পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনায়ন শ্ৰীমণীন্দ্রলাল বসু ২৩ এক বৎসর কাটিয়া গেল। থার্ড ইয়ারের আরম্ভ । সকলে আশা করিয়াছিল, অরুণ আই-এ পরীক্ষাতেও স্কলারশিপ পাইবে, কোনমতে সে প্রথম বিভাগে পাস করিল। সেকেণ্ড ইয়ারে সে কলেজ-পাঠ্য পুস্তক কিছুই পড়িত না, পরীক্ষার পূৰ্ব্বে দেড় মাস রাত্রি জাগিয়া নোট মুখস্থ করিয়া পাস করিল। শিশির সেন স্কলারশিপ পাইল, ইতিহাসে অরুণের অনেক উচুতে ভাল মার্ক পাইয় পাস করিয়া গেল। অরুণ সেজন্য কিছুই ক্ষুন্ন নয়। জয়ন্ত ইংরেজীতে ফেল করিল। তজ্জন্ত সে-ও মোটেই দুঃখিত নয়। পৃথিবীর কোন বড় কবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ঠিকমত পাস করিতে পারিয়াছেন ? আই-এ পরীক্ষার পর পুরাতন বন্ধুদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হইয়া গেল। অরুণ প্রেসিডেন্সীতেই বি-এ পড়িতে লাগিল, ইতিহাসে অনাস লইল ; শিশির সেন ইংরেজীতে অনাস" লইল । জয়ন্ত রিপন কলেজের সেকেণ্ড ইয়ারে গিয়া ভৰ্ত্তি হইল, পড়াশোনা করিবার ইচ্ছা তাহার বিশেষ নাই। ভূদে বৃন্দাবন মেডিক্যাল কলেজে ভৰ্ত্তি হইল, সে বড় সাজন হইবে, ইহাই তাহার জীবনের স্বপ্ন । চালিয়াং চট্টে সেকেণ্ড ডিভিসনে পাস করিয়া সেণ্ট-জেভিয়ার কলেজে বি-এ পড়িতে গেল ; কলেজের ফাদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠত করিয়া যদি ইউরোপে যাইবার সুবিধা হয় । তাদের নিকট সে ফরাসী ভাষাও শিখিবে। দ্বিজেন খুব ভালভাবে পাস করিয়৷ ইংলণ্ডে পড়িতে চলিয়া গেল, তাহার পিতার ইচ্ছা,লওনে মাটিক দিয়া লণ্ডনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভৰ্ত্তি হইবে, আই-সি-এস-এর জন্য চেষ্টা করিবে । অরুণের স্কুল-সহপাঠিগণের মধ্যে প্রেসিডেন্সীতে বি-এ ক্লাসে রহিল স্বহাস, মোহিত, বাণেশ্বর ও হরিসাধন । অজয় আই-এসসি পাস করিয়া বি-এসসি ক্লাসে ভৰ্ত্তি হইল। তাহার ইচ্ছা শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভৰ্ত্তি হয়, কিন্তু ইহাতে হেমবাবুর বিশেষ অমত। তিনি স্থির করিয়া রাখিয়াছেন, অজয় কোনমতে গ্রাজুয়েট হইতে পারিলে বড় সাহেবদের ধরিয়া গভর্ণমেণ্টের কোন চাকরির ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। ইহাতে অজয়ের আপত্তি । মাঝে মাঝে পিতাপুত্রে বচসাও হইয়া গিয়াছে। সে স্বাধীন ব্যবসা করিতে চায়। বিশেষতঃ ইঞ্জিনিয়ার হইবার জন্য তাহার প্রবল আগ্রহ, বৰ্ত্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার সে হইবে বাহক, পুরোহিত। ঘরবাড়ি তৈরি নয়, দুর্গম বনপথে গিরিগাত্রে রেল-লাইন পাতা, ঝর্ণার নদীর জল বাধিয়া বৈদ্যুতিক শক্তি তৈরি করা, লোহ-তৈয়ারির বড় কারখানা চালান, সেই কারখানায় লোহা হইতে চাষীর লাঙল হইতে ধনীর মোটরকার, এরোপ্লেন সকল জিনিষ প্রস্তুত হইবে। অতি অনিচ্ছার সহিত অজয় বি-এসসি ক্লাসে ভৰ্ত্তি হইল। মনে মনে ঠিক করিল, বি-এসসি পাস করিয়াই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভৰ্ত্তি হইবে । ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সম্বন্ধে অরুণের সহিতও অজয়ের বহু তর্ক হইয়া গিয়াছে । অরুণ এই যান্ত্রিক ইউরোপীয় সভ্যতার বিরোধী। সে বলে এই যন্ত্রপ্রধান বণিকসভ্যতা মানবাত্মার অমঙ্গলকর, ভাঙ্গার বীভৎস কদৰ্য্যতা, হিংস্র লোলুপতায় পৃথিবী পীড়িত, তাছার চরম ফল জাতিতে জাতিতে মহাযুদ্ধ। অরুণের মতে, এই ইউরোপীয় সভ্যতার বিরুদ্ধে দাড়াইয়া ভারতের আধ্যাত্মিক সভ্যতার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। অজয়কে সে এই যন্ত্ৰ-দানবের পূজারী হইতে দিতে চায় না। অরুণের যুক্তি শুনিয়া অজয় হাসে, বলে, স্বপ্নবিলাসী কবি, বাস্তব পৃথিবীতে একবার নেমে | آبگی বস্তুতঃ, থার্ড ইয়ারে উঠিয়া অরুণের যেন নবজীবন আরম্ভ হইল। কলেজের বই পড়া সে ছাড়িয়া দিল, বন্ধু-বান্ধবদিগের সহিত যোগও বিশেষ রহিল না। সে হইয়া উঠিল কল্পলোকের অধিবাসী, নানা যুগের নানা দেশের কাব্য-সাহিত্যের চিরন্তন রসসমূত্রে স্বধাপান করিয়া কল্পনার পাল উড়াইয়া তরী