পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০৬ প্রৰণসী SNరి8R অধিকাংশ জমি হাতছাড়া হইয়াছে—তবু বাঁধ লইয়া মোকদ্দমা থামে নাই । সেদিন বুড়া মহেন্দ্ৰ কুণ্ডু ঘরের কপাট বন্ধ করিয়া কাঠ চিরিতেছিল এমন সময় ছোট সরিকের বংশধর বলরাম বন্ধ কপাটে ধাক্কা দিয়া ডাকিল —দাদু-ওগো দাদামশাই । বৃদ্ধ কপাট খুলিয়া দিল। বলরাম সবিস্ময়ে বলিল – দাদা মশাই, কুডুল কি হবে! আবার কা'কে মারতে যাবে ? মারামারি ক'রো না দাদামশাই...বালক বুদ্ধের কোমর জড়াইয়া ধরিল । বুদ্ধ অপ্রতিভ হঠয়া বলিল - ন রে না –দেখছি নে, কাঠ চেরা হচ্ছে. বালক আশ্বস্ত হইল। তাহার ভয় করিবার যথেষ্ট কারণ ছিল। কতদিনই ত তাহার বাবার সহিত আর এই দাদা মশায়ের সহিত কলহু হইয়াছে, অবশেষে মারামারিও ঘটিয়াছে । ওপাশ হইতে তাহার বাবা বুড়া জ্যাঠাকে নিকাশ করিবার অভিপ্রায়ে লাঠিসোটা লইয়। বাহির হইয়া আসিত— এপাশ হইতে বৃদ্ধ দাদামশাই ভাইপোকে যমালয়ে পাঠাইবার অভিপ্রায়ে ঠিক এই কুঠারটা লইয়াই বাহির হইয়া আসিত । বলরাম সবিস্ময়ে বলিল - এই এত কাঠ তুমিই চিরেছ নাকি দাদামশাহ ? —তবে কি তোর বাবা চিরে দিয়ে গেল নাকি ? --কই বাব| ত কাঠ চিরে না ! —তোর বাপের পয়সা কত ?--মহেন্দ্র কুতু অপমানিত হইয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলিল । —কত হবে দাদামশাই ? বৃদ্ধ দাদামশায়ের নিকট হইতে গল্প শুনিয়া শুনিয়া বালকের ধারণ অদ্ভুত হইয়াছে। প্রায় পাচ পুরুষ পূৰ্ব্বে তাহদের যখন একান্নবৰ্ত্তী সংসার ছিল, তখন তাহারা নাকি দুই তিন জাল যুখের ধন পাইয়াছিল -- এইরূপ প্রবাদ । সেই টাকা লইয়াই নাকি তাহার এত বড় জমিদার। বালক এই সব শুনিয়া শুনিয়া অস্তরে এই ধারণ পোষণ করিয়াছে যে তাহার অন্তত একটা জাল তাহার পিতার কাছে নিশ্চয়ই আছে । দাদামশায়ের কাছেও যে কিছু নাই এমন নয়—সেই চোরা কুঠরিটার ভিতরে কিছু আছেই। বালক চুপ করিয়া বসিয়া মহেন্দ্র কুণ্ডুর কাঠচেরা দেখিতে লাগিল। বৃদ্ধ গলদঘৰ্ম্ম হইয় এক-একবার কুঠারটা ছুড়িয় ফেলিয়া দিয়া কপালের ঘাম মুছিতেছিল। বলরাম তাহ দেখিয়া বলিল—দাদামশাই, বাইরে যাও না কেন ? গায়ে বাতাস লাগত।-- —ষ্ট্যারে শালা শত্তর—গায়ে বুঝি রোদ লাগবে না ? —কিন্তু এদিকে পাক সানটা যে ফেটে গেল । —ত যাক. বলে ঘরকে ঘর পড়ে যাচ্ছে, মেরামত করতে পারছি নে তার আবার সান—! মহেন্দ্ৰ কুণ্ডু উঠিয়া পড়িয়া আবার কাঠ চিরিতে লাগিল । এই ঘরের ভিতরে কাঠ চিরিবার একটা কারণ আছে। বাহিরে সকলের সাম্নে প্রবলপ্রতাপান্বিত গজেন্দ্র কুণ্ডুর বংশধর মহী কুণ্ডু কাঠ চিরিবে—-এ হইতেই পারে না! বলরাম বলিল—অন্ধকারে তুমি দেখতে পাচ্ছ দাদামশাই ? পায়ের উপর কুডুল পড়ে যাবে যে ! —ন না, তুই সৰ্ব দেখি । বলে আমার যে চোখের জোর তোর বাপেরও তা নেই। বলিয়া বৃদ্ধ একটা কাঠ ঠাহর করিয়া কোপ বসাইল । --লোক ডেকে ত কাঠ চেরাতে পারতে দাদামশাই ? --–সে তোর বাপ পারে। কেন, আমার গায়ে কি জোর নেই ?--- —তোমার কষ্ট হচ্ছে ত দাদামশাই ? —ছাই হচ্ছে। একে আবার কষ্ট বলে নাকি ? তোর বাপের মত ত আর হিঞ্চেশাক খেয়ে জোর করি নি! আমাদের সময়ে দস্তুরমত ঘি-দুধ ছিল—আর মাছ ? ওই কুমীরমরির থালে কি মাছটাই না উঠত ! এখন একটা চাদামাছেরও মুখ দেখতে পাস্নে । তোরা ত এখন দুধ বিক্ৰী ক'রে পচা চিংড়ী খাস্। বলরাম বলিল—বাবার গায়েও খুব জোর দাদামশাই । এই সেদিন টেকিটা একাই তুলে বসালে—লোক ডাকৃতে আর হ'ল না। —ত নয় রে শালা—পয়সা নেই, তাই লোক ডাকৃতে পারে নি। কারে পড়লে সব করতে হয়। কই দিক দেখি তোর বাপ এই গাছের গুড়িটাকে নাড়িয়ে ? হু, তবে বলব জোর। এই আমি বুড়ো হয়েছি কিন্তু এখনও তোর বাপের কভি চেপে ভেঙে দিতে পারি—জানিস ? এই গায়ে