পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাৰ্ত্তিক তেজোদীপ্ত প্রখরবুদ্ধি যুবকের অন্তরস্থিত চিন্তাচাপ কল্যকার সন্ধ্যার সেই প্রেমকাহিনীর সেফটি-ভাল্ভ দিয়া সম্পূর্ণ রূপে নির্গত হইয় গিয়াছে ; এখন সে নিতান্তই বাস্পাগ্নিবিহীন সাধারণ মান্দ্রাজী ব্রাহ্মণ। সে জিজ্ঞাসা করিল, “এ কি ব্যাপার ? জিনিষপত্র গুছাইতেছ যে ?” "আজই চলিয়া যাইতেছি, ভাল লাগিতেছে না।" “তুমি না এখানে ছু-সপ্তাহ থাকিবে ?” “ইচ্ছা ছিল কিন্তু এক ভাল লাগিতেছে না।” সে বিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়া বলিল, “তাই বল। তখনই জানি যে স্ত্রীকে যখন সঙ্গে আন নাই থাকিতে পারিবে না। ভা বেশ, যাও।” প্রতিবাদ করিলাম না। যখন ষ্টেশনে যাইব দেখিলাম আচারিয়া ব্যস্তসমস্ত ভাবে ঘরে প্রবেশ করিল। “মনে কিছু করিও না, এই কয়েকটি জিনিষ তোমার স্ত্রীকে উপহার দিলাম” বলিয়া সে ইংলণ্ডে তৈয়ারী একটি হিমালয়ান ওয়ালনাট কাঠের ক্ষুদ্র বক্স, ডেনমার্কে প্রস্তুত দুই গাছি দার্জিলিং নেকূলেস্ এবং ইটালী হইতে আমদানী একখানি তিব্বতী শাড়ী বাহির করিল। তাহার পাগলামি দেখিয়া হাসি পাইল। বলিলাম, "এ কি কুকাণ্ড করিয়াছ ? তোমার কি মেলা টাকা ? দুদিনের পরিচিত বন্ধুর অপরিচিত স্ত্রীকে এত উপহার ?” “তোমার সহিত পরিচয় দু-দিনের বটে কিন্তু তৰু কি জান জীবনে চলিতে চলিতে এমন দু-এক জনের সহিত দেখা হয় বাদের দেখিলেই মনে হয় এ বহু দিনের পরিচিত। মনে কিছু করিও না।” জনিতাম তর্ক করা বৃথা, বলিলাম,“আচ্ছা আচারিয়া, এখন iণ্ড, ষ্টেশনে দেখা হইবে।” আচারিয়া চলিয়া গেল ; কোনরূপে উগত অশ্র সংবরণ করিয়া পত্র রচনাকরিতে বসিলাম। যথাসময়ে ষ্টেশনে উপস্থিত হইয়া দেখিলাম আচারিয়া আগেই সেখানে গিয়াছে। গাড়ীতে উঠিলাম। জানালার কছে ধাড়াইয়া আচারিয়া বলিল, “ভাই তোমাকে এমন বিষ্ণ পিাইতেছে কেন ? আমি কি কোন অজ্ঞাত কারণে তোমার নে যথা দিয়াছি ?” মুক্তি షాహి “ন, আচারিয়া তুমি হতভাগ্য সন্দেহ নাই কিন্তু মনে রাখিও নারীকে না-পাওয়ার বেদনার চেয়েও তাহাকে জোর করিয়া পাইবার ব্যথা অনেক বেশী।” এপ্রিন চীৎকার করিল। গাড়ী চলিতে লাগিল । আচারিয়া বলিল, “বন্ধু তোমার স্ত্রীর সহিত শুভমিলন इफेक ।” আমি তাড়াতাড়ি একখানি খাম তাহার হাতে দিয়া বলিলাম, “পড়িয়া দেখিও।” অল্পকাল মধ্যেই হিমালয়ের একটা প্রকাও কঠিন শীতল পাষাণ",প দার্জিলিং শহরকে দৃষ্টির অগোচর করিয়া ফেলিল। পাতল কুয়াশার অস্পষ্ট আস্তরণ আমার মনকে নিতান্ত নিরবলম্ব করিয়া দিল আচারিয়া তখন বোধ হয় আমার চিঠি পড়িতেছিল :– “ভাই শিবস্বামী, আমাকে ক্ষমা করিও। প্রথমে নিতান্ত নিরর্থক ভাবেই আত্মপরিচয় গোপন করিয়ছিলাম, কিন্তু তাহার পর আর ভাঙিয়া বলিবার সাহস ছিল না । তুমি নাম গোপন করিবে বলিয়াও শীলার যথার্থ নামই ব্যবহার করিয়াছিলে ; না করিলেও ক্ষতি ছিল না, সহজেই তাহাকে চিনিতে পারিডাম, আমি শীলাকে বিবাহ করিয়ছিলাম, তোমার সহিত পরিচয় হইবার পূৰ্ব্বে তাহার অদ্ভূত আচরণের কোন কারণ খুজিয়া পাইতাম না। কেনই বা সে তোমাকে ভালবাসিয়াছিল আর আমাকে বিবাহ করিয়াছিল জানি না, ( নারী-চরিত্র কেইবা কবে জানিয়াছে!) তুমি বলিয়াছিলে শীলা তাহার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে নাই। তাহার বিচারকর্তাও আমি নই, তবে এ-কথা বলিতে পারি যে আমি তাহার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলাম বটে কিন্তু মন বা দেহ গ্রহণ করিতে পারি নাই। এই সত্যে তোমার কিছু লাভ হইবে কিনা জানি না, তবে আমার পক্ষে জীবনে যে-ীকে পাই নাই মৃত্যুর পরে তাহার আলেখ্য পূজা করিবার উপায় রহিল না। সাত দিন পূৰ্ব্বে শীল ইহলোক ত্যাগ করিয়াছে, অতএব তোমার উপহার তাহার নিকট পৌছাইবার উপায় না থাকাতে ম্যানেজারের নিকট গচ্ছিত রহিল। ইতি—”