পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক বিবিধ প্রসঙ্গ—বিপৰ্য্যাসক প্রচেষ্টাসমূহ এখনও সক্রিয় $®ግ এই আইন পাস হইবার পূৰ্ব্বে আধুনিক সময়েও ভারতবর্ষের কোন প্রকার সত্য ও গভীর অখণ্ডত্ব ছিল কিনা—এবম্বিধ প্রশ্নসমূহের আলোচনা করিব না। বড়লাট অশোকের কথা তুলিয়াছেন বলিয়া প্রাচীন কালের কথা কিছু বলিতে হইবে। যদি মানিয়া লওয়া যায়, যে, ভারতবর্ষ এখন অথও সত্তা ঠঠল, তাহা হইলেও অশোকের সময়কার ও এখনকার অপগুত্বের মধ্যে প্রভেদ যাহা আছে তাহা নির্দেশ করিতে হুইবে । লর্ড উইলিংডনের বাক্যটির মধ্যে ইহা উন্থ রহিয়াছে, যে, যদিও ভারতবর্ষকে অখণ্ড একটি সাম্রাজ্যে পরিণত করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহার সে চেষ্টা সফল হয় নাই । আগেই বলিয়াছি এইরূপ ঐতিহাসিক প্রশ্নের আলোচনা করিব না। কিন্তু অন্য কথা কিছু বলিব । অশোক ভারতীয় ছিলেন। বর্তমান ভারত-সম্রাট এবং তাহার দেশের পালেমেণ্ট ও তল্লিযুক্ত ভারতসচিব ও গবর্ণরজেনার্যাল প্রভৃতি রাজপুরুষ ভারতীয় নহেন। অশোকের সময়ে ভারতবর্ষের সব অংশ অশোকের বা অন্ত কাহারও শসনাধীন থাকিলে তাহা ভারতীয় শাসনাধীনই ছিল এবং ভারতীয় কর্তৃক প্রণীত আইনই মানিতে বাধ্য ছিল। এখন যদি ভারতবর্ষ এক গবন্মেন্টের অধীন হইয়া অখণ্ডত্ব লাভ করিয়া থাকে, তাহার অর্থ এই যে সমগ্র ভারতবর্ষকেই এখন অভারতীয় একটি আইনের অধীন হইতে হইল। অশোকের সময়ে সমগ্র ভারতের, ভারতের অধিকাংশের, বা কোন অংশের অশোকের অনুশাসন মানিয়া চলা এবং অতঃপর সমগ্র ভারতবর্ষের ব্রিটিশ পালেমেণ্টে প্রণীত ১৯৩৫ সালের “ভারতশাসন আইন” মানিয়া চলার মধ্যে এই প্রভেদটি লর্ড উইলিংডন মনে না রাখিতে পারেন ; কিন্তু আমরা ভুলিয়া পকিতে পারি না । 4 ভারতবর্ষেরই অংশ ছিল, তাহার প্রমাণ নেপালে অবস্থিত লুস্বিনীর ও কপিলবস্তুর অশোকস্তম্ভ । স্বতরাং সমগ্র ভারত এখনও একরাষ্ট্রভুক্ত হয় নাই। অবশু, ভারতবর্ষের অন্য সব ( ও অধিক ) অংশ যে ভাবে ও যে অর্থে একত্ব পাইয়াছে আমরা সে-ভাবে নেপালের আমাদের সহিত যুক্ত হওয়া চাই না। হয়ত দূর কোন ভবিষ্যতে স্বরাট নেপাল ভারতের অন্য সকল স্বরাট অংশের সহিত একরাষ্ট্রভূক্ত হইবে । তৃতীয় স্মৰ্ত্তব্য কথা এই, যে, অশোকের সময়ে, যখন খ্ৰীষ্টীয় ধৰ্ম্মের ও তৎপরবর্তী মোহম্মদীয় ধৰ্ম্মের আবির্ভাব হয় নাই, তখন, ভারতীয় মহাধর্মের এক শাখা বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম যেমন ভারতের নানা অংশে তেমনি বর্তমানে আফগানিস্থান নামে পরিচিত দেশেও প্রচলিত ছিল । বস্তুতঃ তখন ঐ দেশ–অন্ততঃ তাহার ভারতসংলগ্ন এক অংশ—ভারতবর্ষেরই একটি প্রদেশ ছিল। ( উহা আবার ভারতবর্ষের সামিল হউক, এরূপ কোন ইচ্ছা হইতে ইহা লিখিতেছি না। ) সুতরাং অশোকের সময়কার ভারতীয় সাম্রাজ্যের ও বর্তমান ভারতীয় ব্রিটিশ-সাম্রাজ্যের সীমা এক নহে । চতুর্থ স্মৰ্ত্তব্য কথা এই, ধে, মানুষ হিসাবে অশোকের সমান সম্রাট আর কেহ হইয়াছেন কি-না সন্দেহ। তিনি বড় যোদ্ধা ও বিজেতা ছিলেন। কিন্তু হৃদয়ের পরিবর্তন হওয়ায় অহিংসা সাম্য ও মৈত্রীর উপদেশ সাম্রাজ্যের সর্বত্র প্রচারিত করেন। র্তাহার অহিংসা ছিল শক্তিমানের অহিংসা, দুৰ্ব্বলের অহিংসা নহে। এখন শক্ত অ-শক্ত সকলেই হিংসার ও হিংসা হইতে আত্মরক্ষার উপায় লইয়া ব্যস্ত । “বিপর্য্যাসক প্রচেষ্টাসমূহ এখনও সক্রিয়” বড়লাটের বক্তৃতার শেষ অংশে তিনি ফৌজদারী আইন সংশোধক বিলের পক্ষে ওকালতী করিয়া বলেন :– “Dangerous, subversive movements are still active in the country. The communal unrest, as I have already said, is unfortunately a more serious danger than for many years past.” তাৎপূর্ঘ্য । “দেশে বিপজ্জনক, বিপৰ্য্যাসক প্রচেষ্টাসমূহ এখনও সক্রিয়। আমি পুর্বেই বলিয়াছি, দুর্ভাগ্যবশতঃ সাম্প্রদায়িক অশাস্তি গত অনেক বৎসরের চেয়ে এখন গুরুতর বিপজ্জনক ।” অতএব, তিনি এবং প্রাদেশিক গবয়েণ্টসমূহ এই দ্বিতীয় স্মৰ্ত্তব্য কথা এই, যে, অশোকের সময়ে নেপাল ভারতবর্ষের অন্তর্গত বিবেচিত হইত এবং বস্তুত ভারতপর্মেরই অংশ ছিল—এখনও উহা ব্রিটিশ গবন্মেন্টের অধীন ন হইলেও ভারতবর্ষেরই একটি দেশ। সেখানে ভারতীয় ভাষা, ভারতীয় ধৰ্ম্ম, ভারতীয় আচার-ব্যবহার ও ভারতীয় পরিচ্ছদ প্রচলিত। নেপাল যে অশোকের সময়ে