পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটি শ্ৰীমুশীল জানা বনগ্রামের বঁাধের সীমানা লহয় দুই সরিকের বিবাদ আজও থামে নাই। বহুদিন যাবৎ ঝগড়-বিবাদ, লাঠালাঠি, মামলা-মোকদ্দমা হইয়া আসিতেছে ; এখনও চলিতেছে, কবে যে ইহার শেষ মীমাংসা হইবে তাহ জানা নাই—-বংশানুক্রমিক চলিয়াছে । আদালতে মোকদ্দমা করিয়া যে হোক এক পক্ষ হারিয়াছে কিন্তু সে হার-হার নয় । পরদিনই হয়ত আবার এই বঁধের সীমানার মুখে কাপড় উড়াইয়া দুই পক্ষের দস্তুরমত লাঠালাঠি হইয়া গিয়াছে। তার পর ফৌজদারী রুজু । এমনি করিয়া পুরুষানুক্রমে দুই সরিকের রেশারেশি চলিয়৷ আসিতেছে। এই বাধের জন্য স্বরূপ-লাঠিয়াল গত হইয়াছে এবং আরও কত জন । হুগলী নদীর যাবোলিশ এম্‌ব্যাঙ্কমেন্ট বঁধটার পাশে পাশে খুড়িয়া গেলে কত মড়ার মাথা যে বাহির হইবে তার ঠিক নাই । সম্প্রতি নদীটা বাধের একাংশ গ্রাস করায় নরকঙ্কাল বাহির হইয়া শ্মশানক্ষেত্র স্বষ্টি করিয়াছে । রাজার কড়া আইনে মারামারি, কাটাকাটিটা এখন খামিয়াছে সত্য, কিন্তু কলহট থামে নাই। মৌখিক কলহের ফলে যদি কোন শারীরিক ক্ষতি হইতে পারিত তাহ হইলু দুই পক্ষই এতদিনে নিৰ্ব্বংশ হইয়া যাইত। কারণ নিয়মিত ভাবে প্রতিদিন কলহটা চলিতেছে। সম্প্রতি আবার একটা নূতন উপসর্গ জুটিয়াছে। যাতায়াতের রাস্তাটা চিরকালই এজমালি ছিল, কিন্তু সেট। আজকাল এক সরিকের হইয়। গিছে। সেটেলমেণ্ট আসিয়াছিল, ছোট তরফ অমুস্থ কে লইয়াও আমিনের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল। প্তি এক সময়ে নিতান্ত অলঙ্ক হওয়ায় ঘরে আসিয়া বাম করিয়া গুইয়া পড়িয়াছিল। সেই স্বযোগে বড় তরফের বুড়া মহেন্দ্র কুণ্ডু কিছু ঘুষ দিয়া দুই পক্ষের নাম কাটিয়া নিজের নামে করিয়া লইয়াছিল। ভূষণ জ্যোতিৰ উপস্থিত ছিল, বলিয়াছিল—মিছামিছি »0 আর কেন বাবাজী! বয়সটাও ত সোত্তরের কোঠায় পৌছল প্রায় । কদিনই বা বাঁচবে আর.ভোগ করবেই বা কে ?—ছেলে-পিলে ত নেই।-- —এসব তুমি বুঝবে না কাকা। বুড়া মহেন্দ্র অপ্রতিভ হইয়া হাসিয়াছিল। —ত না বুঝি বাবাজী, কিন্তু অত মারামারির শেষেও সেই ত হাত-চারেক জায়গার মামলা । মহেন্দ্র কুণ্ডু ক্রুদ্ধ কটাক্ষ করিয়াছিল। বলিয়াছিল—এক ছটাক মাটিও ত কোন দিন কেন নি, কিনলে মাটির মূল্য বুঝতে। এ রকম না করলে জমি-জায়গা হয় না। —কি জানি বাবাজী ? তবে পরকালটা আছে সেই ভয়ে ওর ভেতরে যাই নে। আর তোমাকেও তাই বলছি... —কি বলছ ? তার পর যে ছেলেটাকে রেখেছি তার জন্যেও ত এসব করা কৰ্ত্তব্য ? —কে, ফটিক ? সে ত তোমার আর নিজের ছেলে নয় ? পাপের ভাগটা নেবে কে ? ঠ্যাঙাড়ে রত্নাকরের উপাথ্যানটা মনে আছে ত ? —হু—হু, সব মনে আছে—সব মনে আছে। তুমি চুপ কর কাক । জমিদারী গিয়াছে, নবাবী আমলের আসবাবপত্র গিয়াছে, এক কথায় সমস্তই গিয়াছে, যায় নাই কেবল পুরানো ভদ্রাসনটুকু আর গণ্ডগোলের সেই বাঁধটা। জমিদারী ভড়ংটাও যায় নাই। ভদ্রাসনের সবটাই ক্রমশঃ ঝরিয়া খসিয়া পর পর পড়িয়া যাইতেছে—সংস্কারও সম্ভব নয়। লোকে বলিলে বলে, যাক পড়ে—এতগুলা ঘরে থাকৃবে কে ? ছোট তরফের যোগেশ পুরানো ভদ্রাসন ছাড়িয়া উঠিয়া গিয়াছে। যে-বাধ লইয়া গোলমাল তাহার দুই পাশের