পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سsty প্রবাসী ১৩৪২ মৌমাছিরা দিগ্বিদিকে উড়িয় বেড়াইতেছে ; কেমন একটা মৃদ্ধ মাদক গন্ধে স্থানটি ভরিয়া গিয়াছে । আমরা বসিলাম । শীলা হঠাৎ অত্যন্ত আবেগভরে কহিল, ‘আচারিয়া, আজই তোমাকে এস্থান পরিত্যাগ করিয়৷ যাইতে হইবে । বল যাইবে—’ বুঝিতে পারিলাম না। হঠাৎ নিজেকে অপমানিত মনে করিলাম। বলিলাম, কেন শীল, আমি এমন কি গহিত আচরণ করিয়াছি যে আমাকে এ জায়গা ছাড়িয় যাইতে হইবে। আমি তোমাকে ভালবাসি, একথা তুমি জান ; তোমার বাবা মা জানেন ; আমার দাদা জানেন । কিন্তু আমার জীবনে যাহ-কিছু শ্রেষ্ঠ তাহার নামে শপথ করিয়া বলিতে পারি সে ভালবাসার মধ্যে কিছুমাত্র খাদ নাই। আমার ধমনীতে অবিমিশ্র মান্দ্রাজ ব্রাহ্মণের রক্ত প্রবাহিত ; আমার কথা বিশ্বাস কর তোমার সম্বন্ধে কোনদিন কোন নীচ চিস্ত করি নাই। আরও কত কি বলিতে যাইতেছিলাম কিন্তু দেখিলাম শীলার চোখ হইতে ঝর ঝর করিয়া জল পড়িতেছে। শীলা বলিল, ‘আচারিয়া, তুমি পুরুষ, নারীথলয়ের সব কথা বুঝিবে না। এই বলিয়া সে আমার হাত ধরিল এবং বলিল, “আমি বলিতেছি তোমাকে ভালবাসি ; তোমার জন্য অপেক্ষা করিব, কিন্তু প্রতিজ্ঞা কর আজই এখান হহঁতে চলিয়। যাইবে । সেই দিন অধারিত আকাশের নিম্নে চিরচঞ্চল অস্থিরমতি কোশীর বুকে বাঙালী তরুণী মন্দ্রিাজী যুবকের নিকট যে প্রতিজ্ঞা করিল, সৰ্ব্বদশী দিগদেবত, উচ্চ কাশবন আর ঘনসন্নিবিষ্ট বাবুল ছাড়া তাহার আর কোন সাক্ষী ছিল না ; কিন্তু অত্যপ্ত দুঃখের সহিত বলিতেছি শীলা তাহার সেই প্রতিজ্ঞ। রক্ষা করে নাই ।” “কি করিয়া জানিলে ?” “আমি সেদিনই চলিয়া আসিলাম । তার পর আমার যৌবনের সেই মহিমান্বিত দিনগুলি প্রতিযোগী-পরীক্ষার গড় তৈরি করিতে করিতে নষ্ট হইতে লাগিল। তুমি হয়ত জান না সে কি একঘেয়েমি । কত অনাবশুক তত্ত্ব, কত অসম্ভব কাহিনী, কত পল্লবগ্রাহিতা দরকার হয় এই সব পরীক্ষাতে। একে একে বহু পরীক্ষা দিলাম, কিন্তু কৃতকাৰ্য্য হইতে পারিলাম না। প্রতিবারেই অল্পের জন্য আমার জীবনের সাফল্য হাতের কাছে আসিয়া ফস্কাইয়। যাইতে লাগিল। পরীক্ষাগৃহে প্রশ্নের উত্তর লিখিতাম আর মনে মনে ভবিষ্য জীবনের স্বপ্ন দেখিতাম। মনে হইত এই পরীক্ষার ফলের উপর আমার জীবন-মরণ নির্ভর করিতেছে। এত বড় পণ লইয়া কেহ কোন দিন কোন পরীক্ষা দেয় নাই । “তার পর কি হইল ?” “এক দিন খবর পাইলাম মহা ধুমধামের সহিত এক ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের সহিত শীলার বিবাহ হইয়া গিয়াচ্ছে । একবার ইচ্ছা হক্টল তাহার সহিত দেখা করিয়া তাহার প্রতিজ্ঞা হইতে তাহাকে মুক্ত করিয়া দিই। কিন্তু পরীক্ষার অকৃতকাৰ্য্যত আমাকে এতই লজ্জিত করিয়াছিল যে মনে করিলাম আত্মহত্যা করিব। নিজ গৌরবে নারী লাভ করিতে ন পারিয়া আত্মবিসর্জন করা পুরুষের ধৰ্ম্ম বলিয় মনে হইল না, ভাবিলাম হায় রে নারীর মন! কেনষ্ট বা তুমি আমাকে এমন প্রলুদ্ধ করিলে, কেনই বা তুমি প্রতিজ্ঞ করিলে ? ভালবাসার চেয়ে ডেপুটিগিরির মূল্য বেশী সে সত্য তথন জানিতাম না, তবু শীলার এই আচরণকে অসতীতুল্য বলিয়া মনে হইল। অপরিচিত অ-দৃষ্ট সেই ডেপুটির মুগুপাত করিয়া ধৈর্য্য সহকারে আইন অধ্যয়ন করিতে লাগিলাম।” উঠিয়া পড়িলাম এবং দু-জনে ধীর পদক্ষেপে স্যানাটরিয়মের দিকে অগ্রসর হইলাম । আচারিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার কিছু বলিবার আছে ?” “কিছু না, কোন বিড়াল মাছ ভালবাসে না, কোন স্ত্রীলোকের কাছে স্বর্ণের আদর নাই ? সমস্ত রাস্তাট। আর কোন কথা হইল ন! আচারিয়ার মত বাকৃপটু লোকও যেন সহসা স্তন্ধ হইয়া গেল। তাহার যাহা-কিছু বলিবার ছিল তাহ যেন নিঃশেষে বল হইয়া গিয়াছে। হিমালয়ের গাত্রবিসারী সেই গহন শীতল অন্ধকার সমস্ত বিদ্যুং-আলোক অগ্রাহ করিয়া আমাদের অন্তর-বাহির নিৰ্জ্জীব কঠিন করিয়া দিল । 臺 尊 寧 事 পরদিন মধ্যাহ্নভোজনের পর আচারিয়া যখন আমার কামরায় প্রবেশ করিল আমি তখন বাল্প-বিছানা গুছাইতেছি । সেদিন মনে আর কোন ভয় ছিল । জানিতাম এই