পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] হইয়াছি, এখন বেশ বলও লাভ করিয়াছি। আমার মা আপনাকে হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা জানাইয়াছেন। আমি মার একমাত্র সস্তান ; আমাকে আপনি মৃত্যুর করাল গ্রাস হইতে উদ্ধার কবিয়াছেন ; কিন্তু ডাক্তার সাহেব, আমার জননী অর্থহীন, কেমন করিয়া যে আমরা আপনাকে * কৃতজ্ঞতা দেখাইব তাঙ্গ ভাবিয়া পাষ্ট না ।” বলিতে বলিতে কৃতজ্ঞতাভরে শাচার চক্ষুদ্বয় অশ্রপুর্ণ হইয়া গেল,—হৃদয়ের আবেগে কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হইয়া আসিতেছিল। ডাক্তার সহজ সরল মিষ্ট হাসি হাসিয়া শাচাকে বাধা দিয়া মধুর স্বরে বলিয়া উঠিলেন, “শাচী, তুমি কি বলিতেছ, আমি তো তেমন কিছুষ্ট করি নাই ; যে কোনো চিকিৎসাব্যবসায়ীই আমার দ্যায় এরূপ কাজ করিত। এতে আমার তেমন প্রশংসার কি আছে ?” . শাচ পুনরায় বলিল, “ন, মহাশয়, আমি বিধবা মাতার একমাত্র পুত্র, তাপনি আমার জীবন দান করিয়াছেন । কিন্তু আমরা বড় গরীব, আপনাকে উপযুক্ত ফি দিতে পারি নাই ; যা হউক তাতে আর লজ্জা করিয়া ফল নাই ; আপনি সদাশয় মহাপুরুষ। কিন্তু আমাদের মন কিছুতেই প্রবোধ মানে না । আমাদের প্রার্থনা, আপনি অনুগ্রহ প্রকাশে এই পিত্তল নিৰ্ম্মিত দীপাধারটি গ্রহণ করিয়া অামাদের কৃতাৰ্থ করুন। আপনার নিঃস্বার্থ পরোপকারের তুলনা নাই। এ জিনিষটা অতি সামান্ত, তবু ষ্টত অতি প্রাচীন, আর ইহাতে বিচিত্র কলা-কৌশলের পরাকাষ্ঠী প্রদর্শিত হইয়াছে । আমার স্বগীয় পিতা মহাশয় এই দীপাধারটি সযত্নে রক্ষা করিতেন। আমরাও বাবার অাদরের জিনিষ বলিয়া তাহার স্মৃতিচিকুরূপে এতদিন এ জিনিষটি রক্ষা করিয়া আসিতেছি । আমাদের এই আদরের জিনিষটি আপনাকে অর্পণ করিতে পারিলে কৃতাৰ্থ বোধ করিব।” এই কথা বলিতে বলিতে শাচা যেমন একদিকে দীপাধারটি কাগজের মোড়ক হইতে মুক্ত করিতে যত্ন করিতেছিল, অপরদিকে ডাক্তার কোশেল বলিয়া উঠিলেন, “শাচ, আমার জন্ত তোমাদের কিছু করার প্রয়োজন নাই, বস্তুতঃ আমি আমার কর্তব্য কাৰ্য্য মাত্র করিয়াছি, তজ্জন্ত কোন জিনিষ গ্রহণ করিতে নিতান্ত কুষ্ঠিত ; তোমাদের এজন্ত কোনরূপ আয়াস স্বীকারের আদেী প্রয়োজন নাই।” সংকলন ও সমালোচন—অপূৰ্ব্ব দীপাধার -> * . শাচ কাতর স্বরে বলিল, “না, মহাশয়, তাহ। হইবে না, আপনাকে ইহা গ্রহণ করিতেষ্ট কষ্টবে, নতুবা আমার মা নিরতিশয় দুঃখিত হইবেন, আমরা কিছুতেই হৃদয়ে শান্তি পাইব না ।” যুবকের চস্তস্থিত বাণ্ডিলটি এতক্ষণে আবরণমুক্ত হইয়া টেবিলের উপর আপনার অপূৰ্ব্ব সুন্দর মূৰ্ত্তি প্রকটিত করিল। তখন ডাক্তার সাহেবের বিস্ময়ের সীমা রছিল না। পূৰ্ব্বেষ্ট বলা হইয়াছে, সে জিনিষটি আর কিছুই নয়, একটি পিত্তল-নিৰ্ম্মিত দীপাধার। কিন্তু দীপাধারটি অনিন্দ্য সুন্দরী বিবসনা দুইটি পরীমূৰ্ত্তির হস্তে কৌশলে ংস্থাপিত হইয়াছে । আহা ! সেই পরীমূৰ্ত্তি দুইটি কি সুন্দর । কলা কল্পনার চরমোৎকর্ষ যেন আজ সজীব হইয়া অনুরূপ রূপ ধারণ করিয়া এই মূৰ্ত্তি দুইটিতে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে । এমন সুঠাম সুগঠিত মূৰ্ত্তি যেন বিশ্ববিধাতার অপূৰ্ব্ব অনন্ত সৃষ্টিতেও দুর্লভ। মনে হয় যেন ত্রিদিব শোভার ললামভূত উৰ্ব্বশ ও রম্ভ, অথবা আদি স্বষ্টির অনিন্দ সুন্দরী ইভা দেবী যুগলমূৰ্ত্তি ধারণ করিয়া, মুক্তবসনা হইয়া আজ এক্ট দীপাধার হস্তে ধরিয়া মানব-নয়নসমক্ষে আবিভূ তা হইয়াছেন। এই পরীমূৰ্ত্তি দুইটির হাব ভাব, বিলাস-চঞ্চল দৃষ্টি, যেন প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ফুটিয়া বাহির হইতেছে। তাহার এমনি আনমনে চঞ্চলপদে পাদপীঠোপরি দণ্ডায়মান, আর এমনি তাহদের অপাঙ্গ ভঙ্গি যে, মনে হয় যেন মূহুর্তমাত্র সময় মধ্যে তাহারা দীপাধারের কথা একেবারে বিস্মৃত হঠয়া যাইবে, আর দীপাধার অজ্ঞাতসারে তাছাদের সুকুমার করপল্লবের স্পর্শমুখে বঞ্চিত হইয়া ধরায় লুটাইবে,—তাহার এখনি যেন চঞ্চল চরণসঞ্চালনে পাদপীঠ হইতে অবতরণ করিয়াই মুনিজনমোহকর নৃত্য-লাস্তে ভুবন মাতাইয়া তুলিবে। কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টিতে ডাক্তার সাহেব এই অনিদ্যকান্তি দীপাধারটি বহুক্ষণ নিরীক্ষণ করিলেন। দেখিতে দেখিতে ডাক্তারের বদনমগুলে চিন্তার রেখাপাত হইল, তিনি কি ভাবিয়া ভ্ৰকুঞ্চিত করিলেন, চঞ্চল কুরাঙ্গুলিম্পর্শে র্তাঙ্কার মস্তকের পশ্চাদ্ভাগের সুবিন্যস্ত কেশরাশি বিশৃঙ্খল হইয়া গেল, অজ্ঞাতসারে অপরিস্ফুট ধ্বনিতে সামান্ত একটুকু নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বলিলেন,