পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] পারেন নাই যে বার্টি মরিয়া গেছে, তিনি ভাবিয়াছিলেন বোধ হয় অবসন্ন হইয়া পড়িয়া আছে, তাই তাহাকে উঠাইবার জন্ত বার বার পদাঘাত পর্য্যস্ত করিয়াছেন । জনসাধারণ এই বিচার অত্যস্ত আগ্রহের সহিত দেখিতেছিল। যখন প্রকাশ পাইল বাট নিজের স্বার্থের জন্য ফ্র্যাঙ্কের চিঠি পৰ্যন্ত চুরি করিয়াছিল তখন সকলেরই মন ফ্র্যাঙ্কের প্রতি একটা সহানুভূতিতে ভরিয়া উঠিল । আর কোনো বিশেষ গোলযোগ রহিল না । দেড় মাসের মধ্যেই সব নিম্পত্তি হইয়া গেল ;–ফ্র্যাঙ্ক দুষ্ট বৎসরের জন্ত কারাদও পাইলেন । এই দুই বৎসর তঁাচার দিনের পর দিন যেন একটা বিষাদময় জাগ্রত স্বপ্লেব মতে কাটিয়াছে,- চোখেব সামনে কেবলই সেই ভয়ঙ্কর দৃশুট – সেই মৃতু্যবিবর্ণ মুখ, সেই রক্তাক্ত দেহ ফুটিয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে ! কিছুতেই তাঙ্কাকে সম্মুখ হইতে সরাষ্টতে পারেন নাই পড়িতে গেলে পাতাব উপর তাহার পড়িয়াছে ; লিখিতে গেলে তাহারই স্মৃতির কথা ছাড়া বষ্টয়েব ছায়া আসিয়া আর কিছুষ্ট লিখিবার খুজিয়া পান নাই ; চুপ করিয়া বসিয়া থাকিলে তাঁহারই কথা কেবল মনে পড়িয়াছে,— রুদ্ধ কারাগার হইতে জানাল দিয়া যখন বাকিবের দিকে চাহিয়াছেন তখনই চোখে পড়িয়াছে সমুদ্রের উপকূলে সেষ্ট ক্ষুদ্র বাড়িটি যেখানে তাঙ্গরষ্ট সহিত তিনি একত্রে শুইতেন, বসিতেন, এবং যেখানে তিনি তাহাকেই হত্যা করিয়াছেন ! কী ভয়ঙ্কব ! ইভা স্থানত্যাগ করিয়া চলিয়া যান নাই—এ সময়টা ফ্র্যাঙ্কের কাছাকাছি থাকিবার জন্ত পিতাকে অনেক অনুনয় করিয়াছেন, পিতাও ইভার স্বাস্থ্যের ভয়ে তাহাতে অসন্মতি প্রকাশ করেন নাই । ইভার যে অমন স্বাভাবিক স্থিরতা তাহাও এখন স্নায়বিক উত্তেজনায় একেবারে ভাঙিয়া পড়িয়াছে— এখন কেবলই তিনি চোখের সামনে নানারূপ ভয়ের দৃপ্ত দেখেন—রক্তের দৃশু, বজের শব্দ ! এই কারণে আর্চিবল্ড কম্ভার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঙ্গকে স্থানান্তরে লইয়া যাইতে সাহস কবেন নাই । ক্টভ ফ্র্যাঙ্কের নিকটেই ছিলেন—মধ্যে মধ্যে কারাগারে গিয় তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতেন, চেষ্টা করিতেন থাইতেন, ভাগ্যচক্র ..&ፃጫ তাহাকে প্রফুল্ল করিয়া তুলিতে,--আশান্বিত করিয়া তুলিতে ;–বলিতেন বর্তমানের পীড়নে কাতর হইয়া পড়িয়ে না, ভবিষ্যতের পানে চাহিয়া বুক বঁধে । কিন্তু কিছুতেই র্তাহার বিমৰ্ষত কাটিত না ;– প্ৰতিৰারই তিনি কারাগার হইতে নিরুৎসাহ হইয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিতেন । ফ্র্যাঙ্ককে আশান্বিত করিতে না পারিলেও ইভা নিজে কিন্তু কখনো আশা হারান নাই—তিনি যে আশাতেই বাচিয়৷ ছিলেন । র্তাহার বিশ্বাস ছিল জীবনের এ অন্ধকার বেশি দিন নয়—র্তাহীদের জন্ত আনন্দ, আলোক ভবিষ্যৎ বহন করিয়া আনিতেছে। র্তাহার মন বলিত প্রতীক্ষা কর তাহারই আশায়, চাহিয়া থাক তাহারই অপেক্ষায়— আসিতেছে নবীন জীবন ! নবীন জীবন ! সে কী সুখেব ! তাঙ্গার সমস্ত হৃদয় নাচিয়া উঠি । তালে ! সেই আনন্দের স্তবে, সেই জানন্দের কিন্তু কেমন করিয়া তাঙ্গার হৃদয়ে এমন আশার বাণী ধ্বনিত হইয়া উঠিতেছে ? তাঙ্গার জীবনেব যে দারুণ অভিজ্ঞতা তাহা তো নৈরাশুকেই বাড়াইঃ তোলে—তবে কেন এ আশা ? না ! না ! সে কথা ভাবিয়া কাজ নাই । ভবিষ্যৎ আমার উজ্জ্বল, মুন্দর নিশ্চয় ;–সে মলিন হইবার এমন কি ,র্তাহার চোখের সামনে যখন সব নানারূপ বিভীষিকা থেলিয়া বেড়ায় তাহাকে অভিভূত করিয়া ফেলিত, তখনও তিনি নিরাশ হইতেন ন}— অনাগত সুখের আশায় সমস্ত ভয় এবং দুর্ভাবনাকে ঠেলিয়। রাখিতেন । কল্পনায় মুখের চিত্র আঁকিতে আঁকিতে সময় সময় তাহার মুখে আনন্দের রেখাও ফুটিয়া উঠিত ;– যখন তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে হাতে একখানি ক্যালেণ্ডার লইয়া সেইদিনকার তারিখটা পেন্সিল দিয়া সজোরে কাটিয়া দিতেন তখন সেই মুখের ভবিষ্কং ক্রমেই দূর হইতে নিকটে আসিতেছে ভাবিয়া তাহার চিত্ত আশায় আনন্দে পরিপূর্ণ হষ্টয়া উঠিত। কখনো কখনো তারিখগুলা তিনি জমাইয়। রাখিতেন—তারপর এক সময় ছয় সাত দিনের তারিখ একেবারে চাচিয়! ফেলিতেন—যেন ঃখের সময়টা পশ্চাতে রাখিয়া দ্রুত অগ্রসর হইতেছেন সুখস্বপ্নময় ভবিষ্যতের দিকে ! সে কী আননা ! নয় !