পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্য। ] বিভক্ত এবং শাস্ত্রভেদের দ্বারা তাহাদের ধৰ্ম্মাচাৰ্য্যগণ নানা বিচিত্র শাখার প্রবর্তন করিয়াছেন, এষ্ট কারণে হিন্দুদের মধ্যে ধৰ্ম্মের ঐক্যসাধনের ক্রিয়া সহজে ঘটিতে পারে নাই । এইসকল ধৰ্ম্মশাস্ত্রকে ঐতিহাসিক বলিয়াও হিন্দুরা মানে না । সেইজন্ত কোন বিশেষ • একজন ধৰ্ম্ম প্রবর্তকের জীবন ও উপদেশকে কেন্দ্রস্বরূপ করিয়া হিন্দুধৰ্ম্ম তাহার চতুর্দিকে বিকাশ প্রাপ্ত হয় নাই । সম্ভবত এই কারণেই হিন্দুর ধৰ্ম্ম এমন ব্যাপক এবং অসম্বদ্ধ। হিন্দুদের জন্ত সৰ্ব্বপ্রকার মুক্তির পথই খোলা রহিয়াছে। হিন্দুশাস্ত্র আজও শেষ হয় নাই, নূতন নূতন দার্শনিক মতামত, ব্যাখ্যা, তত্ত্ব, এখনও হিন্দুশাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি করিয়েছে। তথাপি এখানকার উচ্চ অঙ্গের তত্ত্বজ্ঞান ও পৌত্তলিকধৰ্ম্ম পরস্পর বিরোধী নছে, বরঞ্চ তাহার বিপরীত। তাহারা উভয়ের সমর্থন করে । কারণ ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম লোক প্রচলিত পৌত্তলিকতাকে সৰ্ব্বব্যাপী অদ্বৈততত্ত্বের প্রত্যক্ষগোচর বাহিরের মুৰ্ত্তি বলিয়া স্বীকার করিয়া লইয়াছে। এখানকার কৃষক ও পণ্ডিত হয়ত একই দেবতার উপাসক কিন্তু দুইজনে দুই ভাব হইতে পূজা করেন অথচ সেই ভাবের প্রভেদ লইয়া দুই পক্ষে কলহ বাধে না । কিন্তু এইরূপ মিশ্রিত জটিল ধৰ্ম্ম যে বৌদ্ধ, মুসলমান ও খৃষ্টানধৰ্ম্মের দ্যায় মুসম্বন্ধ ধৰ্ম্মমতের আক্রমণকে প্রতিরোধ করিতে পারিয়াছে ইহা আশ্চর্য্যের বিষয় । ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা ধৰ্ম্মের এষ্ট অব্যবস্থার জন্ত কতক পরিমাণে দায়ী । চীনের দ্যায় অমুমোদনের দ্বারাই হোক্ আর মুসলমানের দ্যায় জয়ের দ্বারই হোক, শাসনকৰ্ত্তার ইচ্ছা ও সাহায্য ভিন্ন কোন বৃহৎ দেশে কোন এক ধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠালাভ করিতে পারে নাই ইহা নিঃসন্দেছ । কিন্তু ইংরাজ-রাজত্বের পূৰ্ব্বে ভারতবর্ষ কখন সম্পূর্ণরূপে একেশ্বর শাসনের অধীনে আসে নাই । আরঙ্গজেব ভিন্ন আর কোন মোগল সম্রাটই গোড়া মুসলমান ছিলেন না । তাহার। বরঞ্চ ইচ্ছা করিয়াই হিন্দুপ্রজাদের ধৰ্ম্মে হস্তক্ষেপ করিতেন না। বরঞ্চ মুসমলানধৰ্ম্মের সংঘাতে হিন্দুসমাজে ধৰ্ম্মভাব আরো