পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وقاه প্রবাসী SNご8ミ ভাষাশিক্ষা বিষয়ে আমার পশ্চাৎবর্তন হইতে লাগিল। উত্তম পুরুষের সৰ্ব্বনামের সহিত অধম পুরুষের ক্রিয়াপদ মিশাইয়৷ আমি যে-সব প্রেমবাক্য রচনা করিলাম তাহ যে-কোন উচ্চশ্রেণীর বঙ্গভাষা উত্তীর্ণ ইংরেজেরও গৌরবের বিষয় হইত না । আমার মান্দ্রাজমর্ত্যনিবাসী মন দার্জিলিং-ত্রিদিবনিবাসী দেবকস্তার ধ্যানে নিযুক্ত রহিল। দার্জিলিং পাহাড়ের বনানী প্রস্তর, ফুলফল, পশুপক্ষী রাস্তাঘাট সম্বন্ধে এত তথ্য সংগ্ৰহ করিলাম যে কেবলমাত্র একখানা দার্জিলিং-ভ্রমণকাহিনী লেখা বাকী রহিল। পরীক্ষার বৎসর বলিয়া দাদা তাহার কাছে যাহতে নিষেধ করিলেন এবং পূর্ণিয়াপ্রাস্তর যে মান্দ্রাজের যুবজন-খ্ৰীষ্টীয় হোষ্টেলের কামর হইতে বি-এ পরীক্ষার পড় তৈরি করিবার পক্ষে বেশী উপযুক্ত স্থান সেযুক্তি অগ্রাহ করিলেন । শীলার সহিত দেখা হইল না । পরীক্ষার পরে আর কোন যুক্তিই রহিল না। দাদার কাছে গেলাম এবং শীলার সহিত দেখা হইল। এই এক বৎসরে তাহার অদ্ভূত পরিবর্তন হইয়াছে। আগের বার তাহাকে দেখিয়াছি নিতান্ত বালিকাবয়সী । সেই নিরাবরণ, নিরাভরণ উন্মুক্ত প্রাস্তরের মত তাহার মনটিও ছিল অত্যন্ত সরল। আমাদের এই বৰ্ত্তমান আলাপ-পরিচয়ের সহজতার মধ্যে যে ভবিষ্য জীবনের একটা জটিলতর প্রশ্ন লুকাইয়া থাকিতে পারে তাহ তাহার মনে হইত না । সে তাহার শৈলপ্রবাসের কত গল্পই না করিত । কিন্তু এবার দেখিলাম তাহার দেহে যেমন পরিবর্তন হইয়াছে, তাহার মনেরও তেমনি অপূৰ্ব্ব রূপান্তর ঘটিয়াছে। সে আর এখন তেমন সহজ ভাবে যখন-তখন আমার সহিত বেড়াইতে বাহির হইতে চাহিত না । কারণ জিজ্ঞাসা করিলে আরক্ত ও আনতমুখ হইত। আমি তখন প্রারব্ধ যৌবনের সমস্ত রঙীন স্বপ্ন দিয়া আমার মানসীমূৰ্ত্তি গড়িয়া তুলিয়াছি। হৃদয়তটভূমিতে এত সব পরিপূর্ণ ভাবের তরঙ্গ আসিয়৷ আঘাত করিত যে এক-এক দিন অভিভূত হইয়া পড়িতাম । মনে হইত পৃথিবীতে যাহাকে ইচ্ছা সৰ্ব্বস্ব দিতে পারি, যাহার জন্য ইচ্ছা প্রাণ দিতে পারি, যে-কোন দুঃসাধ্য কাৰ্য্য করিতে পারি, যে-কোন নীচতাকে তুচ্ছঞ্জান করিতে পারি। যদি আমার মানসলোকের সেই কল্পলক্ষ্মীকে শুধু এ কথাটুকু জানাইতে পারি, হে দেবী, এ শুধু তোমারই জন্য। লোষ্ট্রকাষ্ঠেবদ্ধ পৃথিবী হইতে স্বপ্ন ছুটিয়া গিয়াছে, সাতসমুদ্র তের-নদীর পারে শায়িত রাজকন্যারা রাজপুত্রদের শৌর্যবীর্ষ্যে শাপমুক্ত হয় না, কিন্তু আজও পৃথিবীব্যাপী যুবকের নারীর অনুগ্রহলাভের জন্য প্রাণকে তুচ্ছঞ্জান করে। আদিমযুগের রাজপুত্ৰ এখনও একটা বিশিষ্ট বয়সে পুরুষের মনে জাগিয়া উঠে। সত্য বলিতে কি, তুমি আমাকে হয়ত একটি আস্ত গর্দভ মনে করিবে, কিন্তু আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলাম হয় শীলাকে লাভ করিব, নচেৎ জীবন দান করিব।” হাসিয়া উত্তর দিলাম, “মোটেই ন! আচারিয়া, তবে মনে করিলেও ক্ষতি ছিল না । নারীর ভালবাস বা ছলন দ্বারা গর্দভ বনে নাই এমন পুরুষের সংখ্য পৃথিবীতে বেশী নয় ।” “একদিন সন্ধ্যার পর দাদা আমাকে তাহার ঘুরে ডাকাইলেন এবং অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে বলিলেন, “শিব, তোমার বয়স হইয়াছে। শীলার সহিত তোমার আচরণ কিছু গৰ্হিত হইয়াছে এমন কথা বলি না কিংবা দেশ ভাষা আচার ইত্যাদির বাধা সত্ত্বেও তোমরা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হইবে না এমন কথাও বলিতে চাহি না । কিন্তু তোমাকে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করিতে হইবে। তুমি যদি শীলাকে সত্যই ভালবাস, তবে তাহাকে লাভ করিবার যোগ্যতা তোমাকে অর্জন করিতে হইবে । এ সম্বন্ধে শীলার মাবাপের সহিত আমার কথা হইয়াছে। শীলার বাবা সরকারী চাকরির বাধা পথ ধরিয়া জীবনযাত্র যাপন করেন, সমাজ ও সংস্কার তুচ্ছ করিয়া তোমার হস্তে একমাত্র কন্যা সম্প্রদ।করিতে পারেন, তুমি যদি অন্ততঃ একটা প্রদেশীয় চাকরিও লাভ করিতে পার । অতএব এখন হইতে প্রেম-চর্চা ত্যাগ করিয়া তোমাকে প্রতিযোগী-পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে, এবং আপাতত: শীলার সহিত দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করিতে হইবে। শীলার মা'র এই ইচ্ছা” এই বলিয়া তিনি মুদ্র হাসিয়া আমার পৃষ্ঠদেশে মৃদ্ধ করাঘাত করিয়া উৎসাহ দিলেন। অনেক দিন অনেক কথামনে হইয়াছে; ভাল মন্দও অসার বহুবিধ চিন্তা করিয়াছি। সে চিন্তার কোন ধারা ছিল না। দাদার এই বাক্য কয়টি আমার চিন্তাধারাকে একটা বিশিষ্ট