পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] প্রকৃতপক্ষে ভাষা কঠিন হয় । সহজ ভাব প্রকাশ করিবার জন্ত কঠিন শব্দ ব্যবহার করিলেও ভাষার কাঠিন্ত প্রতীয়মান হয় না । অথচ কঠিন ভাব প্রকাশ করিতে যাইয়া অযুক্তাক্ষরবিশিষ্ট অতি সরল শব্দ ব্যবহার করিলেও ভাষা কঠিনই থাকিয়া যায়। সুতরাং প্রথম কষ্টতেই কঠিন বা বহুসংখ্যক শবা শিক্ষায় প্রবৃত্ত না হইয়া শিক্ষার্থীর স্বীয় ভাবপ্রকাশোপযোগী বাকরচনা করিতে শিক্ষা করিতে আরম্ভ করা উচিত। ভাবসমূহ বয়োবুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেমন কঠিন, জটিল ও স্বসম্বদ্ধ হইতে থাকিবে, তেমনি তাঙ্গকে কঠিন ও জটিল বাক্যের সাহায্য অবলম্বন করিতে হইবে, ক্রমশঃ সে ভিন্ন ভিন্ন পরস্পর বিচ্ছিন্ন বাক্যসমূহ পরিত্যাগ করিয়া শৃঙ্খলীকৃত ও স্বসম্বদ্ধ এবং ঐক্যবিশিষ্ট বাক্যপরম্পরা অবলম্বন করিবে । মাতৃভাষা শিক্ষা করিতে গুইলে শিক্ষার্থীকে প্রথম ছষ্টতেই তাহার আজন্মপ্যবহৃত বাক্যবচনা-প্রণালী তাঙ্কার সৰ্ব্ববিধ মনোভাল প্রকাশে প্রয়োগ করিতে হইবে । এষ্ট প্রয়োগ সম্বন্ধে কতকগুলি সাধারণ নিয়ম নির্দেশ করা যাক্টতে পারে । প্রথমতঃ, সমগ্র জ্ঞেয় জগতই তাহার মনোবৃত্তিনিচয়ের বিকাশের কারণ। সুতরাং কি প্রাকৃতিক, কি মানবীয় উভয় বিশ্বই তাতার বাক্য প্রয়োগের ক্ষেত্র। এজন্ত তাহার বাক্যরচনা কোন এক পদার্থ বা এক বস্তুতে আবদ্ধ না থাকিয়া সৰ্ব্ব পদার্থ এবং জগতের সৰ্ব্ববিধ ঘটনাতেই প্রয়োগ করিতে হইবে। ইহাতে একদিকে তাহার ভাষার বৈচিত্র্য ও জটিলতা জন্মিবে, অপরদিকে বিশ্বের বিবিধ সজীব ও নির্জীব পদার্থ সম্বন্ধে জ্ঞান জন্মিবার পক্ষে সহায়তা হইলে । শিক্ষার্থ কেবল মাত্র ভাষাই শিক্ষা করে না । ভাষার সঙ্গে সঙ্গে ভাল ও ধারণা, স্বষ্টি এবং জ্ঞান বিকাশের উপযোগী বিবিধ বিদ্যাও শিক্ষা করে। সুতরাং ভাষা শিক্ষার সময়ে যদি অন্তান্ত বিদ্যালব্ধ জ্ঞান প্রয়োগের বন্দোবস্ত থাকে তাহা হইলে সকল বিদ্যার মধ্যে পরস্পর-সহায়তা-বিধায়ক সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হষ্টয়া যায়। ইহাতে সময় ও পরিশ্রমের লাঘব হয়—ভাষা শিক্ষা জীবন্ত হয় এবং অন্যান্ত বিদ্যাসমূহ বদ্ধমূল হইতে পারে। দ্বিতীয়তঃ, বয়সের তারতম্যানুসারে বাক্যরচনা ভাষাশিক্ষা 어이 প্রয়োগের ক্ষেত্রের এবং বাক্যরচনা-প্রণালীর তারতম্য হওয়া উচিত। সমগ্ৰ জগতই শিক্ষার্থীর জ্ঞেয় বটে, কিন্তু সামগ্রটী একই বয়সে জ্ঞেয় নহে । এইজন্স প্রত্যক স্তরে শিক্ষার্থীর সুপরিচিত পদার্থ এবং প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহেই বাক্যরচনা-প্রণালী আবদ্ধ রাখিতে হইবে । সুতরাং জ্ঞেয় পদার্থসমূহের বিভাগ ও বিশ্লেষণ সাধন করিয়া সুবোধ্য অংশগুলিকেষ্ট বাক্য রচনার বিষয় করিতে হইবে । এই উপায়ে ক্রমশঃ বিশ্বের যাবতীয় পদার্থ শিক্ষার্থীর ভাষার আয়ত্ত করিতে হইবে । তৃতীয়তঃ কোন পদার্থের বর্ণনা করিতে যাইয়া শিক্ষার্থী যে বাক্য কয়েকবার রচনা করিয়াছে সেই বাক্যসমূহেরই সাহায্য প্রাপ্ত হওয়া যায় এইরূপ নুতন বাক্য রচনা করিতে শিক্ষা করিতে হইবে । যে বিষয়ে কখনও কোন আলোচনা হয় নাই তাঙ্গর সঠিত পূৰ্ব্বপরিচিত বা আলোচিত বিষয়ের যদি কোনরূপ সম্বন্ধ না থাকে তাঙ্গ হইলে সেষ্ট নুতন বিষয় সম্বন্ধে বাক্যরচনা করিতে চেষ্টা করা উচিত নহে। পূৰ্ব্বের অভ্যাস অবলম্বন করিয়াই নূতন প্রয়াস করিতে হইবে। সুতরাং বাক্য হইতে বাক্যাস্তরে গমন করিলার সময়ে ভাব হইতে ভাবাস্তরে গমনের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে । চতুর্থতঃ কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীর একেবারেই বহুবাক্য রচনা করিতে যাওয়া উচিত নহে। বাকাসমূহ প্রথম অবস্থায় সরল ও অজটিল থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রথমাবস্থায় বাক্যসমূহ বৈচিত্র্যপূর্ণ ও স্বাক্ষভাবব্যঞ্জক না হইয়া স্থলগুণবাচক এবং সহজভাবজ্ঞাপক হওয়া উচিত । পঞ্চমতঃ, উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্রভাব-প্রকাশোপযোগী বিচিত্র বাক্যরচনা শিক্ষা করিতে হক্টবে। কোন পদার্থের সম্বন্ধে স্থল ও সবলভাবে বাক্যরচনা না করিয়া ক্রমশঃ সূক্ষ্ম ও বিস্তৃতভাবে করিতে হইবে। এইরূপ বাক্যরচনা দ্বারা ভাষার প্রণালী আয়ত্ত করিতে পারিলে শব্দসম্পদ বৃদ্ধি করিবার জন্য এবং উচ্চ সাহিত্য পাঠ করিবার জন্ত অভিধানের সাহায্য গ্রহণ করিয়া প্রচলিত শব্দের সহিত পরিচিত হইতে হইবে । অথবা আলোচিত সাহিত্য হইতেই শব্দ বাছিয়া লইয়া প্রযোগ করিতে শিক্ষা করিতে হইবে । এষ্ট উপায়ে কথা বলিয়া এবং প্রবন্ধ