পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 সময়ের এক সুহৃদ মহাত্মা দুই বৎসর পূৰ্ব্বে বিশেষভাবে অমুরুদ্ধ হইয়া বিবেকানন্দ-বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। সেই প্রবন্ধ বিবেকানন্দ সম্প্রদায়ের মাসিক পত্রে প্রকাশিত হয় । আক্ষেপের বিষয় যে পরিচালক গণ পরামর্শ করিয়া বিবেকানন্দের জীবনের প্রাথমিক সংগ্রাম-সংবাদটুকু লেখকের অজ্ঞাতসারে চুপে চুপে পরিত্যাগ করিয়া কেবল সেই সুহৃদকর্তৃক অঙ্কিত জীবনীর স্থিরসৌদামিনী-শোভা দেখাইতেই ব্যস্ত হইয়াছিলেন । যে সকল উপায় পদ্ধতি—যে সকল উচ্ছ জ্বল চিন্তার ঘাত প্রতিঘাতে হৃদয়মনের উত্থান পতনের বিষম সংগ্রামের পর ঐ স্থিরসৌদামিনী-লীলা বিবেকানন্দের জীবনে সম্ভবপর হইয়াছিল সে উপকরণগুলি পাঠকের নয়নপথের অন্তরালে লুকায়িত রাখা হইল। কেন হইল ? পাছে শিষ্যবর্গের পরমদেবতাকে পাঠক মানুষ ভাবে। সংগ্রাম ত মানুষেরষ্ট হয় সুতরাং মানবের অপেক্ষ কোন এক উচ্চ গ্রামে বিবেকানন্দকে প্রতিষ্ঠা করিবার প্রয়াস-পরিচালিত বুদ্ধিবিশিষ্ট সেবকগণ বিবেকানন্দের সংগ্রামপূর্ণ জীবনকাহিনী সহ্য করিতে পারিলেন না। আলস্তাপরবশ ও বিলাসপ্রিয় মানুষ এই জন্তই উপায় পদ্ধতি ত্যাগ করিয়া মানুষকে দেবতা করে । তাই রামকৃষ্ণ বড়ঠাকুর ও বিবেকানন্দ ছোটঠাকুর হইয়া অসংখ্য মানবসন্তানের পুজা ও নৈবেদ্য সম্ভোগ করিতেছেন । তাহার পর সাধু দেবেন্দ্রনাথ । ইনি ধৰ্ম্মজীবন ও সাধুতার সমাদরে এ দেশের জনসাধারণের নিকট মহর্ষি বলিয়া পরিগৃহীত। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ সত্যের সেবক । সত্য তাহাকে এরূপভাবে আশ্রয় করিয়াছিল যে তিনি সত্যের মর্য্যাদা রক্ষায় আত্মবিসর্জন করিয়া মর্ত্যলোকে অক্ষয় কীৰ্ত্তি রাখিয়া গিয়াছেন । “সত্যং” বলিতে র্তাহার সমগ্ৰ দেহ মন হর্ষোৎফুল্প হইত। রোমাঞ্চিত কলেবরে ব্ৰহ্মানদের মধুর-ধারা-সিঞ্চিত মহর্ষি-মূৰ্ত্তি বহু বহুবার সন্দর্শন করিয়া কৃতাৰ্থ হইয়াছি। কিন্তু এমন সাধুপুরুষের সম্বন্ধেও সকল প্রত্যক্ষীভূত সত্য ঘটনার আলোচনার উপায় নাই। দেবতা থাকিলেই যেমন উপদেবতা থাকে, উত্তম যেমন অধমের স্থান নির্দেশ করিয়া দেয়, ঠিক সেইরূপ মহর্ষির পাশ্বচরক্কপে এমন কোন কোন ব্যক্তির অবস্থিতি প্রবাসী—মাঘ, ১৩১৭ [ >०म छांश, २ग्न थ७ সম্ভবপর হইয়াছিল যে র্তাহাদের অনুগ্রহে অনেক সময়ে মহর্ষি-দর্শনও অসম্ভব ব্যাপারে পরিণত হইত। একাধিকবার সবান্ধলে ফিরিয়া আসিতে হইয়াছে। এমন ঘটনাও ঘটিয়াছে যে র্তাঙ্গার কোন সেবক আমাদের ৩৪ জন বন্ধুকে চুচুড়ার নির্জন বাসভবন হইতে “দেখা হইবে না” বলিয়া ফিরাইয়া দিয়াছেন, কিন্তু দৈবক্রমে মহর্ষি জানিতে পারিয়া লোক পাঠাইয়। আমাদিগকে পথ হইতে ফিরাইয়া লইয়া গিয়াছেন, দূর হইতে সমাগত বলিয়া জলযোগ করাইয়াছেন, কথাবাৰ্ত্ত, স্নেহ ও উপাদেশাদির দ্বারা পরিতুষ্ট করিয়া বিদায় দিয়াছেন। এরূপ ঘটনা নিতান্ত বিরল নহে। নুতন বৃক্ষবাটিকার মালিক নূতন রোপিত চারা গাছগুলির রক্ষার জন্তই বেষ্টনী দিয়া থাকে, কিন্তু গগনস্পশী সমুন্নত পাদপরাজের কাও প্রাচীর হইয়া ভক্তমণ্ডলী সৰ্ব্বদাই বিরাজ করেন এবং আশ্রয়প্রার্থীদিগকে দূরে মুদূরে রাখিতে সৰ্ব্বদাই প্রাণপণ প্রয়াস পান । জ্ঞান ও ভক্তির মিশ্রণে যে সাধুচরিত্র গঠিত হয়, মহর্ষি এই নাস্তিকতার দিনে সেই ভক্তিসিক্ত জ্ঞানধৰ্ম্মের পথপ্রদর্শক। র্তাহার সাধিত ধৰ্ম্ম উচ্চ ও গভীর। কিন্তু অতিভক্তির বেষ্টনী উঠাইয়া না লইলে মহর্বির মহচচরিত্রের বিশ্লেষণ ও আলোচনা সম্ভবপর নহে। আমি জানি এই অন্তরায় বিদ্যমান বলিয়াই মহৰ্ষির একখানি পূর্ণাবয়ব জীবনচরিত রচিত হইতেছে না। কি পরিতাপের বিষয় ষে এইসকল সাধুপুরুষদের পাশ্বচরের জনসমাজের স্বশিক্ষা লাভের পথে, ঠিক সত্য সংবাদ লাভের পথে বাধা দেয় ও উচ্চগ্রামের মানবসত্তানগণের আচরিত জীবনের সৌরভমাধুরী সম্ভোগে নিজেরা বঞ্চিত থাকিয়া যায় ও জনসমাজকে বঞ্চিত করে । -- শ্ৰীচণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বর্ণ ও অগ্নি স্বর্ণ বলে “অগ্নি তুমি বড় নিরদয়, বিনা দোষে কেন মোর দেহ কর ক্ষয় ।” অগ্নি বলে “স্বর্ণ তুমি কেন নিন্দ মোরে ক্ষয় নাহি করি আমি শুদ্ধ করি তোরে।” শ্ৰীঅন্নদাপ্রসাদ ঘোৰ ।