প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। মুসলমানযুগে ভারতবর্ষে অনেক ধৰ্ম্ম-প্রবর্তকের অভু্যদয় হষ্টয়াছে, নুতন সম্প্রদায় গঠিত হইয়াছে এবং পণ্ডিতগণের মধ্যে সংকলন ও সমালোচন—কুমীর পোষা శ్రీన్స ধৰ্ম্মতত্ত্ব লইয়া নানা বাদ প্রতিবাদের সৃষ্টি হইয়াছে। এই সকল আন্দোলনে মুসলমান গভমেণ্ট অনেকদিন পৰ্য্যন্ত ক্ৰক্ষেপ করে নাই। এই নূতন সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সম্প্রদায়-বিদ্বেষ ছিল না। কিন্তু মোগল সাম্রাজ্যে পতনোয়ুথ অবস্থায় আরঙ্গজেবের গোড়ামিতে হিন্দুধৰ্ম্ম উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া রাষ্ট্রবিপ্লবের প্রবর্তন করিয়াছে । শিথ-গুরুদের প্রতি অত্যাচারে শাস্তিপ্রিয় শিখদিগকে দুৰ্দ্ধৰ্ষ যোদ্ধা করিয়া তুলিয়াছিল। নিশ্চেষ্ট এবং ঐক্যহীন জাতিও যে ধৰ্ম্মের নামে কি অদম্য শক্তিতে বলীয়ান হইয়া উঠে ইহা তাহার একটি দৃষ্টান্ত। পশ্চিম এসিয়ার ইতিহাসের সহিত তুলনা করিয়া মোট এই দেখা যায় যে, ভারতবর্ষীয়ের যদিচ একান্ত ধৰ্ম্মনিষ্ঠ জাতি তথাপি অন্ত সকল ধৰ্ম্মের ন্তায় ভারতবর্ষের ধৰ্ম্ম রাষ্ট্রব্যবস্থার সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই বা রাষ্ট্রব্যবস্থার নিকট চষ্টতে বিশেষ বাধা পায় নাই । মুসলমানদের দ্যায় প্রচারপরায়ণ জাতিও ভারতের অধীশ্বর হইয়া এমন বিচ্ছিন্ন ধৰ্ম্মকে অতি অল্প পরিমাণেই বিচলিত করিতে পারিয়াছে । মুসলমানধৰ্ম্ম বরঞ্চ তাহাদিগকে আরো দৃঢ়বদ্ধ করিয়া তুলিয়াছে। ঐ ধৰ্ম্ম পশ্চিম এসিয়ায় বহুদেববাদকে ষেরূপ নিষ্পেষিত করিয়াছিল ভারতবর্ষে তাহ পারে নাই । কিম্বা পূৰ্ব্ব এসিয়ার স্তায় তাহাকে শাসনাধীনে নিয়ন্ত্রিত করিতেও সক্ষম হয় নাই । শ্ৰীঅতসী দেবী। কুমীর পোষা কুমীরের ভণ্ডামি ও নিৰ্বদ্ধিত একেবারে প্রবাদগত ; ইহাদের স্বভাব অদমনীয়, অনেকে এইরূপ মনে করেন । কিন্তু এই মস্তিষ্কবিহীন কদাকার ভীষণ জলজন্তুগুলিকেও দমন করিয়া মানুষের ইচ্ছাধীনে আনা হইয়াছে। প্যর্ণলে (Pernelet) নামক ফরাসী ভদ্রলোক কুমীর পুষিতে অত্যন্ত আনন্দ উপভোগ করিতেন। প্রথমে এই ভদ্রলোকটী এই কাৰ্য্য কেবলমাত্র সখের জন্ত করিতেন। ক্রমে তিনি ফরাসী জনসমাজের নিকট কুমীর পোষায় আপন নৈপুণ্য প্রকাশ করিতে আরম্ভ করেন । তিনি এক্ষণে ইংরাজদিগের নিকটে তাছার শিক্ষিত জন্তুদের শিক্ষা-কৌশল প্রদর্শন করিতেছেন।