পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

公88 প্রবাসী SNఠితికా ভাল যাহা পাইয়াছি, তাহার রক্ষণ ও বিকাশসাধন ছাড়া নূতন কিছু ভালও আমাদিগকে করিতে হইবে—তাহা করিবার শক্তি বিধাতা আমাদিগকে দিয়াছেন। আমাদের পক্ষে যাহা বৰ্ত্তমান, ভবিষ্যৎ বংশাবলীর পক্ষে তাহাই হইবে অতীত। আমরা যদি আমাদের অতীতের কেবল ভালগুলিই রক্ষা ও বিকাশ করি এবং মন্দ কিছু নূতন না করিয়া নূতন ভালই করি, তাহা ‘হইলে ভবিষ্যতের স্বদেশের লোকের আমাদের নিকট হইতে ভাল পাইয়া ও মন্দ না পাইয়া উপকৃত হইবে। এহেন ভবিষ্যংস্কদেশের মূৰ্ত্তি কল্পনার চক্ষে দেখিয়া প্রীতি ও আনন্দ অনুভব করিতে পার সৌভাগ্যের বিষয় । নিরবচ্ছিন্ন ভাল কিছু রক্ষা করা কিংবা অবিমিশ্র ভাল নূতন কিছু করা মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য –হয়ত অসাধ্য। কিন্তু অধম যাহা তাহাকে বর্জন ও পরিহার করিবার চেষ্টা কাহারও সাধ্যাতীত নহে। ভারতের বাহিরে ভারতীয় সংস্কৃতি কেহ কেহ হয়ত এরূপ ভাবিতে পারেন, যে, ভারতীয়ের যখন প্রাচীন কালে বিদেশে ভারতীয় সংস্কৃতির বিস্তার করিয়াছিল এবং আমরা যখন তাহার গৰ্ব্ব করিয়া থাকি, তখন বৰ্ত্তমানে ইউরোপীয়েরা বিদেশজয় দ্বারা পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিদেশে বিস্তারের চেষ্টা করিলে তাহার নিন্দ করা আমাদের উচিত নয়। এই বিষয়টির একটু সংক্ষিপ্ত আলোচনা আবখ্যক । প্রাচীন ভারতীয় ধৰ্ম্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাব চীনে কোরিয়ায় জাপানে ফিলিপাইন্সে অনুভূত হইয়াছিল। তাহার স্পষ্ট চিহ্ন এখনও রহিয়াছে। এই সকল দেশ ভারতীয়েরা জয় করিয়া তাহদের অধিবাসীদিগকে অধীনতাপাশে বদ্ধ করিয়াছিল ইতিহাস এরূপ বলে না । এই সকল দেশে ভারতীয় সংস্কৃতির বিস্তারের সহিত হিংসা ও লোভের কোন সম্পর্ক নাই। অতএব ভারতীয় সংস্কৃতি বিস্তারের ইতিহাসের এই অংশটি হইতে আমরা অবিমিশ্র আনন্দ লাভ করিতে পারি। জাভা প্রভৃতি কয়েকটি ভূখণ্ড ভারতীয়বংশোদ্ভূত রাজারাজড়ার করায়ত্ত কিরূপে হইয়াছিল, তাহার বিস্তারিত সঠিক ইতিহাস কেহ উদ্ধার ও রচনা করিয়াছেন কি-না, অবগত নহি। যদি এরূপ ইতিহাস থাকে, ও তাহার মধ্যে ভারতীয়দের হিংসা ও লোভের প্রমাণ থাকে, তাহ অবশুই নিন্দনীয়। তাহ গৌরবের বিষয় নহে। কিন্তু তাহা হইলেও আধুনিক পাশ্চাত্য বিদেশজয় ও উপনিবেশস্থাপন নীতির সহিত প্রাচীন ভারতীয় রীতির পার্থক্য মনে রাখিতে হইবে । বৰ্ত্তমান সময়ে পাশ্চাত্য যে-জাতি ইউরোপের বাহিরে যে-দেশ জয় করে, তথাকার ধনসম্পদ বিজেতাদের স্বদেশেই প্রধানত: নীত, ব্যবহৃত ও সম্ভুক্ত হয়। ভারতীয় কোন কোন রাজা যদি জাভা প্রভৃতি জয় করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহারা রহিলেন পাটলিপুত্রে, অযোধ্যায় উজ্জয়িনীতে বা কাঞ্চীতে এবং জাভা প্রভৃতির ধনসম্পদ প্রধানতঃ ভারতবর্ষেই আসিতে লাগিল, এরূপ ঘটে নাই । ভারতীয় বিজেতার বিজিত দেশেই বসবাস করিলেন, বিবাহাদি দ্বারা সেখানকারই মানুষ হইয়া গেলেন, সেখানে একটি মিশ্র নূতন সভ্যজাতি গড়িয়া উঠিল। ইহা অগৌরবের বিষয় নহে। পাশ্চাত্য এবং অত্যাধুনিক জাপানী এক্সপ্লয়টেশ্বন-বর্জিত এই প্রাচীনভারতীয় জয়যাত্র আধুনিক এক্সপ্লয়টেশ্বন-প্রধান বিদেশজয়ের সহিত তুলনীয় নহে। ভারতীয়দের বিদেশে উপনিবেশস্থাপনের সহিত ইউরোপীয়দের বিদেশে উপনিবেশস্থাপনের আর একটি প্রভেদ লক্ষণীয়। আমেরিকায়, অষ্ট্রেলিয়ায়, আফ্রিকার নানা দেশে ইউরোপীয়েরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তথাকার আদিম বহু জাতির সম্পূর্ণ উচ্ছেদ বা প্রায় উচ্ছেদ সাধন করিয়াছে, এবং নিজের আলাদা একটি প্রভুজাতি হইয়া, কোন আদিম লোক অবশিষ্ট থাকিলে তাহাদিগকে দাসরূপে বা নিকুষ্ট শ্রেণীর শ্রমিকরূপে ব্যবহার করিতেছে। নিজেদের ইন্দ্রিয়পরায়ণতা হইতে উদ্ভূত মিশ্র লোকদিগকেও তাহারা নিকৃষ্ট মনে করিয়া থাকে ; অশ্বেতদের সহিত শ্বেতদের বৈধ সন্মানকর বিবাহ তাহাদের নিকট হইতে উৎসাহ পাওয়া দূরে থাক, অনেক স্থলে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ এবং সৰ্ব্বত্র শ্বেতদের চক্ষে লজ্জাকর । ভারতীয়দের জাভা প্রভৃতিতে উপনিবেশস্থাপনের সহিত এই প্রকার নানাবিধ নিন্দনীয় ব্যাপার জড়িত নহে। প্রাচীনভারতীয় . বিজেতা ও উপনিবেশস্থাপকদের একটি গৌরবের জিনিষ আছে, যাহা বিজেতা ও উপনিবেশ স্থাপক কোন আধুনিক ইউরোপীয় জাতির নাই। জাভা,