পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb বলিয়া মনে হয় । ইতিমধ্যে উক্ত চীনদেশে প্রবেশ করিয়াছিল। ইতিপূৰ্ব্বে চীনদেশে দুই প্রকার ধৰ্ম্মমতের প্রাধান্ত ছিল, যদিও তাহাকে ঠিক ধৰ্ম্মমত বলা যায় না, তাহা অনেকট নৈতিক উপদেশাবলী। একটি মতবাদ কঠোর সন্ন্যাসব্রতকে সমর্থন করে ; ইন্দ্রিয়পরায়ণতাকে ঘৃণা করিতে, নম্র হইতে, আত্মত্যাগ করিতে, এবং আড়ম্বরহীন সরল জীবন যাপন করিতে উপদেশ দিয়া থাকে। সেই ধৰ্ম্মের মতানুসারে রাষ্ট্ৰচালনায় প্রয়োজনমত বল প্রয়োগ দোষের নহে কিন্তু ধৰ্ম্ম বা নৈতিকক্ষেত্রে তাহা নিতান্ত নিন্দনীয়। অন্ত ধৰ্ম্মতন্ত্রটি দ্যায়পরায়ণতা, দয়া, আত্মসংযম, রাজভক্তি ইত্যাদি গুণগুলির উৎকর্ষসাধনের অনুশাসন মাত্র। ইহার পশ্চাতে কোন দর্শনশাস্ত্রের সম্পর্ক নাই । আধ্যাত্মিক ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে ইহা বিশেষ কিছু বলে নাই । ংসারের প্রতি অবজ্ঞা, জীবনের প্রতি অনাসক্তি ও মুক্তিলাভের প্রতি একাগ্র লক্ষ্য লষ্টয়া বৌদ্ধধৰ্ম্ম যখন চীনের স্তায় এমন ব্যবহারবুদ্ধিপ্রধান দেশে প্রবেশ করিল তখন সেখানে নিশ্চয়ই একটা বিপ্লব বাধাইয়া তুলিয়াছিল। বহুশতাব্দী ধরিয়া সম্রাটের প্রসাদ লাভের জন্য এই তিনটি ধৰ্ম্মের প্রতিযোগিতা চলিয়াছিল । সম্রাট যে ধৰ্ম্মকে সমর্থন করিতেন সেই ধৰ্ম্ম প্রবল হইয়া উঠিত। সমাটের পরিবর্তনের সহিত ধৰ্ম্মেরও পরিবর্তন ঘটিত । কোন সম্রাটের ইচ্ছায় হয় ত বৌদ্ধমঠ ভাঙ্গিয় ফেলা হষ্টত আবার কাহারও ইচ্ছানুসারে তাহার পুনঃসংস্কার করা হইত। চীন-সম্রাটগণ বলিতেন যে রাজ্যসংক্রান্ত ব্যাপারে ধৰ্ম্মের প্রবেশাধিকার নাই । সনাতন ধৰ্ম্মবিধির বিরুদ্ধে যদি কেহ গোলযোগ বাধাইয়া তোলে তাহ পুলিসেরই দমন করা উচিত, ধৰ্ম্মসমাজের তাহাতে ব্যস্ত হইবার প্রয়োজন নাই। " বহু দিন হইতে চীন-সম্রাটগণ বংশ পরম্পরায় এইরূপ প্রণালীতে শাসন করিয়া আসিয়াছেন, চীন দেশে ধৰ্ম্ম ও রাষ্ট্রব্যবস্থার যেরূপ সম্বন্ধ । আধুনিক জগতে বোধ হয় তাহা অদ্বিতীয় । চীনেম্যানেরা বলে যে সম্রাটই জাতীয় ধৰ্ম্মের প্রতিনিধি স্বরূপ ঈশ্বরের নিকট দায়ী । সম্রাট স্বয়ং ধৰ্ম্ম সংক্রান্ত অনুষ্ঠানাদির বিধি ব্যবস্থা করিয়া দেন। তাহার এবং প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ | ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড অনুমোদন ভিন্ন নুতন কোন পূজানুষ্ঠান প্রচলিত হইতে পারে না ও তাতার অনুমোদিত ক্রিয়াকলাপ বিধিসংহিতায় সন্নিবেশিত হয়। চীন দেশে যদি কেহ নূতন কোন বিশ্বাসমতে চলে, বিশেষত বৈদেশিক পূজা সম্পন্ন করে, তবে তাহাকে রাজদ্রোহী বলিয়া মনে করা হয় । রাজবিধিতে যে সকল দেবদেবীর কোন উল্লেখ নাই তাহাদের অর্চনা করিলে পুলিস তাহা বন্ধ করিয়া দিতে বাধ্য এবং সংক্রিতায় যে সকল সম্প্রদায়কে স্বীকার করা হয় নাই তাহাদিগকে তাহারা দমন করিয়া থাকে । পুরাতন খৃষ্টান ও মুসলমানেরা অধিকৃত রাজ্যসমূহে ধৰ্ম্মভেদ বিলুপ্ত করিয়া ধৰ্ম্মের ঐক্য সাধন করিয়াছে, কিন্তু রোম, চীন এবং জাপান ধৰ্ম্মসমূহকে রাষ্ট্রনৈতিক উদ্দেশ্র্যের অনুগত করিয়া রক্ষা ও চালনা করিয়াছে। ভারতবর্ষে কিন্তু ধৰ্ম্মের ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ, জগতের আব কোথাও এমনটি নাই । সমস্ত এসিয়ার ধৰ্ম্মতত্ত্বের মূল প্রশ্ৰবণটা ভারতবর্ষে । এইখানে আমরা সৰ্ব্ব প্রকারের বহুদেববাদ দেখিতে পাই ও দেবদেবীর অরণ্যের মধ্যে দিশাক্তার হইয়া পড়ি বলিলেও চঙ্গে । এখানে লোকের থেয়াল বা ইচ্ছা বা অবস্থার পরিবর্তন অমুসারে আচার অনুষ্ঠানাদির সর্বদাই পরিবর্তন ঘটিতেছে । হিন্দুধৰ্ম্ম সকল প্রকার ধৰ্ম্মমতকে সহ করে, কি ঈশ্বরের প্রকাশ, কি প্রাকৃতিক শক্তি, কি দেহ ও মনের ক্রিয় সম্বন্ধে, যাচার যা খুলী সে তাঙ্গাই বিশ্বাস করিতেছে। হিন্দুধৰ্ম্ম বিশেষ কোন সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা কোথাও সীমাবদ্ধ হয় নাই । রাষ্ট্রনীতি কথন তাহার অবাধগতিকে সংহত করে নাই । আপাতদৃষ্টিতে এই অবস্থাকে প্রাচীনকালের বহুদেববাদের যুগের স্তায়ই ঠেকে। ভারতবর্ষীয়দের দ্যায় এমন প্রখরবুদ্ধিশালী ও সত্যসন্ধানপর জাতির মধ্যে এই সকল পৌত্তলিকতা কেমন করিয়া রহিয়াছে তাহ জিজ্ঞাস্ত বটে। বিচিত্র বাহ ঘটনার সহিত নৈতিক ও সামাজিক অবস্থা মিলিত হইয়া বড় বড় জাতির ধৰ্ম্মকে বিশেষ আকার দান করে ইহা নিশ্চিত । কিন্তু সে সকল আলোচনার স্বান ইহা নহে। আমি শুধু এইটুকু বলিতে পারি যে হিন্দুরা জাতিভেদের দ্বারা অসংখ্য বিভাগে