ল । আমাদের চখে ঘুম ছিল না, অন্তত আমার চখে ত নয়। কতক্ষণে পৌছিব, এষ্ট চিন্তাই আমার মন অধিকার করে বসেছিল। দ্বিপ্রহর রাত্রে একটা সরু রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ এসে ঘোড়াগুলো থেমে গেল। কুলির বললে সেখানেই নেমে পদব্ৰজে যাত্রা করতে হবে। একটা ঝোপের মধ্যে একটুখানি পরিষ্কৃত জায়গা, সেখানে আর কতকগুলা ঘোড়া বাধা রয়েছে দেখলুম। আমাদের অগ্রবর্তী একদল ইংরাজ রমণী ও পুরুষ এই ঘোড়াতে এসেছিলেন। আমরা যখন পৌছিলাম, তারা তখন গাছতলায় জলযোগ কচ্ছেন। আমরাও তাদের স্বধৃষ্টান্ত অমুসরণ করে অনতিদূরে কম্বল বিছিয়ে, খাবারের ঝুড়ি নিয়ে বসে গেলাম। সেই অবসরে কুলির আমাদের জুতার তলায় খড়ের আবরণ পরিয়ে দিলে । খাবার সময় অনুচ্চস্বরে ঠিক করা গেল, ঐ ইংরাজদলের অগ্ৰেই যাত্রা করা যাকৃ। আমি ত খুব রাজি, শুভস্য শীঘ্ৰং । আমাদের দলের রমণীদ্বয় আগে যাবার আর একটা কারণ দেখালেন, সেটা হচ্ছে এই –অদূরে গাছতলায় ইংরাজ পুরুষের মুখে মোটা পাইপ লাগিয়ে ধূমপান করছিলেন। খুমুনিগমের পরিমাণ দেখে তারা যে ধূমপানটা উপভোগ কচ্ছেন তাতে আর কোন সন্দেহ ছিল না । তা দেখে মিসেস গ—ও মিস ট—বলে উঠলেন, ‘ওরা যে আমাদের প্রবাসী—মাখ, ১৩১৭ [ ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড আগে ধুমপান করতে করতে যাবে ও ধূমণ্ডলা পশ্চাদগামী আমাদের মুখে এসে পড়বে, এ কোনোমতেই সহ করা যাবে না ।” এ কথার উপর আর বাদামুবাদ চলে না, আমরা যাত্রা করলাম। কিছু দূর অগ্রসর হতেই দলস্থ একজনের জুতার আবরণ ছিড়ে গেল, সেটা পরাবার অবসরে, যা ভয় করেছিলাম তাই হল, ইংরাজের দল আমাদের আগিয়ে গেল । আমাদের ভাগ্য সেদিন স্বপ্রসন্ন ছিল তাই কিছুক্ষণ চলে আবার আমরা অগ্রবর্তী হলাম। এবার আমরা যথাসম্ভব দ্রুত চলতে লাগলাম, ংরাজের দল ক্রমশ পিছিয়ে পড়ল। রাত্রে পথ চেনা বড় কষ্টসাধ্য কিন্তু কুলির আগে আগে কাগজের লণ্ঠন নিয়ে পথ দেখিয়ে চলল। সৰ্ব্বদা যাতায়াতে পথগুলা যেন তাদের মুখস্থ—ঠিক করে বলতে হলে পদস্থ—হয়ে গেছে । এইবার মাঝে মাঝে ‘আসামা’র ধোয় ও ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা রক্তিম আভা দেখা যেতে লাগল। আমরা ক্রমশই ধোয়ার দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম। পাহাড়ের উপর পাহাড়, তার উপর পাহাড় । কেবলই মনে হচ্ছিল, বুঝি এই পাহাড়টা উঠলেই একেবারে থাতের কাছে পৌছিব । আলেয়ার মত লাল আগুনের শিথাটা কখন নিকটে কখন দুরে বোধ হচ্ছিল। এই ধরি ধরি আবার দূরে চলে যায় ! মধ্যে মধ্যে ক্লাস্ত হয়ে পাচ সাত মিনিট পাহাড়ের গায়ে বসে বিশ্রাম কছিলাম । নীচে অনেক দূরে ইংরাজের দলের আলো দেখা যাচ্ছিল। আমাদের দলের মহিলার এ নিয়ে বেশ একটু পরিহাস করছিলেন। র্তারা বল্লেন –‘ওরা হল ইংরাজ, আর আমরা আমেরিকান ও ভারতীয় ; কিছুতেই আমাদিগকে হারাতে পারে না । আবার দ্বিগুণ উৎসাহে চলতে আরম্ভ করি। পিছনের দলকে পরাজিত করবার ইচ্ছা আমাদের উত্তেজিত করে তুললে । মহিলারা বল্পেন—’twill never do to be caught up by the Englishmen ‘ইংরাজেরা আমাদের যে ধরে ফেলবে এ কোনোমতেষ্ট হতে পারে না। আমরা সমস্বরে উত্তর করলাম, না কখনই না’। এইরূপ হাস্ত পরিহাসে সময় বেশ কাটতে লাগল ।