পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক প্রবাহে চালিত করিল। প্রথমট মনে বড় ক্ষোভ হইল। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্য্যন্ত যে দু-একটা পরীক্ষা দিয়াছি তাহার ফল বিশেষ মন্দ হয় নাই ; শৈশব অবধি কেহ বোকা বলে নাই, চেহারা দেখিতে ভাল বলিয়া জানিতাম। কিন্তু আমার বিদ্যাবুদ্ধি স্বাস্থ্য চরিত্ৰ—ইহার কোনটার বিশেষ মূল্য শীলার মা বাবার নিকট রহিল না। শীলার মা'র উপর রাগ হইল ; শীলার প্রতিও কেমন একটি অভিমান হইল। কিন্তু ক্রমে যখন উত্তপ্ত মস্তিষ্ক শীতল হইল, নিজের আত্মগরিমার কুয়াশা কিছু কাটিয়া গেল, ভাবিলাম সত্যই ত বড়লোকের একমাত্র সুন্দরী শিক্ষিতা কন্যা লাভ করিবার এমন কি যোগ্যতা আমার আছে ? এমন সময় বি-এ পরীক্ষার ফল বাহির হইল। পরীক্ষাতে অবশুই বঙ্গধাতুমাল কিংবা দার্জিলিং-বিবরণী-বিষয়ক কোন প্রশ্ন ছিল না, ফলে দেখা গেল মান্দ্রাজ খ্ৰীষ্টীয় হোষ্টেলের প্রকোষ্ঠে বসিয়া যে পরিশ্রম করিয়াছি তাহার মূল্য মূৰ্খ পরীক্ষকগণ বুঝেন নাই ; শিবস্বামী আচারিয়ার নাম অনাস" শ্রেণীর প্রথম কিংবা দ্বিতীয় কোন বিভাগেই নাই। সাধারণ ভাবে পাস হইলাম । মনে বড় লাগিল । জীবনের জটিল প্রশ্ন তখনও বহুবিধ মূৰ্ত্তি ধরিয়া প্রতারণা করিতে আসে নাই। সমস্ত মাত্রেরই যে সমাধান নাই এ জ্ঞানও তখন হয় নাই, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অকৃতকাৰ্য্যতাকে নিতান্ত অগৌরবের বলিয়া মনে হইল। বিশেষতঃ মনে তখন কেবল এই চিস্তাহ হইতেছিল যে এই পরীক্ষার মধ্য দিয়াই শীলাকে লাভ করিতে হইবে।” আচারিয়া একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া সম্মুখস্থ সীমাহীন অন্ধকারের দিকে চাহিল । স্তরে স্তরে তখন পৰ্ব্বতগাত্রে বিদ্যুৎ-বাতি জলিয়া উঠিয়াছে। কুয়াশা-মলিন নৈশান্ধকারে বনানী পৰ্ব্বত একাকার হইয়া লেপিয়া গিয়াছে। - ভিক্টোরিয়াউদ্যানের দ্বাররক্ষক তাড়া দিল যে এখন বাহির হইতে হইবে ; সে ফটক বন্ধ করিবে । গল্পটি বেশ জমিয়া উঠিয়াছিল ; শীত আরও বেশী। বৈকালে যে চেষ্টারফিলডে'র বোঝা অনর্থক বহিয়া বেড়াইতেছি বলিয়া মনে হইয়াছিল, তাহাই এখন আরাম প্রধান করিতে লাগিল। দরোয়ানকে কিছু বকশিশ দিয়া ১৩ মুক্তি »ግ আচারিয়াকে কহিলাম, “আচারিয়া, তোমার এই ভালবাসার পরিণাম কি হইল, শীঘ্ৰ বলিতে হইবে।” “পরিণাম অত্যন্ত শোচনীয় হইয়াছিল। একদিন দ্বিপ্রহরে রৌদ্রদগ্ধ আকাশে যখন ঈষৎ মেঘসঞ্চার হইয়াছে, উত্তপ্ত বালুক-প্রাস্তর হইতে ধরণীর দীর্ঘনিশ্বাস উঠতেছে, এমন সময়ে শীলা আমার ঘরে প্রবেশ করিল। দাদার সারগর্ভ উপদেশ শ্রবণের পর হইতে শীলার সহিত আর আলাপ হয় নাই। শীল আসিয়া বলিল, “চল বেড়াইতে যাই।” দিবা দ্বিপ্রহরে কোশী-প্রান্তরের সেই বালুকাবদ্ধ শুষ্ক উত্তাপ যে-কোন প্রেমিকের প্রেমরস মুহূৰ্ত্তে বাষ্পীভূত করিয়া দিতে পারে। আমার মন ভাল ছিল না ; বলিলাম, ‘বৃষ্টি আসিতে পারে। বিশেষত: জান ত শীল, আমাদের অভিভাবক আমাদিগকে বেশী মিশিতে নিষেধ করিয়াছেন।" সে বলিল, “ত জানি, সে জন্যই তোমার কাছে আসিয়াছি, চল বেশী দূর যাইব না, কালী কোশী পৰ্যন্ত। মনে আশা ও আশঙ্কার আলোড়ন উঠিল। গল্পে উপন্যাসে প্রেমোপাখ্যানের যে নাটকীয় পরিণতির কথা পড়িয়াছি আমার জীবনে কি তাহাই ঘটিবে। সেদিনের আমার সেই যুবক মনে কি কি ভাব উঠিয়াছিল আজ তাহ বলিতে গিয়া শুধু হয়ত বিশ্লেষণ করিব। মোটের উপর ধরিয়া লইতে পার পঞ্চদশী বাঙালী তরুণী একবিংশবর্ষীয় মান্দ্রাজী যুবকের নাসারন্থে, একটি রজ্জ্ব প্রবেশ করাইয়। হিড় হিড় করিয়া টানিয়া লইয়া যাইতেছিল। আমরা কালী কোশীর যে জায়গাটাতে উপস্থিত হইলাম, সেখানে নদী দুই দিকে বিভক্ত হইয়া মধ্যস্থলে একটি দ্বীপহুমি সৃষ্টি করিয়াছে। স্মৃষ্টি করিয়াছে হয়ত বলা চলে না ; কিছু বৃক্ষসমাবেশের নিমিত্তই হউক কিংবা মৃত্তিকার স্বাভাবিক কাঠন্যের জন্যই হউক, নদী দুই দিকের বালুভূমিকে নির্দয় ভাবে খুড়িয়া আপনার পথ তৈয়ার করিয়াছে, কিন্তু মধ্যভূমিকে উৎসাদিত করিতে পারে নাই। নদীতল হইতে পাড় একবারে খাড়া হইয়া উঠিয়াছে। সেই দারুশ গ্ৰীমেও অতি ক্ষীণ স্বচ্ছ জলধারার যথেষ্ট স্রোতবেগ রহিয়াছে। আমরা জল পার হইয়া নদীর মধ্যস্থিত উচ্চভূমিতে উপস্থিত হইলাম। জায়গাটা বাবলাগাছে একেবারে গাছে ফুল ফুটিয়াছে। ক্ষুদ্র হলদে ফুলের