পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏ8 করা যায় শুধু তার ভালবাসার জোরে। জান ত দিন দিন, মাস মাস, বৎসর বৎসর করিয়া জীবন অতিবাহিত করা কত কঠিন । নারীর ভালবাসা না থাকিলে তা একেবারেই অসম্ভব হইত।” আমার বঞ্চিত বিবাহিত জীবন তখন সদ্য স্ত্রীবিয়োগবিধুর। আচারিয়া তাহার কিছুই জানিল না, কিন্তু আমার কণ্ঠস্বরের আর্দ্রতা ও মুখের ভাববৈষম্য সে লক্ষ্য করিল এবং ঈষৎ হাসিয়া কছিল, “তুমি এক জন মস্ত বড় প্রেমিক দেখিতেছি, কিন্তু স্ত্রীকে কেন সঙ্গে আন নাই ।” “না ভাই সে আসিতে চাহিল না, ছেলেবেলায় সে দার্জিলিঙে মানুষ হইয়াছে তাই আর সে দার্জিলিং আসিতে চায় না ।” “আশ্চৰ্য্য ত!” কথাটা সে এমন হঠাৎ ও বিম্মিতভাবে বলিল যে আমার মনে কৌতুহল হইল। জিজ্ঞাসা করিলাম, “কেন, আশ্চৰ্য্য কি ? অনেক বড়লোকের মেয়ে ত হিল-স্কুলে পড়ে।” আচারিয়া নিতান্ত অপটুভাবে দীর্ঘনিশ্বাস চাপিয়া কহিল, “না ভাই এম্‌নি বলছিলাম।” “এমনি কোন বাজে কথা বলবার পাত্ৰ তুমি নও ; যদি ব্যাপারটা খুলিয়া বল সুখী হইব। আমরা তত ক্ষণে ভিক্টোরিয়া-উদ্যানে প্রবেশ করিয়াছি। মধ্যগগনেই সূৰ্য্য অস্ত যাইতেছে এবং সমস্ত দিন ব্যাপিয়৷ যে পাতলা কুয়াশার প্রলেপ দিঙমণ্ডল অস্পষ্ট করিয়া রাখিয়াছিল তাহা হঠাৎ নীল পাইন গাছগুলিকে আশ্রয় করিয়া গাঢ়তর হইবার লক্ষণ প্রকাশ করিল। আমরা একখানি বেঞ্চিতে বসিলাম। আচারিয়া বলিল, “তুমি বাস্তবিকই স্বর্থী, কিন্তু তোমাকে আমি হিংসা করি না । আমি যদি আমার হতভাগ্য জীবনের ইতিহাস তোমাকে খুলিয়া বলি, তুমি হয়ত হাসিবে ; কিংবা ভাবিবে আচারিয়াটা একটা আস্ত পাগল ।” মনে মনে ভাবিলাম, যাহা হউক ঔষধ ধরিয়াছে। দাৰ্জিলিঙের ফুয়াশামলিন ভিক্টোরিয়-উষ্ঠানে বসিয়া মান্দ্রাজী উকিলের প্রেমকাহিনী শুনিবার তেমন আগ্রহ ছিল না, কিন্তু ভূবিদ্যা, উদ্ভিদতত্ত্ব, পদার্থবিজ্ঞান প্রভৃতির আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার কোন উপায়ও ছিল না ; তাই প্রবাসী SN98R বলিলাম, “আচারিয়া সে সন্দেহ বৃথা । নিজের জীবনে নে ভালবাসার আশীৰ্ব্বাদ পাইয়াছে সে কি কখনও পরের ভালবাসাকে উপহাস করিতে পারে ? বিশেষতঃ তোমার সঙ্গে পরিচয় জীবনে এই প্রথম, আর হয়ত এই শেষ। আমরা যখন পরস্পরের কৰ্ম্মভূমিতে ফিরিয়া যাইব, তুমি যখন প্রবল পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতায় প্রবীণ বিচারকের স্বখনিদ্রার ব্যাঘাত ঘটাইতে চেষ্টা করিবে, আমি যখন বাংলা দেশের মাঠে-ঘাটে জরিপ করিয়া রামের জমি শ্বামের নামে তালিকাভূক্ত করিব, তখন কাহারও কথা কাহারও মনে থাকিবে না। তুমি প্রাণ খুলিয়া তোমার প্রেমকাহিনী বল ; অবহু যদি তোমার কোন বাধা না থাকে ৷” “কিছু না, তবে আমি ভাবিতেছিলাম ব্যাপারটা এতই সামান্ত আবার এতই অদ্ভুত যে তোমার কাছে হয়ত বিরক্তিজনক মনে হইবে । বিশেষতঃ সে এখন কোথায় আছে জানি না ; হয়ত স্বামী ও পুত্রপরিবারপরিবৃত হইয়া ইহার মহামুখে আছে । তাহাকে একদিন ভালবাসিতাম একথা বলাও হয়ত পাপ ।” “কাহাকেও ভালবাসার মধ্যে কোন পাপ নাই ।” “তবে শোন। আমার দাদা তখন পূর্ণিয়া জেলাতে একটা নূতন রেল-লাইন নিৰ্ম্মাণের কার্ধ্যে নিযুক্ত ছিলেন। আমি তখন বি-এ পড়ি, এক ছুটিতে দাদার কাছে বেড়াইতে যাই । বলিলে বিশ্বাস করিবে না, আমাদের এই ভারতবর্ষে এমন অমনোহর প্রাকৃতিক দৃপ্ত থাকিতে পারে জানিতাম না। কোশী নদী একটা বিরাট অক্টোপাসের মত সমস্ত দেশটাকে জড়াইয়া ধরিয়া আছে। কোশী যেমনই অস্থিরমতী পাগলী, তেমনই বর্ষাবিশেষে প্রচণ্ড স্রোতময়ী। দুই-চারি বৎসর একটা খাদ দিয়া প্রবাহিত হইতে থাকে ; দুই তীরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাম গড়িয়া উঠে, তার পর হঠাৎ পাৰ্ব্বত্য দেশে প্রচণ্ড বারিপাতের ফলে ক্ষীণকায় ক্ষুদ্র নদী পন্ধিল জলোচ্ছাসে ফুলিয়৷ উঠে । তল ও তীরদেশ কাটিয়া ভাঙিয়া উপছাইয়া, গ্রাম দেশ নিমজ্জিত করিয়া, মানব ও পশু ভাসাইয়া ও কৰ্ষিত ক্ষেত্রের উপর রাশি রাশি অনুর্বর বালুক নিক্ষেপ করিতে থাকে। আশপাশে দশ-বিশ মাইল ব্যাপী গ্রাম জনপদের কোন চিহ্ন থাকে না। সেই অনুর্বর অভ্ৰালু বালুকারাশি হইতে রস গ্রহণ করিয়া কেবল পাতলা কাশবন ও চার: