পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Հ8 গাত্রে শ্বেত কুরাটিকা, ঢেউয়ের ঘর্ষণে উখিত সাদা ফেনার মত বড় সুন্দর। সেই পাহাড়-সমুদ্রের পরপারে জাপানের মহিমার নিদর্শনরূপে তুষারমুকুট-শোভিত ফুজি-পান+ সগৌরবে মহারাজার মত দাড়িয়ে । কবির লেখনী ও চিত্রকরের তুলিকা এর মহিম কীৰ্ত্তন করে শেষ করতে পারেনি। এই জাপানের গৌরবমুকুট । তাজ নবারুণরাগরঞ্জিত প্রভাতালোকে জাপানের যা কিছু মহৎ ও স্বন্দর তারই মূর্তিরূপে আমাদের নয়নসমক্ষে প্রকাশিত হল। আকাশে ও বাতাসে তখন একটা পুলক ছুটেছে । তার আঘাতে শরীর ও মন রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল । প্রাতঃকালীন শীতবাতাস তার কোমল হস্তম্পর্শে কতদিনের রুদ্ধ আনন্দ ও বেদন যুগপৎ জাগিয়ে দিলে । কিছুক্ষণ থেকে পূৰ্ব্বদিক রাঙা হয়ে উঠুছিল । আমরা সকলে হুর্য্যোদয় দেখবার জন্ত সেইদিকে ফিরলাম। জমাটবাধা নানা রঙের মেঘের ভিতর থেকে স্বর্য একটুখানি উকি দিলেন। যেন রঙিন পর্দার আড়ালে লোহিতাম্বর মুন্দরী ! একটু একটু করে পর্দা তুলে অবশেষে লজ্জা সরম বিসর্জন দিয়ে হঠাৎ আকাশে লাফিয়ে উঠলেন। চারিদিকে অসীম সৌন্দৰ্য্য ছড়িয়ে আমাদিগকে লজ্জায় অভিভূত করে দিলেন । পাহাড়সমুদ্রের উপর একটা স্বর্ণধারা বয়ে গেল। একদিকে কোমল, শীতল প্রভাতের উন্মেষ ; অন্যদিকে নিৰ্ম্মম উষ্ণ আগুনের বিকটগর্জনে হৃদয়ের জালা প্রকাশ । জগতের সর্বত্রই এক্টরূপ । একাধারে কোমল ও কঠোর, শীতল ও উষ্ণ, সুখ ও দুঃখের সমাবেশ ! তাই বোধ হয় অনেকে জগৎকে রহস্তময় বলে থাকেন । ক্রমে বেলা বেড়ে গেল। রোদ বা কী করতে লাগল। একটা বড় পাথরের ধারে বসে উদরানলে কিছু আহুতি দিয়ে নামৃতে আরম্ভ করলাম। সকালবেলা যতক্ষণ খাতের ধারে ছিলাম, তার মধ্যে পূৰ্ব্বরাত্রের ইংরাজদলের কোন পাত্তাই পাইনি। আমাদের মহা আনন্দ, স্থির হল র্তার উঠতেই পারেন নি। শত্রুর সম্পূর্ণ পরাজয় ! নাম্ৰার সময় কোন কষ্টই নাই, একবার ছুটে নামৃতে আরম্ভ করলে থামা দায় হয় । পশ্চাদ্ভাগ থেকে কে যেন অৰ্দ্ধচন্দ্র প্রবাসী—মাঘ, ১৩১৭

  • জাপালের সৰ্ব্বোচ্চ পাহাড় ।

{ ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড দিচ্ছে। এক একটা পাহাড় নেমে আসি আর পিছনদিকে দেখি। রাত্রির অন্ধকারে কতখানি উঠেছিলাম কিছু বুঝতেই পারি নি ; দিবালোকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম। সব চেয়ে বিস্ময়ের বিষয় এই আমেরিকান মহিলারা কেমন করে উঠলেন । রাত্রে একবার ও ক্লান্ত হয়েছেন একথা বলেননি। আমরা ভারতীয় ‘পুরুষ’ ইহাদিগের নিকট অনেক শিক্ষা করতে পারি । ঘোড়াওয়ালীদের কাছে শুনলাম গত রাত্রের ইংরাজদল । ইতিপূৰ্ব্বেষ্ট ঘোড়া নিয়ে ফিরেছেন । তখন আর কিছু যখন বাসায় ফিরলাম তখন দ্বিপ্রহর স্বানাঙ্গার সেরে গুয়ে পড়া গেল। কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম জানিনা । চোথ মেলে জানালা দিয়ে দেখি বাহিরে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে । চারিদিককার পাহাড় থেকে সাদা কুয়াসাগুলো শুভ্ৰবসন অভিসারিকার মত নিঃশব্দে নেমে আসছে। ঠিক সেই সময়ে সান্ধ্যভোজনের ঘণ্টার ডাক আমার চমক ভাঙিয়ে দিলে । সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেহ রইল না । উত্তীর্ণ হয়েছে ; উৎসব নীলাকাশে হাসে তারা, ঘিরে আছে গহন তিমির, মন্দিরের উচ্চ-চুড়া লক্ষ্যপথে নাহি হয় স্থির,— তবু শুনি দূর হতে ভেসে আসে হর্ষ-কোলাহল, জাগরণক্লাস্তুপদে চলিয়াছে তীর্থযাত্রীদল ; পথখানি হিমসিক্ত, চারিদিক কুহেলিকাময় তুষার-শীতল বায়ু তার মাঝে করে অভিনয়, কাপে চারু দেবদারু-তোরণ সজ্জিত পথপাশে, বিশ্ব আজি ভরপুর অসময়-জাত ফুলবাসে ! কে তোমরা তীর্থযাত্রী ? কার লাগি ঘোর অন্ধকার ভেদ করি’ চলিয়াছ দলে দলে করিয়া হুঙ্কার ? বিজলী খেলিছে ওই মন্দিরের চুড়ায় চূড়ায় মুহমু হু আলোকিয়া দশদিক স্বর্গের প্রভায় ! মৰ্ত্ত আজি স্বৰ্গ সনে করিতেছে দৃষ্টি-বিনিময় তারি লাগি এ উৎসব । আর কিছু? আর কিছু নয় । শ্ৰীইন্দুপ্রকাশ বন্ধ্যোপাধ্যায়।