পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা বিশেষ উল্লেখ নাই। ভারতবর্ষের অতি নিকটে ব্ৰহ্মদেশে কয়েকটি কেরোসিনের খনি আছে। বহুদিন এগুলি অনাদৃত অবস্থায় পড়িয়াছিল। আজ কয়েক বৎসর হইতে কতকগুলি ইংরাজ-কোম্পানি এই সকল খনি হইতে তৈল উঠাইয়া কেরোলিন প্রস্তুত করিতেছেন। মাটি হষ্টতে যখন উঠানো যায়, তখন জিনিসটাকে ঠিক কেরোসিনের আকারে পাওয়া যায় না । নানা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিষ্কার করিলে আকরিক তৈল কেরোসিন হইয়া দাড়ায় । সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসর ধরিয়া এ প্রকার একটা জিনিসের সহিত পরিচিত থাকা সত্ত্বে ও বৈজ্ঞানিকগণ উহাকে বড়ই উপেক্ষা দেখাইয়া আসিতেছিলেন । আমাদের নিতা ব্যবহার্য্য প্রায় সকল জিনিসেরই রাসায়নিক সংগঠন ও উৎপত্তি-তত্ত্ব বহুদিন হইতে স্থির চক্ৰয়া রহিয়াছে, কিন্তু কেরোসিনের উৎপত্তি নির্ণয়ের জন্ত কোন প্রাচীন বৈজ্ঞা নিকই বিশেষ চেষ্টা করেন নাই । কেবল গত পঞ্চাশ বৎসর হইতে কোন কোন বৈজ্ঞানিক এ সম্বন্ধে দুই একটি কথা বলিতে আরম্ভ করিয়াছেন। সোনা রূপ লোহা ইত্যাদি আকরিক জিনিস বটে, কিন্তু ইহারা মূল-পদার্থ। কাজেই ইছাদের উৎপত্তি নির্ণয়ের আপশুক হয় না । এগুলি যখন অপর জিনিসের সচিত মিশ্রিত থাকে তখনে এই সংমিশ্রণের পদ্ধতিটি বুঝ৷ যায় । যাহা স্বভাবতঃ যৌগিক তাহারই উৎপত্তি আবিষ্কার করা কষ্টসাধ্য। কয়লা খনিজপদার্থ এবং যৌগিকও বটে। কিন্তু জিনিসটা নিজের পরিচয় নিজেই দিয়া ফেলে । ইহার ভিতরে যে লতাপাত পুষ্পপল্লবের ছাপ থাকে, তাঙ্গ হইতে মুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, উদ্ভদের দেহই রূপান্তর গ্রহণ করিয়া কয়লার উৎপত্তি করে । কেরোসিনের উৎপত্তিতত্ত্ব খোজ করিতে গেলে এ প্রকার কোন স্বত্রই পাওয়া যায় না । জিনিসটার নির্দিষ্ট আকার নাই, এবং রাসায়নিক সংগঠনও আবার সকল স্থানের তৈলে সমান দেখা যায় না । অনুসন্ধান আরম্ভ করিতে গেলে পূৰ্ব্বোক্ত অসুবিধাগুলি অমুসন্ধিৎসুর উদ্যম ভঙ্গ করিয়া দেয় । আমরা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি, কেবল গত পঞ্চাশ বৎসর হইতে বৈজ্ঞানিকগণ কেরোসিনের উৎপত্তি নিরূপণের জন্ত চেষ্টা করিতেছেন । ইহার প্রথম ত্রিশ বৎসরের অনুসন্ধানে সংকলন ও সমালোচন—কেরোসিনের উৎপত্তি 이 জিনিসটা জীবদেহ হইতে উৎপন্ন বলিয়। সিন্ধান্ত হইয়াছিল। কয়লাও জীবদেহজাত । কি প্রকার রাসায়নিক পরিবর্তনের ভিতর দিয়া উদ্ভিদের দারুময় দেহ কয়লায় রূপান্তরিত হয়, বৈজ্ঞানিকগণ তাহ ঠিক বলিয়া দিতে পারেন । কিন্তু কেরোসিন-উৎপত্তির রাসায়নিক প্রক্রিয়ার বিবরণ ইহঁাদের নিকট হইতে পাওয়া যায় না। উপর উপর কতকগুলি প্রমাণ সংগ্ৰহ করিয়া, হয় প্রাণিদেঙ্গ, না হয় উদ্ভিদদেহু হইতে জিনিসটার উৎপত্তি হইয়াছে বলিয়াই গত শতাব্দীর বৈজ্ঞানিকদিগকে নীরব থাকিতে হইয়াছিল। কেরোসিন সম্বন্ধে প্রকৃত গবেষণা গত কুড়ি বৎসর হইতে বিশেষ ভাবে চলিতেছে । ফ্রান্স, রুসিয়া, ইংলণ্ড এবং আমেরিক প্রভৃতি প্রায় সকল দেশেরই বড় বড় বৈজ্ঞানিক ঠগতে যোগ দিয়াছেন । গবেষণার ফলাফল আজও সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয় নাই । যাহা নানা গিয়াছে তাহাতে বোধ হইতেছে, আধুনিক বৈজ্ঞানিকদিগের মধ্যে কেঙ্কই কেরোসিনকে জৈব পদার্থ বলিয়া মানিতে চাহেন না । ইহা বা বলিতেছেন,—কেরোসিনকে বিশ্লেষ করিলে যে সকল মূল-পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়, ভূগর্ভে তাহাদের কোনটিরই অভাব নাই। পরীক্ষাগারে যেমন নান৷ পদার্থের সংযোগ-বিয়োগে আমরা বিশেষ বিশেষ যৌগিক । পদার্থ প্রস্তুত করি, ভূগর্ভস্থ সেই হাইড্রোজেন সেই অঙ্গার প্রভৃতি পদার্থগুলি ভূগর্ভের তাপেই মিলিত হইয়া কেরোসিনেব উৎপত্তি করে । স্বপ্রসিদ্ধ ফরাসী রসায়নবিদ বাৎলে (Berthelot) সাহেবের বিশেষ পরিচয় প্রদান নিম্প্রয়োজন । জৈব রসায়নশাস্ত্রে তিনি বর্তমানকালে অদ্বিতীয় মহাপণ্ডিত ছিলেন । কেরোসিন্‌ সম্বন্ধে নব-সিদ্ধান্তটিকে তাহার গবেষণার ফল বলা যাইতে পারে। ইনি দেখিয়াছিলেন, সোডিয়ম্ পটাসিয়ম্ জাতীয় ধাতু (Alkali metals বা লৌহকে অত্যন্ত উষ্ণ করিয়া যদি জলীয়-বাষ্প এবং অঙ্গারক বাম্পের (Carbonic oxide) সংস্পর্শে আনা যায়, তবে ইহাদের মধ্যে আপন হইতেই একটা রাসায়নিক কার্য চলিতে থাকে। ইহাতে অঙ্গারক বাষ্প এবং জলের অক্সিজেন ( অম্লজান ) বিযুক্ত হইয় অবশিষ্ট খাটি অঙ্গার এবং হাইড্রোজেন ( উদজান ) পরস্পর সংযুক্ত হইয়া পড়ে। এই নূতন